দারুস সালাম মাসুদ
Advertisement
ভাবা যায়—সূর্য ছাড়া পৃথিবী, আলো ছাড়া এক মহাবিশ্ব! পৃথিবী যত নয়নাভিরামই হোক, কোথাও আলো না থাকলে এর মূল্য আদতে কতটুকু? কোনো মূল্য নেই। ঠিক তেমনই শিক্ষা ছাড়া বর্তমান বিশ্বে কোনো জাতির প্রকৃত মর্যাদা ও গ্রহণযোগ্যতা নেই। শিক্ষা যে আলো, বর্তমান যুগে এটা বুঝতে কোনো জাতির আর বাকি নেই। তাই তো দিন দিন আমাদের দেশেও বাড়ছে শিক্ষার হার। আমরা আশাবাদী রাষ্ট্রের যথাযথ শিক্ষাব্যবস্থা ও এর মূল্যায়ন এবং সর্বোপরি এর বাস্তবায়ন যদি সর্বস্তরে অব্যাহত থাকে এই হার বাড়বে বৈ কমবে না। আমাদের লক্ষ্য স্বচ্ছ কাঁচের মতো পরিষ্কার আমরাও একটি আদর্শ ও উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চাই। জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে থাকতে চাই যথাযথ মান ও স্বীকৃতি নিয়ে।
স্বপ্ন ছাড়া যেমন একটি মানুষ এগিয়ে যেতে পারে না; তেমনই একটি জাতিরও আগামী স্বপ্ন থাকা অতীব জরুরি। প্রয়োজন যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম, নতুন নতুন গবেষণা, আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান অনুশীলন। যা আছে তা তো আছেই, যা নেই তার গবেষণা এখন প্রয়োজন। এজন্যই যুগে যুগে শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আসে সর্বপ্রথম। একজন মানবের শিক্ষা না থাকলে যেমন মানবজীবন সার্থক হয় না, তদ্রুপ শিক্ষা ব্যতিত কোনো জাতিও শীর্ষ স্থানে পৌঁছতে পারে না। তাই তো এর গুরুত্ব ও বাস্তবায়ন হতে হবে আমাদের প্রতিটা সমাজ থেকেই।
উন্নত জাতি গঠনে একটা সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ফলদায়ক। শিক্ষা ও শিক্ষিত লোককে সমাজ কোন দৃষ্টিতে দেখে সে বিষয়ের ওপর আধুনিক সমাজ ও জাতি গঠনে বিস্তর প্রভাব পড়ে। এ কথা বলতে দ্বিধা নেই—আজকাল অর্থশক্তিকে সমাজ যেভাবে অনায়াসে মেনে নিয়েছে, সেভাবে এখনো শিক্ষাশক্তি ও শিক্ষিতজনকে সাদরে গ্রহণ করতে পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। শিক্ষার বলে নয় অর্থবল ও রাজনৈতিক প্রভাববলয়ে পরিচালিত হচ্ছে বর্তমান সমাজ। অনেকের যথেষ্ট যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তারা এখন উচ্চশিক্ষায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে কিংবা আর আগ্রহী নয়। উচ্চশিক্ষিত লোকের যথাযথ মূল্যায়ন হয় না বলে তারা দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমান অহরহ অথবা বিদেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেও অনেকে আর দেশে ফিরে আসতে ইচ্ছুক নন। শিক্ষাই আলো, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড—এসব এখনো বিদ্যালয়ে পাঠদান হচ্ছে বটে কিন্তু এর সঠিক মূল্যায়ন ও বাস্তবায়ন বর্তমান সমাজে সর্বস্তরে পরিলক্ষিত হচ্ছে কি?
Advertisement
শক্তিমান সূর্যের বিস্তর আলোকেও এক খণ্ড মেঘ আড়াল করে দিতে পারে। আটকে দিতে পারে তার জ্যোতির্ময় রশ্মি। আমরাও আজ শিক্ষার আলোকে, শিক্ষার শক্তিকে তথা উচ্চশিক্ষিত লোককে নীতিগত অভাব ও কাঠামোগত ত্রুটির কারণে অনেক স্থানে পরোক্ষভাবে আটকে রেখেছি। শিক্ষাকে পেছনে রেখে অর্থশক্তিকে বারবার সামনে রাখছি সব জায়গায়। দিন দিন সমাজকে পুঁজিবাদীদের হাতে তুলে দিচ্ছি বুঝে না বুঝে। এতে অগ্রাহ্য হয়ে পড়ছে শিক্ষা ও শিক্ষার মর্যাদা। আমাদের দেশে যে এখনো শিক্ষার সঠিক মূল্যায়ন ও বাস্তবায়ন হয় না এর প্রমাণও প্রত্যক্ষ। কোনো একটা কমিটি গঠন করা হলেও দেখা যায়—সেখানে সর্বপ্রথম স্থান পায় পয়সাওয়ালারা, প্রভাবশালীরা, তারপর স্বজনপ্রীতি তো আছেই। শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখে পদ দেওয়া হয় এমন সংখ্যা এখন আর নেই বললেই চলে। নতুন প্রজন্ম কেন কষ্ট করে লেখাপড়া শিখবে—যদি চোখের সামনে শিক্ষিতের অবমূল্যায়ন, সমাজ ও রাষ্ট্রের দ্বারা অগ্রাহ্য দেখে? শিক্ষিতজনকে মূল্যায়ন করা শিক্ষাকে মূল্যায়ন করার শামিল। শিক্ষিতজনকে যদি সর্বস্তরে যথাযথ মূল্যায়ন করা না হয় তাহলে প্রকৃত অর্থে শিক্ষাকে কি মূল্যায়ন করা হয়? এমনকি স্কুল-কলেজের মতো বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটিতেও অনেক সময় উচ্চ শিক্ষিত লোকের স্থান হয়ে ওঠে না (বর্তমানে এডহক কমিটি দিয়ে চললেও ৯ মে ২০২৪ তারিখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটির একটি প্রবিধানমালা জারি করা হয়, যেখানে বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজের সভাপতি হওয়ার ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয় এইচএসসি পাস। বর্তমানে এ যোগ্যতা যথেষ্ট কি? যেখানে সরকারি প্রাইমারি স্কুলের সভাপতি পদে যোগত্য লাগে ডিগ্রি পাস)।
আধিপত্যের মাপকাঠিতে আর বিত্তের ওজনে চলে এসব পদ-পদবি, দেন-দরবার। এতে কি প্রমাণিত হয় আসলে আমরা শিক্ষাকে সঠিক মূল্যায়ন করি? এ কথাগুলো আজকালের সামাজিক প্রেক্ষাপটেই বলছি। এগুলো অত্যন্ত সহজ কথা। যে কেউ সহজে অনুধাবন করতে সক্ষম। তবে কি আমাদের বর্তমান সমাজে উচ্চশিক্ষার প্রয়োজন নেই? পড়াশোনার পেছনে সময় নষ্ট না করে ছোটবেলা থেকে অর্থের পেছনে ছুটে বিত্তবান হওয়াই কি এখন লক্ষ্য হওয়া উচিত? বইয়ের কথা ও বাস্তবতার সাথে শিক্ষা ও শিক্ষার মর্যাদা কিংবা শিক্ষকের মর্যাদার অনেক পার্থক্যও পরিলক্ষিত হয়। একজন গার্মেন্টস শ্রমিকের বেতনের সাথে একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের বেতনের কী এমন পার্থক্য? ফিনল্যান্ড, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন, সৌদি আরবসহ অনেক দেশের শিক্ষকরা বাংলাদেশি টাকার হিসেবে গড়ে আট লাখ থেকে বারো লাখ টাকা মাসিক বেতন পান। এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারতের শিক্ষকরাও এদেশের শিক্ষকদের তুলনায় অধিক বেতন পান। ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের অবস্থান এ মহাদেশের ৪৯টি দেশের মধ্যে ৪৫তম। যে চারটি দেশ পিছিয়ে আছে সেগুলোর সবই যুদ্ধ বিধ্বস্ত। আসলে বাস্তবে আমাদের দেশে শিক্ষা ও শিক্ষক ব্যক্তিটির মর্যাদাই-বা কতটুকু?
আরও পড়ুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর থেকে ভিসি ও প্রো-ভিসি নিয়োগ কেন জরুরি? ড. মুহাম্মদ ইউনূস: যিনি স্বপ্নের সমান বড়সকল দেশের রানি আমার জন্মভূমি—কাঙালিনী, ভিখারিনী হয়ে থাক কিংবা আজীবন অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে থাক অজ্ঞতার বলয়ে, কিংবা এদেশের শিক্ষিতজনেরা অবজ্ঞেয় হয়ে থাক, এটা এ যুগে আমরা আর কেউ প্রত্যাশা করি না। এর যথার্থ মূল্যায়ন ও বাস্তবায়ন দৃশ্যত চাই। সমাজ কিংবা রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও যুগোপযোগী নীতি-নির্ধারণ দেখতে চাই। দিনে দিনে শিক্ষার হার বাড়িয়ে লাভ কী, যদি এর সঠিক মূল্যায়ন ও বাস্তবায়ন না হয়? একটা মর্যাদাশীল জাতি গঠনে মূল্যায়ন প্রক্রিয়াটাও এখন সামনে আনা খুব জরুরি হয়ে পড়ছে। উপযুক্ত কর্মসংস্থানও সময়ের সর্বোচ্চ দাবি। নইলে দিন দিন শিক্ষার হার বাড়লেও শিক্ষিতজনরা উপেক্ষিত হয়েই থাকবেন সমাজে। যার যার যোগ্যতা, জ্ঞান, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা অনুযায়ী তাকে গ্রহণ করা উচিত। এজন্য প্রয়োজনে একটা যৌক্তিক মূল্যায়ন ও বাস্তবায়ন কাঠামো সমাজ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত বহাল রাখা যেতে পারে।
এদেশে যারা সম্মানিত জনপ্রতিনিধি হবেন—স্থানীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায়ের সব নির্বাচনে প্রার্থীদের একটা ন্যূনতম যোগ্যতা থাকা কি উচিত নয়? যার শিক্ষা নেই সে তো ঘুমন্ত ব্যক্তির ন্যায়। তাকে দিয়ে সমাজের কী এমন উন্নয়ন আশা করবেন? একটা আলোহীন, শিক্ষাহীন মানুষকে দিয়ে আপনি জাতির জন্য কী আলো জ্বালাবেন? একজন ঘুমন্ত ব্যক্তি আরেকজন ঘুমন্ত ব্যাক্তিকে জাগ্রত করতে পারে না—শেখ সাদির (র.) কথাটি আমাদের বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে। যারা এ দেশের সংসদে যাবেন, আইন প্রণয়ন করবেন, পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবেন, তাদের নিজেরই যদি যোগ্যতা না থাকে; তখন তারা কী উন্নয়ননীতি উপহার দেবেন জাতিকে? আদতে এসব লোক দলের লেজুরবৃত্তি করা ছাড়া আর কোনো কাজ করে না। তারা আজীবন দলদাস হয়েই জ্বি হুজুর-জ্বি হুজুর করে কাটিয়ে দেন। সমাজ ও জাতির প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও যুগোপযোগী উন্নয়ন কি তাদের দ্বারা আদৌ সম্ভব?
Advertisement
পরবর্তী প্রজন্মকে সুশিক্ষিত এবং মানবীয় গুণাবলিসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে প্রতিটি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটিতে উচ্চ শিক্ষিতদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রাখা আবশ্যক। প্রয়োজনে বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রীয়ভাবে একটা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নীতিমালাও করা যেতে পারে। শিক্ষকদের যথাযথ সামাজিক মর্যাদা ও মূল্যায়নের জন্য সময়োচিত ব্যবস্থা নেওয়াও দরকার বলে মনে করি। শিক্ষিতদের মূল্যায়নের স্বার্থে প্রতিটা রাজনৈতিক দলেও এরূপ নীতিগত সিদ্ধান্ত রাখা উচিত বলে উপলব্ধি করি। এ ছাড়া সামাজিক যে কোনো সংগঠন ও সংস্থায় শিক্ষিতদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্থান দেওয়া বিশেষভাবেই যুক্তিযুক্ত। বিত্তবান, প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় সব স্থানে দিন দিন যেভাবে শিক্ষিতজনরা অগ্রাহ্য হয়ে পড়ছেন, তার কিছুটা হলেও উত্তরণ সম্ভব হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
এ ক্ষেত্রে কিছু প্রশ্ন আসতে পারে, বর্তমান সমাজের অনেক মেধাবী ও শিক্ষিতজনরা রাজনীতি কিংবা কোনো সংগঠনে সক্রিয় থাকতে আগ্রহী নন। হ্যাঁ, এটা সত্যি। এটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু বর্তমান সমাজে শিক্ষিত লোক পাওয়া এখন আর আগের মতো কঠিন নয়। কেউ না কেউ থাকবেন, কেউ না কেউ আসবেন। কিন্তু যে আসতে চান, তাকেও এখন আর আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া হয় না রাজনৈতিক কিংবা প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে। এতে বর্তমান প্রজন্ম কী দেখছে, কী শিখছে? বাস্তবে কি শিক্ষার মূল্যায়ন হচ্ছে? এ প্রজন্ম মানসিক ভাবে শিক্ষা থেকে দূরে সরে যাবে, উচ্চশিক্ষায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে অনেক মেধাবীরাও কিংবা শিক্ষিত হয়েও তারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম থাকবে যন্ত্রণাময় হতাশায়। তাদের মনের ভেতর দ্বিধার ঢেউ বারবার আছড়ে পড়বে জীবন তীরে এই ভেবে যে—এত বছর সময় নষ্ট করে পড়ালেখা করে বাস্তবে এর মূল্যায়ন কতটুকু? প্রশ্ন আরও আসতে পারে—এখন কি সমাজ চলছে না? রাষ্ট্র চলছে না? জ্বি চলছে। তবে একটা সমাজ কিংবা রাষ্ট্র বিভিন্ন ভাবে পরিচালিত হতে পারে। আধুনিক ও জ্ঞান ভিত্তিক পরিচালনায় বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের এখনই এগিয়ে আসতে হবে দৃশ্যমান হয়ে।
সমাজের ক্রমাগত উন্নয়ন, নাগরিক জীবনের মান বৃদ্ধি, মানবিক মানুষ, আলোকিত মানুষ—এসব তৈরি কি অজ্ঞ-বিত্তবানদের পরিচালনায় হতে পারে? আমরা জানি, সুষ্ঠু ধারার রাজনীতিচর্চা একটা রাষ্ট্রের অর্থনীতিকে টেকসই ও স্থীতিশীল রাখার প্রথম পন্থা। এতে সমাজ তথা রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক ভোগ করবে বর্তমান ও আগামীর সুফল। সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি প্রতিটা ওয়ার্ড থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত সব ধাপেই থাকা বাঞ্ছনীয়। এ চর্চা কি শিক্ষিতজন ছাড়া সর্বস্তরে সম্ভব? এ ছাড়া বর্তমান বিশ্বে প্রতিটা রাষ্ট্রকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কঠিন প্রতিযোগিতা করেই টিকে থাকতে হয়, এগিয়ে যেতে হয়। এসব বিবেচনায় দেশ ও দেশের জনগণের প্রকৃত কল্যাণে শিক্ষা ও শিক্ষিতদের মূল্যায়ন কি সর্বস্তরে সর্বাগ্রে প্রয়োজন নয়? জাতির প্রকৃত জাগরণ, ন্যায্য বিবেকের দৃঢ়তা, সত্য ও সুন্দরকে প্রতিষ্ঠা করা, বিশ্ব দরবারে নিজেদের উচ্চ আসন তৈরি কোনোদিনও সম্ভব নয়, যদি শিক্ষার যথাযথ কদর না হয়। শিক্ষিতজনরা অগ্রাহ্য হতে থাকলে কিংবা বর্তমান ধারায় সমাজ চলতে থাকলে অন্ধকারকেই এ প্রজন্ম চলার পথ মনে করবে। আর আলো দেখলে ভয়ে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানাবে কিংবা নাক ছিটকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে থাকবে।
মানুষের অর্থের প্রয়োজন আছে—এ কথা অস্বীকার করার শক্তি কারো নেই। তাই বলে কেবল অর্থকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে শিক্ষা ও শিক্ষিতজনকে নানা উপায়ে পরোক্ষভাবে আমরা রীতিমত অবমূল্যায়ন করছি কোথাও কোথাও। এর ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে জাতির আগামী স্বপ্ন কোনোদিনও পূরণ হবে বলে মনে হয় না। ‘পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন’—পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল-কোরআন সৃষ্টির সর্বপ্রথম নাজিলকৃত আয়াতটিই বলে দেয় শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আসলে কতটুকু! নিরক্ষতার মতো নারকীয় অভিশাপ থেকে সর্বস্তরে মুক্ত থাকতে সর্বাগ্রে আমাদের শিক্ষার মূল্যায়ন ও বাস্তবায়ন আনতেই হবে। জাতিকে প্রকৃত অর্থে উন্নতির শিখরে নিতে হলে এর বাস্তবায়ন সর্বাগ্রেই দরকার। এর যে কোনো বিকল্প নেই।
লেখক: কবি ও কথাশিল্পী।
এসইউ/এএসএম