ভ্রমণ

পিনাং থেকে ঢাকার বদলে কলকাতা?

কাজী মনজুর করিম মিতুল

Advertisement

১৯৯০ পরবর্তী মালয়েশিয়া ছিল ঋণে জর্জরিত। ব্যাংক ঋণ আর বিদেশি ঋণ নিয়ে বড় বড় বিনিয়োগ করে দেশটির অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু মাথাপিছু ঋণ ছিল বিস্তর। ফলে ডলারের বিপরীতে রিংগিতের মূল্য পড়ে গিয়েছিল তলানিতে। ১৯৯৭ সালে মালয়েশিয়া একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ডা. মাহাথির বিন মোহাম্মাদ তখন আইএমএফের শর্ত মেনে বড় কোনো ঋণ নেননি, দেশকে তিনি ঋণের ভারে জর্জরিত দেখতে চাননি, অথচ তাদের প্রতিবেশি দেশগুলো (বিশেষ করে থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া সেই ঋণের ফাঁদে পা দিয়েছিল)।

আমার মনে হয়, সেই স্বনির্ভরতার কঠিন সিদ্ধান্ত আজ মালয়েশিয়াকে গোটা বিশ্বের কাছে প্রবল সমীহের এক সুউচ্চ অবস্থানে নিয়ে গেছে। গত প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে দেশটাকে দেখে বারবার এটাই মনে হচ্ছিল, আহা! আমরা যদি একজন মাহাথির পেতাম, যিনি পরের প্রজন্মের চোখের স্বপ্ন নিজের চোখে দেখতে পেতেন, যিনি পরের প্রজন্মের ভাষা বুঝতেন…।

বাংলাদেশের তথাকথিত উন্নয়ন একদিন কণ্ঠহারের পরিবর্তে কণ্টকমালার মতো গলায় ফুটবে, এ আমি দিব্যচোখে দেখতে পাচ্ছিলাম। কুয়ালালামপুরের ম্যাকডোনাল্ডসে খেতে খেতে দেখছিলাম ওদের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা কেউই নগদ টাকা দিয়ে কিছু কিনছে না। ওদের মোবাইল ফোনটাই ওদের ওয়ালেট। সেটা দিয়ে স্ক্যান করে ওরা খাবার অর্ডার করছে, দাম মেটাচ্ছে। ফলে বাবা-মায়ের কষ্টে উপার্জিত টাকা ওরা কোথায় খরচ করছে, তার স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।

Advertisement

মালয়েশিয়া সরকার তার তরুণ প্রজন্মের সুশিক্ষার জন্য বিনিয়োগ করেছে, কৃষিকে রফতানি খাতে ব্যবহার করার জন্য ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে, পর্যটন খাতকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মুগ্ধতার পর্যায়ে নিয়ে গেছে। সেজন্যই বাংলাদেশ থেকে আজ আমি সপরিবারে এখানে ছুটে এসেছি। কুয়ালালামপুর থেকে লাংকাউই ঘুরে মে মাসের ৪ তারিখ রাতে আমরা অবতরণ করলাম পিনাং দ্বীপে। বিমান থেকেই চোখে ঝলক লাগছিল এর উঁচু আর ঝলমলে অট্টালিকাগুলো।

৪ পর্বে লেখা আমার মালয়েশিয়া ভ্রমণ কাহিনীর আজ শেষ।

পিনাং দ্বীপটাকে আমার বেশ ছিমছাম, শান্তই মনে হলো। যেহেতু কুয়ালালামপুর আর লাংকাউই- এই দুই বিপরীত ধর্মী শহর দেখে এখানে এলাম, তাই এখানে বিস্ময় বা মুগ্ধতা সেই মাত্রায় অনুভব করলাম না। মনে হলো, এর চেয়ে রেদাং আইল্যান্ড গেলে বালি দ্বীপের মজা পেতাম, অথবা ক্যামেরন হাইল্যান্ড গেলে দার্জিলিং এর অনুভব পাওয়া যেতো। আমরা অবশ্য পিনাং এর মূল ভূখণ্ডে যাইনি। মালাক্কা প্রণালীতে সাগরের বুকে সেতু গড়ে দ্বীপটি মূল ভুখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। সেদিকে যাওয়ার মতো সময় আমাদের হাতে ছিল না। অন্যদিকে অনেকেই দেখলাম গাড়ি বা বাসে করে কুয়ালালামপুর থেকে পিনাং দ্বীপে চলে এসেছে। ওরা বরং আমার চেয়ে মালয়েশিয়াকে বেশি দেখতে পেরেছে।

প্রথম পর্ব মুগ্ধতার মালয়েশিয়া

এ বছর (২০২৪) জানুয়ারিতে যখন মালয়েশিয়া ভ্রমণের পরিকল্পনা করছিলাম, তখন ইচ্ছে ছিল লাংকাউই থেকে পিনাং সমুদ্রপথে যাব। কিন্তু বাংলাদেশে বসে অনলাইনে কোনো ফেরি বুক করতে পারছিলাম না। বরং কোন কোন ব্লগে লেখা ছিল কোভিড-১৯ মহামারির পর থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ আছে। তাই বাধ্য হয়ে আকাশ পথে যাব ঠিক করলাম, এয়ার এশিয়ার টিকিট কাটা হলো। পরে লাংকাউইতে যখন দেখলাম ফেরি চলছে, ভীষণ মন খারাপ হলো। একটা চমৎকার সফর হতে পারতো লাংকাউই-পিনাং ফেরিভ্রমণ।

আমাদের হোটেলটা সাগরের কাছে নিতে চেয়েছিলাম। হোটেল বুক করার সময় ‘গুগল মামা’ একটু ঘোল খাওয়ালো। একটা বিচের পাশেই বড় বড় সব পাঁচতারকা হোটেল, সেটা ঠিক। তবে সেই বিচ আসলে একটা উপসাগরের এক মৃতপ্রায় উপকূল, নাম গার্নি। এখানে বা আছে ঢেউ, না আছে সৈকত। উপকূল তো নয়, যেন খালের পাড়। তবে এই গার্নি উপকূলে চমৎকার একটা পার্ক আছে। আবাল বৃদ্ধ বণিতা সেই পার্ক উপভোগ করতে পারেন। সকালে দেখলাম, সেখানে কেউ যোগাসন করছেন, কেউ সাইক্লিং, কেউ জগিং। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত শিশুরা খেলে Slider আর See-Saw তে।

Advertisement

পরদিন সকালে বাতু ফিরিংগি সৈকতে যখন একটা চেয়ারে শরীর এলিয়ে বসেছি, দেখি চেয়ার ভাড়া দিতে এগিয়ে এসেছে দুই বাংলাদেশি। তারা বোটিং, প্যারাসেইলিং ইত্যাদি অফার করে আমাদের কান ঝালাপালা করে দিলো। আমরা কেবল নিরিবিলি একটু পারিবারিক সময় কাটাতে চাই, অ্যাডভেনচার না। তাই ওদের ফিরিয়ে দিয়ে সমুদ্রের দিকে মন দিলাম। কিন্তু সাগরের জল বা সৈকতের সৌন্দর্য-কোনটাই আমাদের মনে ধরলো না। এর চেয়ে কক্সবাজার, পতেংগা বা কুয়াকাটা-ঢের ভালো। মনে হচ্ছে গাঁটের টাকাগুলো গচ্চাই গেলো। তবু এত পথ এত খরচ করে এলাম, একটু সাঁতার কাটব না?

আধঘণ্টা পার হয়নি, হঠাৎ আমার পুত্র ব্যথায় আর্তনাদ করে উঠলো। তার হাতে কিছু একটা কামড় দিয়েছে। সমুদ্রে সাপ নেই তো? ওর কনুইয়ের নিচে কয়েক বর্গসেন্টিমিটার ফুলে উঠেছে, অবশ্য সাপের দাঁতের কোনো চিহ্ন নেই। ডাকলাম সেই দুই ‘দেশি ভাই’দের। ওরা বললো, জেলিফিশ। এখানে প্রায়ই নাকি জেলিফিশের আক্রমণ হয়। ক্ষতস্থানে ঠান্ডা কোক ঢালতে হয়। আমার সাথে ঠান্ডা পানি ছিল, তাই ঢাললাম। ওর ব্যথা কমতে শুরু করলে একটু পর আবারও আমরা জলে নামলাম। কিছুক্ষণ পর আমার স্ত্রী চিৎকার দিয়ে উঠল। তার আঙ্গুলেও হুল ফুটিয়েছে জেলিফিশ। সেখানে আবার পানি ঢালা হলো। (ঢাকায় ফেরার পর প্রায় ২ সপ্তাহ আঙ্গুল ফুলে ছিল। ত্বকের একটা স্থায়ী ক্ষতি রয়ে গেলো।)

দ্বিতীয় পর্ব: টুইন টাওয়ারের আলোকছটা

আমরা আর জলে নামার সাহস পেলাম না। বিচে বিশাল এক কাঠবাদাম গাছ পেয়ে সেটার ছায়ায় বসলাম। দেখলাম স্থানীয় অনেকেই এখানে বেড়াতে আসে সপরিবারে। তারা চাদর পেতে বসেছে, সাথে রান্না করে আনা খাবার, একটা ফ্যামিলি ডে আউট জাতীয় আয়োজন। ভারতীয় পর্যটকদের অধিকাংশই বোটিং বা প্যারাসেইলিং করছে। সাঁতার কাটছে খুব কম মানুষ।

কারণটা বুঝতে এত সময় লেগে গেলো আমাদের। বিচ ধরে উল্টোদিকে হাঁটছিলাম। অদূরেই একটা সাইনবোর্ড চোখে পড়ল এবার। তাতে লেখা “Be Aware of Jelly FIsh”.... এটা আগে দেখিনি কেন? নিজেকে কষে ধমক লাগালাম মনে মনে। একটু গুগল করে জানতে পারলাম, কিছু বিশেষ জেলিফিসের হুলে যে বিষ থাকে, তাতে কোনো কোনো মানুষের মৃত্যুও ঘটে!

বাতু ফিরিঙ্গি বিচের সেই সতর্কবার্তা

প্রচণ্ড রোদ আর গরমে অতিষ্ঠ হয়ে হোটেলে ফিরে গেলাম। এই হোটেলের সুইমিংপুলটা খোলা আকাশের নিচে। আকাশ মেঘলা। সপরিবারে বেশ ভালো সময় কাটলো। ইচ্ছে ছিল বিকেলে George Town বা Penang Hill Railway Station যাব। পাহাড়ের ওপর দিয়ে ট্রেনে চড়ার মজাই আলাদা। পিনাং-এর মূল পর্যটন স্পট এই দুটো। ব্রিটিশ উপনিবেশের এই নিদর্শন এখন পিনাংকে দিচ্ছে পর্যটকদের জন্য বিশেষ কিছু প্যাকেজ। আমরা অবশ্য সেসবে আর গেলাম না, বিকেল কাটলো গার্নি বিচে। বিচ থেকে হোটেলপাড়ায় চোখ যেতেই সবিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম ভবনগুলোর অপার সৌন্দর্য! “Building made of glass and light”, স্কুলজীবনে পড়া Newyork কবিতার এই লাইনটাই মাথায় ঘুরতে লাগলো।

গার্নি বিচের পার্ক থেকে হোটেল পাড়ার আলো ঝলমল দৃশ্য

সন্ধ্যাবেলায় আমার লাগেজ নিয়ে বিপাকে পড়লাম। কম্বিনেশন লক কাজ করছে না। হোটেল রিসিপশন কোনো সাহায্য করতে পারলো না। ঘণ্টাখানেক চেষ্টা করে হার মানলাম। পরে অবশ্য ইউটিউব দেখে শিখলাম কীভাবে নম্বর ভুলে গেলে বা নম্বর কাজ না করলে লক বন্ধ অবস্থায় Reset করা যায়। এই শিক্ষাটা পরে এয়াপোর্টে একজন প্রবাসী বাংলাদেশিকে সাহায্য করতে কাজে লেগেছিল।

তৃতীয় পর্ব: ঈগল আর পাহাড়ের দ্বীপ লাংকাউই

বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো আমাদের দেশে ফেরার ফ্লাইট হঠাৎ করে এগিয়ে দিয়েছিলো মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স। কারণ ব্যাখ্যা না করে শুধু নতুন সময়সূচি জানিয়ে ই-মেইল করেছিল ১ দিন আগে। মধ্যরাতের ফ্লাইট এনেছে সন্ধ্যায়। পরে সংবাদপত্র থেকে জানা গেলো, ঢাকার বিমান বন্দর রানওয়ের সংস্কার কাজের কারণে তিন দিনের জন্য রাত ১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত সব বিমান ওঠা-নামা বন্ধ করেছে আমাদের ফ্লাইট এগিয়ে আনা হয়েছে। সেটা জানানো হলো ফ্লাইটের আগের দিন। ভাগ্যিস ঘণ্টায় ঘণ্টায় মেইল চেক করা আমার এক বাজে অভ্যেস (আমার স্ত্রীর ভাষায়)। নইলে কী হতো এ যাত্রায় কে জানে?

কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে লেখকপুত্র

আমাদের ঢাকায় ফেরার ফ্লাইটের নতুন সময় রাত ৮টায়। আমরা বিকেল ৪টায় কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্ট পৌঁছে দেখি চেক-ইন শুরু হয়ে গেছে। আমাদের দেশের রেমিট্যান্সযোদ্ধা ভাই-বোনেরা বড় বড় লাগেজ, কার্টন, কম্বল এর প্যাকেট ইত্যাদি বুকিং দিচ্ছেন। আমরা অনলাইনে যে বোর্ডিং পাস পেয়েছিলাম, এরা দেখি সেটা বদলে দিলো। সিট নম্বর দেখে পুত্র হতাশ। একটাও Window Seat নেই।

বলে রাখি, এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ বেশি দামে বেচবে বলে যে সিটগুলো চিহ্নিত করে রেখেছিল, সেগুলো কেউ কেনেনি। ভাগ্য গুণে তারই একটা ফাঁকা সিটে পুত্রকে বসার ব্যবস্থা করে দিলাম। আমার পাশের যাত্রীটিও অন্য ফাঁকা সীটে গিয়ে বসে কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুম দিলেন। ফলে আমি স্ত্রী মহোদয়াকে ৩ সিট দিয়ে এক প্রান্তে বসলাম। তিনি ৩ সিটজুড়ে শুয়েই ঘুমিয়ে পড়লেন। সিট বেল্ট বাঁধা অবস্থাতেই!

গোটা আকাশভ্রমণ আমি সিটের সঙ্গে লাগোয়া স্ক্রিনে বিমানের গতিপথ পর্যবেক্ষণ করে কাটালাম। সেই সাথে পেছনের সারিতে বসা অস্ট্রেলিয়া ফেরত বাংলাদেশি পরিবারটির কলকাকলিতে কান ঝালাপালা হচ্ছিল। তাদের সাথে ছিল এক দুরন্ত শিশু। শিশুটি ঘুমিয়ে পড়লে বিমানে শান্তি ফিরে এলো, যেন ‘খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো’...

থাইল্যান্ড, মিয়ানমার পেরিয়ে চট্টগ্রামের আকাশসীমায় বিমান ঢুকতেই মনে এক প্রশান্তি অনুভব করলাম। নারায়ণগঞ্জের আকাশে পৌঁছে যখন পাইলট জানালেন, আমরা ঢাকায় নামার প্রস্তুতি নিচ্ছি, তার পরপরই বাঁধলো বিপত্তি। ঢাকায় প্রচন্ড বজ্রপাত ও বৃষ্টি হচ্ছে। বাতাসের গতিবেগ বেগতিক। বিশাল বোয়িং ৭৪৭ বিমান বাতাসের ঢেউয়ে ডিঙ্গি নৌকার মতো দুলে উঠছে। রাত তখন প্রায় ১০টা। প্রায় ঘণ্টাখানেক আমরা ঘুরপাক খেলাম ঢাকার চারপাশের আকাশে। আবহাওয়া প্রতিকূল। ১১টায় পাইলট হাল ছাড়লেন। ঢাকায় নামা নিরাপদ নয়।

বিমান চললো কলকাতার দিকে। কলকাতায় পৌঁছে সবাই উশখুশ করছিল নামার জন্য। সে গুড়ে বালি। সেখানে ২ ঘণ্টা ঠায় বসে থাকতে হলো। আমার ক্লান্ত স্ত্রী ঘুমিয়েই কাটালেন পুরোটা সময়। পুত্র সকৌতুহলে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে সর্বক্ষণ। আমি পাশের সিটের দুরন্ত এক বালকের সাথে একটু দস্যিপনা করে কলকাতার ২ ঘণ্টা পার করলাম। বালকটি দেশে ফিরছে তার মায়ের সঙ্গে, বাবা ঢাকাতেই থাকেন। তার মা একজন রেমিট্যান্সযোদ্ধা। ভেবে অবাক হচ্ছিলাম, জীবিকার জন্য এরা কত না ত্যাগ স্বীকার করেন! পরিবার-পরিজন-বন্ধু সবাইকে ছেড়ে বিদেশের মাটিতে শ্রম বিক্রি করতে চলে যান তারা। বছরে একবার হয়তো সপ্তাহ কয়েকের জন্য ছুটি পান। ফিরে পান হারানো স্বাধীনতা। কিছুদিন পর আবার সেই শৃংখল, সেই দাসত্ব…।

যাত্রীরা Cabin Crew-দের কাছে বারবার জানতে চাইছিল কখন আবার উড়াল দেবে এই বিশাল শকট, কিন্তু ঢাকা থেকে অনুমোদন আসছিল না।

কলকাতা থেকে উড়াল দিলাম রাত দুটো নাগাদ। ঢাকায় নিরাপদে নামলাম ঘড়িতে তিনটের কাঁটা ছুঁয়ে। ততক্ষণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বরাতে ঢাকায় শিলাবৃষ্টির খবর পাওয়া গেলো। আমরা অবশ্য আকাশ থেকে কেবল বজ্রের চোখ রাঙানো দেখেছিলাম।

ঢাকায় নেমে এয়ারপোর্ট থেকে বের হতে গিয়ে পড়লাম আরেক ভোগান্তিতে। শত শত প্রবাসীদের গ্রাম থেকে নিতে আসা সহস্র আত্মীয় আর তাদের ভাড়া করা গাড়ির ভিড়ে আমার গাড়িটা টার্মিনালে আসতেই পারছিল না। টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে আমাদের রীতিমতো গলদঘর্ম হতে হলো নিজেদের গাড়িটা খুঁজে পেতে। আমার পরিবার বললো, এই প্রথম তাদের মনে হচ্ছে তারা হারিয়ে যাবে! বিদেশের মাটিতে তারা এতটা অনিরাপদ বোধ করেনি।

বাসায় যখন ফিরলাম, তখন ফজরের আজান হচ্ছে। একটা দুর্দান্ত, স্মরণীয় সফর শেষে সৃষ্টিকর্তার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নামাজ পড়লাম। সম্পূর্ণ অচেনা একটা দেশে যাওয়া এবং ফেরার পথে প্রতিকূল আবহাওয়ায় কলকাতা ঘুরে হলেও আমরা সর্বদা নিরাপদেই ছিলাম, এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কিছু নেই।

শুরু হচ্ছে একটা নতুন দিন, তারিখটা মে মাসের ৬, সাল ২০২৪। শুরু হবে আবার সেই যান্ত্রিক জীবন, সেই রুটিন বাঁধা চলাচল। জীবন তবু কী অসীম সুন্দর! সুন্দর এই পৃথিবী আর এর মানুষেরা।

এমআরএম/জেআইএম