‘মাই নেম ইজ ম্যাক্সিমাস, ডেকিমাস, মেরিডিয়াস’- এই সংলাপটুকুই যথেষ্ট ২০০০ সালে মুক্তি পাওয়া ‘গ্লাডিয়েটর’ সিনেমার আবেদন বোঝাতে। দর্শকে ভরপুর কলোসিয়ামের এক নাটকীয় দৃশ্যে রোমান সম্রাট কমোডাসের কাছে নিজেকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার সময় গ্লাডিয়েটর ম্যাক্সিমাস এই সংলাপটি বলেছিলেন।
Advertisement
গ্লাডিয়েটর ছবির প্রাণ ম্যাক্সিমাসের চরিত্রে অভিনয় করা রাসেল ক্রোর মুখ থেকে আসা সংলাপটিই পরবর্তীতে হয়ে উঠে সিনেমাটির আইকনিক সংলাপ। এই লাইনটি ম্যাক্সিমাসের শক্তি, সংকল্প এবং প্রতিশোধের জন্য তার সংগ্রামের প্রতীক হয়ে ওঠে। এটি সিনেমার ভক্তদের কাছে একটি জনপ্রিয় উক্তি এবং সেই দৃশ্যটি আধুনিক সিনেমার অন্যতম স্মরণীয় ও আবেগী মুহূর্ত হিসেবে যোগ হয়েছে।
কেটে গেছে ২৪ বছর। আবারও গ্লাডিয়েটরদের গল্প নিয়ে হাজির হলেন রিডলি স্কট। তিনি এবার নির্মাণ করেছেন ‘গ্লাডিয়েটর ২’। এখানে দেখা যাবে ম্যাক্সিমাসের মৃত্যুর ২০ বছর পর তার পুত্র লুসিয়াসের গ্লাডিয়েটর হওয়া এবং তার ও তার বাবার সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের প্রতিশোধের গল্প।
ছবিটি অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডে মুক্তি পাবে ১৪ নভেম্বর। এটি যুক্তরাজ্যে মুক্তি পাবে ১৫ নভেম্বর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে দেখা যাবে ২২ নভেম্বর থেকে। তবে মুক্তির আগেই সিনেমাটি নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। কালজয়ী সিনেমার সিক্যুয়েল বলেই হয়তো এটিকে ঘিরে বিশ্বব্যাপী দর্শকের আগ্রহটা অনেক বেশি। তৈরি হয়েছে সিনেমাটির সম্ভাব্য সাফল্য নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও।
Advertisement
রাসেল ক্রো অভিনীত ‘গ্লাডিয়েটর’ ২০০০ সালে মুক্তির পর ৪৫০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি আয় করেছিল। নতুন গ্লাডিয়েটর কি সেই সাফল্য টপকাতে পারবে? হয়তো পারবে। কারণ গেল ২৪ বছরে সিনেমার বাজার বেড়েছে কয়েকগুণ। সিনেমার আয়ের নানা পথ তৈরি হয়েছে। তাই নতুন গ্লাডিয়েটর দিয়ে বিলিয়ন ডলার আয় করাও অসম্ভব কিছু নয়।
তবে ‘গ্লাডিয়েটর ২’ বা এর নির্মাতা রিডলি স্কটের জন্য সবচেয়ে বড় পরীক্ষাটা হলো প্রথম পর্বকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জে। বাবা ম্যাক্সিমাসের কাহিনিকে সংলাপ, গল্প, নির্মাণশৈলী, আবেগ, উপভোগের জায়গা থেকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে কি পুত্র গ্লাডিয়েটর লুসিয়াস- সেই প্রশ্ন বা আলোচনা উঠছে বিশ্ব চলচ্চিত্রাঙ্গনে।
এরইমধ্যে সিডনিসহ বেশ কিছু জায়গায় ‘গ্লাডিয়েটর ২’ ছবির বিশেষ প্রদর্শনী হয়েছে। সেগুলো দেখার পর প্রকাশ হয়েছে ছবিটির রিভিউ। তা দেখে নানা বিশ্লেষক অনেক বিশ্লেষণ দিচ্ছেন। যা আভাস দিচ্ছে প্রথম পর্বের আভিজাত্য বা আমেজকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে না দ্বিতীয় কিস্তিটি।
ডিজিটাল স্পাই নামে গণমাধ্যম বলছে, ‘যদিও ‘গ্লাডিয়েটর ২’ প্রকৃতপক্ষে উপভোগ্য এবং চিত্রগতভাবে চমকপ্রদ, তবে এটি হয়তো প্রথম পর্বের মতো চিরকালীনভাবে স্মরণীয় হয়ে উঠবে না।’
Advertisement
ছবিটি শুরু হয় রসেল ক্রো’র ম্যাক্সিমাসের মৃত্যুর ২০ বছর পরের গল্প দিয়ে। যেখানে দেখা যায় ম্যাক্সিমাসের ছেলে বড় হয়ে ওঠা লুসিয়াস ভেরাসকে বন্দী করা হয় এবং গ্লাডিয়েটর হিসেবে বিক্রি করা হয়। ছোটবেলায় রোম ছেড়ে চলে যাওয়ার পর লুসিয়াস আফ্রিকার উত্তরাঞ্চলীয় নুমিদিয়ায় নতুন জীবন শুরু করেছিল। কিন্তু রোমান সাম্রাজ্যের বিস্তার তার সুখের স্বপ্ন ভেঙে দেয়, তার বাড়ি ধ্বংস করে এবং স্ত্রীর জীবন কেড়ে নেয়।
তারপর লুসিয়াস রোমের সেনাবাহিনীর জেনারেল অ্যাকেসিয়াসের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে রোমে ফিরে আসে। তার মা লুসিলা (কনি নিলসেন) এর কাছে ফিরে গিয়ে সে তার পিতার পুরানো উত্তরাধিকার পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করে।
এই সিক্যুয়েলটির অনেকটা অংশই প্রথম সিনেমার নস্টালজিয়ায় পূর্ণ। পুরনো উক্তি এবং ম্যাক্সিমাসের বর্ম ও মার্কাস অরেলিয়াসের আংটি পুনরায় ব্যবহৃত হয়েছে। ছবিটির পুরো গল্পই যেন পুরানো গ্লাডিয়েটর এর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। এটি প্রায় এমন এক অনুভূতি তৈরি করে যে, নতুন চরিত্রগুলোর সাথে দর্শকদের সংযোগ করার জন্য ছবিটি তাদের অতীতকে ব্যবহার করতে চায়। সেজন্যই হয়তো গ্লাডিডেটরের মতো নিজস্বতা এখানে পাওয়া যাবে না। আবেগের জায়গাও কম। এবারের চিত্রনাট্যটাও ঠিক জমাতে পারেননি স্কট, রিভিউয়ে দাবি করছেন অনেকে।
রিডলি স্কটের বিশেষত্ব হল দারুণ অ্যাকশন সিকোয়েন্স। ‘গ্লাডিয়েটর ২’-তেও সে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন তিনি। কলোসিয়ামে রক্তক্ষয়ী লড়াই, জলযুদ্ধ এবং হাঙরের মতো নাটকীয় দৃশ্যগুলো সিনেমাটির রোমাঞ্চকর দিকগুলোকে তুলে ধরেছে।
ছবিটিতে লুসিয়াস চরিত্রে অভিনয় করেছেন পল মেসকাল। তার পারফরম্যান্স বেশ প্রশংসা পাচ্ছে। অন্যদিকে রোমের সেনাবাহিনীর জেনারেল অ্যাকেসিয়াসের চরিত্রে পেড্রো পাস্কাল, লোভী ব্যবসায়ী ম্যাক্রিনাস চরিত্রে ডেঞ্জেল ওয়াশিংটন, এবং লুসিয়াসের মায়ের চরিত্রে কনি নিলসেনের মতো অভিজ্ঞ অভিনয়শিল্পীরা ভালো চেষ্টা করেছেন। তবে গল্প ও সংলাপের দুর্বলতা চরিত্রগুলোকে খুব একটা গভীর করতে পারেনি বলে দাবি করছেন অনেকেই।
সবশেষে বলা যায়, যদিও ‘গ্লাডিয়েটর ২’ আবেগী গভীরতার অভাবে কিছুটা পিছিয়ে এবং প্রথমটির মতো অমর মুহূর্ত তৈরি করতে পারেনি তবে এটিও এক দুর্দান্ত বিনোদনমূলক সিনেমা হতে যাচ্ছে। যারা প্রথম সিনেমার ভক্ত তারা এই সিক্যুয়েলটিও উপভোগ করবেন।
এলএ/জিকেএস