তরুণ নাট্য নির্মাতা মাবরুর রশিদ বান্নাহ। নাটক নির্মাণের মুন্সিয়ানা দেখিয়ে এরই মধ্যে এসেছেন আলোচনায়। তার নির্মিত নাটকগুলোও জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ২০১১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসে এনটিভিতে প্রচারিত হয়েছিল বান্নার রচনা ও পরিচালনায় প্রথম নাটক ‘ফ্ল্যাশব্যাক’। প্রথম নাটকেই তিনি বাজিমাত করেন। বর্তমানে বিশেষ করে তরুণ দর্শকদের কাছে বান্নাহর নাটক মানেই অন্যরকম ভালো লাগা। সম্প্রতি নির্মাণ করছেন ‘ব্যাকবেঞ্চারস’ নামে একটি নতুন ধারাবাহিক। রাজধানীর কাওলাতে চলছে এর শুটিং। সেখানেই নিজের নির্মাণ ভাবনা নিয়ে জাগো নিউজের মুখোমুখি হলেন বান্নাহ- জাগো নিউজ : ঈদ উপলক্ষে তো ব্যস্ততা শুরু হয়ে গেছে। আপনার কী খবর?বান্নাহ : আমি ভাই নতুন ধারাবাহিক নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেছি। নাম ‘ব্যাকবেঞ্চারস’। এটি নির্মিত হচ্ছে এসএ টিভির জন্য। চলতি মাস থেকেই প্রচারে আসবে। তাই তাড়াহুরো করছি কিছু পর্বের শুটিং শেষ করতে। তারপর ঈদের কাজে হাত দেব। তবে আমি এরমধ্যে একটি ভিডিও ফিকশন ‘হান্ড্রেড আউট অব হান্ড্রেড’র কাজ শেষ করেছি। এখানে অভিনয় করেছেন নিশো-অপর্ণা। তাছাড়া আগামী ঈদে আরো কয়েকটি নাটক প্রচারিত হবে। চ্যানেল কতৃপক্ষ এবং প্রযোজকদের সঙ্গে পাকা কথা সেরে ফেলেছি। অল্প কিছু দিনের মধ্যে কাজ শুরু করবো। আশা করি দর্শকরা ভালো কিছু দেখতে পাবেন।জাগো নিউজ : আপনার ধারাবাহিকগুলোতে তরুণ আর তারুণ্যই প্রাধান্য পায়। ‘ব্যাকবেঞ্চারস’র গল্পটি কেমন?বান্নাহ : ‘ব্যাকবেঞ্চারস’ও তরুণদের গল্প। কয়েকজন তরুণ তরুণীদের কাহিনিই দেখানো হবে। যারা লেখাপড়ায় অমনোযোগী, ক্লাসে ফাঁকি দেয় এবং ক্লাসের সময় পিছনের সারিতে বসে দুষ্টুমি করে তাদেরকে মূলত ‘ব্যাকবেঞ্চারস’ বলা হয়। আর আমার নাটকের গল্পটা এটা নিয়েই। গল্পে নানা রকম মজার মজার কাহিনি দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করা হবে। এখানে প্রেম থাকবে, বিরহ থাকবে এবং বর্তমান তরুণ প্রজন্মের নানাদিক তুলে ধরা হবে। তবে গল্পে প্রত্যেকের চরিত্র থেকে একটি করে পজেটিভ মেসেজ পাবেন দর্শকরা। বলে রাখি, নাটকটি রচনা করেছেন ইফতেখার আহমেদ ওশিন। ধ্বনি চিত্রের ব্যানারে নির্মিত হচ্ছে এটি। জাগো নিউজ : তবে আগের নাটকগুলো থেকে দর্শক ‘ব্যাকবেঞ্চারস’-এ কী ভিন্নতা পাবেন?বান্নাহ : অনেক ভিন্নতা পাবেন। চিত্রনাট্য-মেকিং সবক্ষেত্রে ভিন্নতা পাওয়া যাবে। চরিত্রগুলোও আলাদা। এটি ‘নাইন এন্ড হাফ’ প্রচারের পর এত সাড়া পেয়েছি যে ওই উৎসাহ থেকেই নির্মাণের জন্য অনুপ্রাণিত হয়েছি। আর এখন আমার নাটকের জন্য আলাদা দর্শক তৈরি হয়েছে বলে আমি মনে করি। সবমিলিয়েই এই কাজটি আমি আমার দায়িত্ববোধের স্থান থেকে করতে যাচ্ছি। এখানে আগেরবারের চেয়ে আরো ভালো কিছু দিতে চেষ্টা করবো আমি। জাগো নিউজ : সবসময়ই তরুণদের নিয়ে কাজ করেন। এরা তো খুব বেশি অভিজ্ঞ নন। তাদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়না?বান্নাহ : হ্যাঁ এটা ভালো বলেছেন। মাঝেমাঝে অনেক ঝামেলাতেই পড়তে হয়। যেমন- শর্ট ঠিকমত দিতে পারেনা, এক্সপ্রেশনটা যেমন চাই তেমন আসেনা, ডায়ালগ ভুল করে ইত্যাদি। কিন্তু আমি তাদের বারবার সুযোগ দেই। হাতে-কলমে এ-বি-সি-ডি’র মত শিখিয়ে কাজ শুরু করি। তবে ইতিবাচক দিকটাই বেশি। তরুণরা শিখতে চেষ্টা করেন। তারা কাজের প্রতি অনেক আগ্রহী এবং মনযোগ। তারা উদ্যমীও। আর আমি যাদের নিয়ে কাজ করি তাদের সঙ্গে সম্পর্কটাও খুব ভালো আমার। একজন সিনিয়র আর্টিস্টের শিডিউল পাওয়াই তো মহাঝক্কির বিষয়। তাদের অভিনয়গুলোতে খুব বেশি বৈচিত্রও দেখি না আমি। তারচেয়েও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- আমি বিশ্বাস করি প্রত্যেক নির্মাতার উচিত তার নিজ ক্ষেত্র থেকে নতুন আর্টিস্ট তৈরি করা। এতে নিজস্বতা থাকে। জাগো নিউজ : একজন নাট্যনির্মাতা হিসেবে এখনকার নাটক নিয়ে আপনার মূল্যয়ন কী?বান্নাহ : অনেকেই অনেক কথা বলেন। তবে আমি বলবো আগে যেসব নাটক নির্মাণ হতো তার চেয়ে কোনো অংশে খারাপ মানের নাটক নির্মাণ হচ্ছে না। সমস্যা যেটা হয়েছে সেটা হচ্ছে দিনের পর দিন নাটকের বাজেট কমে যাচ্ছে। বাজেট কমে যাওয়ার কারণে সবচেয়ে যে বড় সমস্যা হচ্ছে নির্মাতা-প্রযোজকরা বাধ্য হচ্ছেন একটি নাটক নির্মাণে বিভিন্ন কাজে ছাড় দিতে। চাহিদা অনুযায়ী শিল্পী নেয়া যায় না, সময় নিয়ে কাজ করা যায়। আগে আমরা যে কাজটা করতাম চারদিনে এখন সেটা করতে হচ্ছে দুইদিনে। খুব স্বাভাবিকভাবেই মান কমে যাচ্ছে নাটকের। সবদিক থেকে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ‘রসগোল্লা’ নির্মাণ সম্ভব নয়। এইসব বিবেচনায়, যেসব নাটক আমাদের এখানে হচ্ছে সেগুলো অনেক ভালো হচ্ছে। জাগো নিউজ : এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য টেলিভিশনগুলো কী ভূমিকা রাখতে পারে?বান্নাহ : নাটকের এ সমস্যার জন্য শুধু চ্যানেলকে দায়ী করলে হবেনা। এর সঙ্গে বিজ্ঞাপনদাতারাও জড়িত। বিজ্ঞাপনদাতাদের বুঝতে হবে চ্যানেলে যে বিজ্ঞাপনগুলো যায় সেগুলো সংখ্যায় কমিয়ে বিজ্ঞাপনের মূল্য বাড়িয়ে দেওয়া।জাগো নিউজ : বর্তমান প্রচারিত নাটকগুলোতে বিজ্ঞাপন প্রচারের আধিক্যটাও চোখে পড়ে...বান্নাহ : নাটকের ভিতর বিজ্ঞাপনের আধিক্যের কারণ হচ্ছে বিজ্ঞাপনের মূল্য একেবারেই সীমিত। শুধুমাত্র তিন-চারটা চ্যানেল বাদে বাকিগুলোতে একেবারে মুড়ি-মুড়কির মূল্যে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। আর একটা সমাধান আছে সেটা হচ্ছে ডিরেক্ট টু হোম (ডিটিএইচ) পদ্ধতি। এছাড়া ইন্ডিয়াতে চালু আছে পে-চ্যানেল সিস্টেম। আমাদের দেশেও এটা আবশ্যক হয়ে গেছে। আশা করছি আগামীতে এটা আমাদের দেশেও চালু হবে এবং এসব সমস্যার লাঘব হবে। জাগো নিউজ : আপনার নির্মাণের প্রোফাইলটা শুনি ভাই....বান্নাহ : সংখ্যায় ঠিক বলতে না পারলেও আমার ৫৪টির বেশি প্যাকেজ নাটক প্রচারিত হয়েছে। এরমধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য ছিলো- ‘ফ্ল্যাশ ব্যাক’, ‘ওল্ড ডাইরি’, ‘ফায়ার ফ্লাই’, ‘এলিয়েন ও রুম্পার গল্প’, ‘ফ্রেন্ডস লাভ এন্ড সামথিং মোর’, ‘ব্রাদার্স, ‘মাস্তি আনলিমিটেড’ ইত্যাদি। সর্বশেষ গেল ভালোবাসা দিবসে প্রচারিত ‘শত ডানার প্রজাপতি’ নাটকটি দিয়ে খুব সাড়া পেয়েছি। এমন নাটক নির্মাণ করে আত্মতৃপ্তি কাজ করে। আর সিরিয়ালের মধ্যে বর্তমানে প্রচার হওয়া এনটিভিতে ‘হাউজ ৪৪’ এবং দেশ টিভির ‘নাইন এন্ড অ্যা হাফ’ নাটকগুলো দর্শকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। জাগো নিউজ : বিজ্ঞাপন নির্মাণের খবর...বান্নাহ : কিছুদিন আগে মুঠোফোন সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠান রবি’র একটি কাজ করেছি। তাছাড়া বেশ কিছু মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির কাজও করেছি। আপাতত আর কোনো বিজ্ঞাপন নির্মাণ করছিনা। ধারাবাহিকটি নিয়ে ব্যস্ত রয়েছি।জাগো নিউজ : চলচ্চিত্র নির্মাণে আপনাকে দেখা যাবে?বান্নাহ : দেখুন, সত্যি বলতে চলচ্চিত্র নির্মাণই আমার মূল উদ্দেশ্য। সে লক্ষেই নিজেকে প্রস্তুত করছি দীর্ঘদিন ধরে। তবে কবে চলচ্চিত্র নির্মাণের কাজে হাত দেব সেটা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছিনা। হতে পারে এটা দু’মাস পরে। আবার দু’বছর পরেও হতে পারে। জাগো নিউজ : নির্মাতা না হলে কী হতেন?বান্নাহ : আসলে এই প্রশ্নটা আমার মাথায় কোনো সময় আসেনি। আমি এসএসসি পরীক্ষার পরই সিদ্ধান্ত নেই নির্মাতা হবো। সেজন্য আমি গ্রাজুয়েশন করেছি মিডিয়া স্টাডিজের উপর। একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি মেকিং নিয়ে আমি প্রচুর বই পড়েছি। কারণ নির্মাণের সঠিক শিক্ষাটা আমাদের দেশে এখনো উপযুক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। মেকিং নিয়ে পড়ালেখা করলেও এই অঙ্গনে কাজ করতে হলে আরো কিছু অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। পাশাপাশি ইফতেখার আহমেদ ফাহমি ভাইয়ের সহকারী হিসেবেও কাজ করেছি অনেকদিন। তিনি আমার গুরু। তার কাছে অনেক কিছু শিখেছি।জাগো নিউজ : আপনি তো ফটোগ্রাফিও করতেন...বান্নাহ : হ্যাঁ। বেশ কিছুদিন শখের বশে ফ্রিল্যান্সিং ফটোগ্রাফি করেছি। আসলে আমি অর্থ ইনকামের আশায় ওটা করতাম না। একেবারেই ভালোলাগার জায়গা থেকে ফটোগ্রাফি করতাম। তবে আমি পেমেন্ট নিতাম না। জমিয়ে রাখতাম। আমার তোলা ছবি দেশের প্রথমসারির বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাতে গেছে। ছবি কাগজে ছাপা হওয়ার পর আমার আব্বা ওটা দেখে খুব খুশি হতেন। বাড়ির সবাইকে ডেকে দেখতেন- এই দেখো বান্নাহর তোলা ছবি নামসহ খবরের কাগজে এসেছে। কি যে আনন্দ লাগতো তখন বলে বোঝাতে পারবোনা। জাগো নিউজ : ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে জানতে চাই...বান্নাহ : ব্যক্তিগত জীবনে আমি খুব আড্ডাবাজ একজন মানুষ। সময়কে মূল্য দেই। প্রচুর নাটক-চলচ্চিত্র দেখি। আমি খেলাধুলাও খুব ভালোবাসি। বিয়ে করেছি। স্ত্রীর নাম সানিয়া আফরিন। আগামী ২২ মে প্রথম বিবাহবার্ষিকী। সে পেশায় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ট্রিপলই)-র লেকচারার।এলএ/এমএস
Advertisement