কালেমার ক্যালিওগ্রাফি-সংবলিত কালো পতাকা শ্রেণিকক্ষে টাঙানোয় শিক্ষার্থীদের ‘জঙ্গি’ বলার অভিযোগ উঠেছে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী শাখার একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে ওই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ‘পাকিস্তানে গিয়ে এসব (কালেমার পতাকা টাঙাতে)’ করতে বলেছেন বলেও অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।
Advertisement
এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের পক্ষে গত ১২ নভেম্বর অষ্টম শ্রেণির ইস্তেকার আহমেদ তাওহীদ নামে একজন ছাত্র অধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। সঙ্গে সব শিক্ষার্থীর সইও জমা দিয়েছেন। তাতে শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত হানা এবং কটাক্ষ করার অভিযোগ তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।
অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ‘জঙ্গি’ বলার অভিযোগ ওঠা শিক্ষক হলেন—বাবু বিমল চন্দ্র রায়। তিনি আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বনশ্রী ক্যাম্পাসের দিবা শাখার বাংলা ভার্সনের চারু ও কারুকলার সহকারী শিক্ষক।
লিখিত অভিযোগে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, ‘আমরা আপনার বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ‘ঞ’ শাখার শিক্ষার্থীবৃন্দ। গত ৭ নভেম্বর আমরা আমাদের শ্রেণিকক্ষে কালেমার ক্যালিওগ্রাফি করা একটি কালো পতাকা লাগিয়েছিলাম। সব শিক্ষক তা সমর্থন করলেও বিমল চন্দ্র রায় স্যার আমাদের জঙ্গি বলে সম্বোধন করেন।’
Advertisement
অভিযোগে আরও বলা হয়, শুধু তাই নয়, তিনি আমাদের বলেন, ‘এখনই জঙ্গিগিরি শুরু হয়ে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পাকিস্তানে গিয়ে এসব কর।’ তিনি আমাদের বলেন, এটা নাকি জঙ্গি সংগঠন আইএসআইএস-এর পতাকা। আমরা স্যারকে বলেছিলাম, স্যার এটা আইএসআইএস-এর পতাকা নয়। আর যদি তা হয়ে থাকে, আমরা পতাকা খুলে ফেলবো এবং ক্ষমাও চাইবো। কিন্তু তিনি আমাদের একাধিকবার জঙ্গি সম্বোধন করেন।
অধ্যক্ষের কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগের শেষে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, ‘আমাদের ইসলাম ধর্মে আঘাতের বিচার সুষ্ঠু উপায়ে দিয়ে বাধিত করবেন।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে সহকারী শিক্ষক বিমল চন্দ্র রায় জাগো নিউজকে বলেন, ‘ওইদিন ওদের ক্লাসে আমার একটা পরীক্ষা ছিল। ক্লাসে যেতেই ওরা দেখালো যে, স্যার এটা করেছি আমরা। কেমন হয়েছে? আমি অমুসলিম মানুষ। ওখানে কী লেখা তা তো পড়তে পারিনি। শুধু বলে ফেলেছিলাম—এটা তো আইএস-এর পতাকার মতো মনে হচ্ছে। নিচে কালো কাগজ, ওপরে সাদা হরফে আরবি লেখা। এটাই হয়ে গেছে আমার দোষ।’
তিনি বলেন, ‘দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের একটা পাঁয়তারা সব জায়গায় চলছে। এখানেও শিক্ষকদের একটা পক্ষ ষড়যন্ত্র করে ঘটনার ৫ দিন পর আমার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে। ঘটনার পর আমি শিক্ষার্থীদের কাছে মাফও চেয়েছি। বলেছি, আমার কোনো ভুল কথায় তোমরা কষ্ট পেলে আমি ক্ষমা চাইছি। তারপরও অভিযোগ দিয়েছে তারা।’
Advertisement
জানতে চাইলে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মদ এমাম হোসাইন বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) বিকেল পৌনে ৫টার দিকে জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ১২ তারিখে ওখানকার (বনশ্রী শাখা) শিক্ষকদের কাছে জমা দিলেও আমি অভিযোগটা হাতে পেয়েছে ঘণ্টাখানেক আগে। ওই ফাইলটা ধরবো এখন। দেখি কি আছে অভিযোগে। তারপর ব্যবস্থা নেবো।’
এএএইচ/এমএএইচ/জেআইএম