দেশজুড়ে

শুকিয়ে যাচ্ছে কাপ্তাই হ্রদের পানি

খরায় দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে কাপ্তাই হ্রদের পানি। এতে করে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে অস্বাভাবিক হারে। ফলে রাঙ্গামাটি জেলা সদরের সঙ্গে আট উপজেলা সদরে নৌ-যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ওই সব উপজেলায় নদীপথে তৈরি হয়েছে যাতায়াত ও পরিবহন সংকট। দেখা দিয়েছে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন সংকট। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।জানা গেছে, পানির স্তর কমে যাওয়ায় প্রায় ৭০০ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলরাশি কাপ্তাই হ্রদ জুড়ে জেগে উঠেছে অসংখ্য ডুবোচর ও বিস্তীর্ণ নিচুভূমি। এতে জেলা সদরের সঙ্গে নদীপথে আট উপজেলা নানিয়ারচর, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি, বরকল, লংগদু, বাঘাইছড়ি, কাপ্তাই ও সদর উপজেলায় নৌ-যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এর ফলে ওই সব উপজেলায় যাতায়াতে চরম দুর্ভোগসহ পরিবহন সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সূত্র জানায়, কাপ্তাই হ্রদে পানি অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়ায় পরিবহন সংকটের পাশাপাশি দেখা দিয়েছে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন। প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে এ সময়ে প্রচণ্ড খরায় কাপ্তাই হ্রদের পানি শুকিয়ে যেতে থাকে। ফলে হ্রদ দিয়ে নৌপথে আট উপজেলায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এবং কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন ব্যাহত হয়। পাশাপাশি ব্যাহত হয় হ্রদে মৎস্য উৎপাদন। এছাড়া শহর এলাকায় ব্যাহত হচ্ছে পানি সরবরাহ। কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক আবদুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদে রুলকার্ভ অনুযায়ী পানি থাকার কথা ৮১ দশমিক ২৪ এমএসএল (মীন সী লেভেল)। সেখানে হ্রদে পানি রয়েছে ৭২ দশমিক ৭৮ এমএসএলের নিচে। অর্থ্যাৎ প্রায় ৯ ফুট পানি কম রয়েছে। ৬৬ এমএসএল-এ নেমে গেলে বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে যাবে। তখন কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সবকটি ইউনিটে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। তিনি আরো জানান, হ্রদে পানি সংকটের কারণে বর্তমানে রেশনিং পদ্ধতিতে পাঁচটির মধ্যে তিনটি ইউনিট চালু রাখা হয়েছে। ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে মঙ্গলবার তিনটি ইউনিটে উৎপাদন হয়েছে ১০২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কেন্দ্রের উৎপাদন সংকটে বিদ্যুৎ ঘাটতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত অবস্থার কোনো উন্নতির সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রটির ব্যবস্থাপক। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাপ্তাই হ্রদে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যে বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি, লংগদু, বরকল, নানিয়ারচর ও বিলাইছড়ি উপজেলা সদর লঞ্চঘাট থেকে ১৫/৩০ কিলোমিটার দূরত্বে নিচে সরে এসেছে। ফলে ওই সব উপজেলায় গন্তব্য স্থলে পৌঁছতে না পারায় যানবাহনগুলো মাঝ ও অর্ধেক পথে ভিড়ে জমছে।  সূত্র জানায়, ১৯৬০ সালে সৃষ্ট কাপ্তাই হ্রদ গত ৫৬ বছরেও খনন না করায় বছরের পর বছর ধরে নামা পাহাড়ি ঢলে পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে হ্রদের তলদেশ। ফলে প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমে খরায় হ্রদের পানি শুকিয়ে গেলে হ্রদ ঘিরে তৈরি হয় মারাত্মক সংকট। হ্রদের গতিপ্রবাহ সচল ও নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং জরুরি। এ ব্যাপারে প্রস্তাব দেয়া হলেও আজও নির্বিকার সরকার। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন জানান, চলতি বছর জানুয়ারি ও মার্চে অনুষ্ঠিত কাপ্তাই হ্রদ পরিচালনা সংক্রান্ত সভায় হ্রদের ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রস্তাবনাটি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।  অন্যদিকে আরেক সূত্রে জানা যায়, কাপ্তাই হ্রদে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় রাঙ্গামাটি শহরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা এখন হুমকির মুখে। প্রতিদিন যে হারে হ্রদে পানি কমে যাচ্ছে- তাতে হ্রদ থেকে পানি উত্তোলন করে সরবরাহে কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে বর্তমানে শহরবাসীর দৈনন্দিন পানির চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।সুশীল প্রসাদ চাকমা/এআরএ/এবিএস

Advertisement