বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের লামচরি গ্ৰামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ভেঙে আলিশান বাড়ি করেছে বরাদ্দ পাওয়া একটি পরিবার। সেই বাড়ি উদ্বোধনের সময় মিলাদে গরু জবাই করে ৩০০ লোককে ভুরিভোজ করানো হয়েছে। যা নিয়ে পুরো গ্ৰামজুড়ে ব্যাপক আলোড়নের সৃষ্টি হয়।
Advertisement
সরেজমিনে সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের লামচরি গাজীর খেয়াঘাট আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্প-১ এর আওতায় বরিশালে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য ৬০টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে একটি ঘর বরাদ্দ পান নগরীর ১০নং ওয়ার্ড কেডিসি কলোনিতে বসবাসরত নাজমা বেগম ও বাবু দম্পতি। তারা সেই ঘর ভেঙে নির্মাণ করেছেন আলিশান এক বাড়ি। তাদের ঘরের মধ্যে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে সব নান্দনিক ডিজাইনের ফার্নিচার, বিশালাকার এলইডি টিভি ও দামি সব তৈজসপত্র। তার ঠিক বিপরীত পাশেই আরও একটি দালান নির্মাণ করেছেন আশ্রয়ণের ঘর বরাদ্দ পাওয়া একটি পরিবার।
লামচরি গাজীর খেয়াঘাট আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নাজমা-বাবু দম্পতি নিজেদের অস্বচ্ছল দেখিয়ে তৎকালীন সময়ে এই ঘর বরাদ্দ নেন। পরে চলতি বছরের শুরুতে সেই ঘর ভেঙে প্রায় ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেছেন আলিশান এক বাড়ি। যা উদ্বোধন করার সময়ে দোয়ার আয়োজন করা হয়। মিলাদে একটি গরু কেটে ৩০০ লোকের জন্য আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়।
লামচরি গাজীর খেয়াঘাট আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা রাকিবুল ইসলাম বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো মূলত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য। কিন্তু নাজমা-বাবু দম্পতি আশ্রয়ণের ঘর ভেঙে যে ঘর নির্মাণ করেছেন তা বর্তমান সময়ে কোনো স্বচ্ছল পরিবারের পক্ষেও সম্ভব নয়। তারা এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ পাওয়ার উপযুক্ত না। তারপরও কীভাবে এই ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন তা তারাই ভালো বলতে পারবেন।
Advertisement
আশ্রয়ণ প্রকল্পের আরেক বাসিন্দা ফাতেমা বলেন, নাজমা-বাবু দম্পতি কোনোভাবেই এই ঘর বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না, তারা আগে থেকেই ধনী। তারপরও তারা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া ঘর নিয়েছেন। তাছাড়া প্রতিটি পরিবারের জন্য একেকটি ঘরে ২ শতাংশ জমি বরাদ্দ থাকলেও তারা প্রায় ৫ শতাংশ জমির ওপর ঘর নির্মাণ করেছেন। যা তারা ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে গড়েছেন।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের একাধিক বাসিন্দা জানান, চলতি বছরের শুরুতে নাজমা-বাবু দম্পতির নির্মাণাধীন বাড়ি উদ্বোধনের সময় পুরো গ্ৰামের মানুষকে দাওয়াত দেওয়া হয়। এতে বিশালাকার একটি গরু কেটে ৩০০ লোককে ভুরিভোজ করানো হয়। যা একটি বিয়ের আয়োজনকেও হার মানিয়েছে।
এসব বিষয়ে নিয়ে আলাপ করলে নাজমা বেগম বলেন, সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় পৌনে চার শতাংশ জমিসহ ঘর দিয়েছে। কিন্তু যে ঘর দিয়েছে, তা থাকার উপযুক্ত ছিল না। তাই নিজেদের মতো করে করেছি।
নাজমা বেগমের স্বামী বাবু বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোর মান খুবই খারাপ ছিল। তাই নিজেদের কিছু জমানো টাকা ছিল তা দিয়ে ঘর ভেঙে দালান করেছি। এছাড়া ঘর উদ্বোধনের সময় দোয়া ও মিলাদের আয়োজন করেছিলাম। পরে স্থানীয় লোকজনের অনুরোধে গরু জবাই করে খাওয়ানো হয়েছে।
Advertisement
এ ব্যাপারে আশ্রয়ণ প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুব উল্লাহ মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, এটা আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রথম দিকের ঘর। কিন্তু এসব ঘরের কাঠামো পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। যদি আশ্রয়নের ঘর ভেঙে দালান করে থাকে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এফএ/এএসএম