যশোরের শার্শায় রামরঙ্গন কমলা চাষ করে স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে পানবুড়িয়া গ্রামের কৃষক অহিদুজ্জামানের। জেলার মাটিতে সুস্বাদু এ কমলা তিনিই প্রথম চাষ করেন বলে দাবি তার। ফলে এ কমলা চাষের অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। শার্শার মাটিতে উৎপাদিত রামরঙ্গন কমলা চীনসহ অন্য যে কোনো দেশ থেকে আমদানি করা রামরঙ্গনের চেয়ে মিষ্টি ও সুস্বাদু। বিভিন্ন জাতের আম, কুল, আঙুর, কমলা, ড্রাগন, স্ট্রবেরি, মাল্টা, লিচু চাষের পর এবার রামরঙ্গন কমলা চাষে সফল হন অহিদুজ্জামান। নার্সারি ব্যবসার পাশাপাশি শখের বশে রামরঙ্গন কমলা চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
Advertisement
বাগান ঘুরে দেখা যায়, সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলছে নজরকাড়া ছোট ছোট হলুদ রঙের কমলা। এরই মধ্যে অনেক ফলে পাকা রং ধরেছে। ফলের নাম ‘রামরঙ্গন’। এটি কমলার একটি ভ্যারাইটি জাত। এ জাতের কমলা চাষে সুবিধা হচ্ছে পরিপক্ব হওয়ার পরও গাছ থেকে ঝরে পড়ে না। পাকার পরও ফলটি এক মাস গাছে রাখা যায়। ভারত ও চীন দেশে ব্যাপক চাষ হয় ফলটির। তবে শার্শা উপজেলার পানবুড়িয়া গ্রামের অহিদুজ্জামানের বাগানে ফলটি চাষ হয়েছে। ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। রামরঙ্গন কমলার চাষ দেখতে আশেপাশের লোকসহ দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন অনেকেই। কেউ আবার তুলছেন ছবি।
রামরঙ্গন চাষি অহিদুজ্জামান জাগো নিউজকে জানান, ২০২২ সালে তিনি টেলিভিশনে একটি প্রতিবেদন দেখেন। দেশের মাটিতে বিদেশি ফলের চাষ হচ্ছে। তাই ফেব্রুয়ারি মাসে ২ বিঘা জমি ১০ বছর মেয়াদে লিজ নিয়ে ১৯৬টি রামরঙ্গন চায়না কমলার চারা রোপণ করেন। সে সময় তিনি জানতেনও না, এ গাছে কেমন ফল হবে। প্রথম বছর কিছু ফল আসে। সে ফল খুব সুস্বাদু হওয়ায় তাতে কলম বাঁধেন। পরে দ্বিতীয় বছর গাছে ফল ভরে যায়।
তিনি জানান, প্রথম বছর তার ফল বিক্রি হয় ১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। এ বছর ৮-১০ লাখ টাকা বিক্রি হবে। ফলে আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। ২ বিঘা জমিতে চাষ করতে প্রথম বছর ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়। বছরের যে কোনো সময় চারা রোপণ করা যায়। শুষ্ক মৌসুম হলে সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। সাধারণত নভেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে ফল হারভেস্ট করতে হয়। সামান্য কিছু পরিচর্যা করলেই চাষে সাফল্য আসে। পোকামাকড়ের আক্রমণও কম। পূর্ণবয়স্ক গাছ থেকে এক মৌসুমে দেড় থেকে দুই মণ কমলা পাওয়া সম্ভব। আগামী মৌসুমে প্রতিটি গাছে দুই মণ কমলা পাওয়ার আশা তার। প্রায় প্রতিদিন দর্শনার্থীদের ভিড়ে মুখরিত থাকে বাগান।
Advertisement
নাভারন-সাতক্ষীরা মহাসড়কের কুচেমোড়া বাসস্ট্যান্ডের পাশে জিসান নার্সারির মালিক অহিদুজ্জামান বলেন, ‘আগে আম, পেয়ারা, মাল্টা, কুল চাষ করে সাফল্য পেয়েছি। তারপর লিজ নেওয়া জমিটি রামরঙ্গন কমলা চাষের উপযোগী করে প্রস্তুত করি। বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে দেশের বাইরে না গিয়ে তরুণ, বেকার এবং শিক্ষিত যুবকদের রামরঙ্গন কমলার বাগান করার পরামর্শ দিচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘রামরঙ্গন কমলার চারাগুলো মূলত দুই বছরের মধ্যে ফলন দেয়। যা ২০-২৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। দুই বিঘা জমিতে শুরু হওয়া এই বাগান এখন চার বিঘা জায়গায় রূপ নিয়েছে। নার্সারি ব্যবসার মাধ্যমে রামরঙ্গন কমলার চারা তৈরি করে বিক্রি করছি। প্রতিটি চারা বিক্রি করছি ৬০ টাকা দরে। এখান থেকে চারা সংগ্রহ করে অনেকেই বাগান তৈরির পরিকল্পনা করছেন।’
ঝিকরগাছার ফল ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ বলেন, ‘দেশে চায়না জাতের রামরঙ্গন কমলার ব্যাপক চাহিদা আছে। এ কমলা বিদেশ থেকে আমদানি করতে প্রায় ফলের দামের সমান ভ্যাট ও খরচ হয়ে যায়। দেশি ফলগুলো একশ টাকা কেজি দরেও ভালোভাবে বিক্রি করতে পারি। তাতে ভালো লাভও হয়।’
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা বলেন, ‘শার্শা উপজেলার আবহাওয়া ও মাটি বিভিন্ন ফল চাষের জন্য উপযোগী। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি জাতের ফল চাষের জন্য এ মাটি উপযোগী। বেলে-দোআঁশ মাটিতে জুন-জুলাই মাসে চারা লাগালে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে ফল পাওয়া যাবে। তবে ব্যাগিং চারা যে কোনো সময় সেচ দিয়ে লাগানো সম্ভব।’
Advertisement
এসইউ/এএসএম