বিনোদন

হুমায়ূন ভাই বললেন, ফারুক এটাও জীবনের একটা অভিজ্ঞতা

আজ (১৩ নভেম্বর) নন্দিত কথাসাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন। তার অনেক নাটক ও সিনেমায় অভিনয় করেছেন ফারুক আহমেদ। নির্মাতার জন্মদিন উপলক্ষে তার সঙ্গে বিভিন্ন সময়ের স্মৃতিচারণ করেছেন এই অভিনেতা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান মিথুন।

Advertisement

জাগো নিউজ: কেমন আছেন?ফারুক আহমেদ: সব মিলিয়ে বেশ আছি। অভিনয় এবং লেখালেখিতে ব্যস্ত দিন কাটছে। আসছে একুশে বইমেলায় আমার একটি বই প্রকাশিত হবে। বইটির নাম ‘আমার না বলা কথা’। প্রকাশনা সংস্থা কিংবদন্তি থেকে এটি প্রকাশিত হবে। এখন বইটি লেখার কাজে মগ্ন।

জাগো নিউজ: আপনার জীবনের বিশাল একটি অংশজুড়ে রয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ। বইটিতে তার সম্পর্কেও অজানা কিছু থাকবে? ফারুক আহমেদ: বইটিতে হুমায়ূন ভাইয়ের সঙ্গে ‘শ্যামল ছায়া’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়ের স্মৃতিকথা থাকবে। এই সিনেমার শুটিংয়ের একটি বড় অংশ শীতলক্ষ্যা নদীতে হয়েছে। নদীতে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকার ছইয়ের ওপর হাল ধরে থাকতাম আমি। আর ডাক্তার এজাজ (অভিনেতা এজাজুল ইসলাম) ছইয়ের নিচে নৌকার ইঞ্জিন চালাতো। হুমায়ূন ভাই নিজেই আমাকে এই চরিত্রটি দিয়েছিলেন। আমি তাকে বললাম, আমি কেমন করে এত বড় নৌকা চালাবো? তিনি আমাকে বললেন, তুমি নৌকা চালানো শিখে নাও। একজন মাঝি ঠিক করে দিচ্ছি, তুমি তার কাছ থেকে শিখে নেবে।

জাগো নিউজ: আপনি কি শিখতে পেরেছিলেন?ফারুক আহমেদ: নৌকাটি ছিল অনেক বড়। নৌকার হাল ছিল অনেক বড়। এটি চালানো শিখতে আমার প্রায় তিন-চারদিন লেগেছে। যদিও আমি ছোট নৌকা চালাতে পারি। কিন্তু ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকা চালাতে সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগে না। সিনেমার শুটিংয়ের জন্য ব্যবহৃত সেই ইঞ্জিনচালিত নৌকায় একটি ঘণ্টি ছিল। যার সংকেতের মাধ্যমে ছইয়ের নিচে এজাজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ঘণ্টির সঙ্গে লাগানো সুতা ধরে টান দিলে এটি বেজে উঠবে। আমি ঘণ্টি বাজিয়ে সংতেক দিলে এজাজ ইঞ্জিনের পাওয়ার বাড়াবে বা কমাবে। নৌকা চালাতে গিয়ে আমি একবার ঘণ্টিতে ভুল সংকেত দিলাম। মানে নৌকার ইঞ্জিন চালাতে হবে আস্তে। কিন্তু ভুলক্রমে ইঞ্জিন জোরে চালানোর সংকেত দিলাম। এতে নৌকার গতি প্রচণ্ড বেড়ে গেল। নৌকাটি ঘাটে গিয়ে জোরে ধাক্কা লাগলো। শুধু তাই না, নৌকা ফুটো হয়ে গিয়েছিল। নৌকায় পানি উঠে গিয়েছিল। আমরা শুটিং ইউনিটের অনেকেই সে সেময় নৌকার ভেতরে ছিলাম। আমরা কোনো রকম কূলে উঠলাম ক্যামেরা নিয়ে। এরপর নৌকাও ডুবে গেল। এই শুটিংয়ে আমাদের সঙ্গে থার্টি ফাইভ ক্যামেরা ছিল। সে সময় এ ক্যামেরার দাম ছিল আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা। এ ঘটনায় আমি সত্যিই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।

Advertisement

জাগো নিউজ: ক্যামেরার ক্ষতি হয়েছিল?ফারুক আহমেদ: ক্যামেরার কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে মনে করেছিলাম, আমি নৌকা চালাতে গিয়ে ভুল সংকেত দিয়েছি বলে হুমায়ূন ভাই আমার ওপর প্রচণ্ড রেগে যাবেন। বকা দেবেন। কিন্তু এই ঘটনা দেখে তিনি হাসলেন। তিনি আমাকে বললেন, ফারুক, এটাও জীবনের একটা অভিজ্ঞতা। এটা তুমি ভুলতে পারবে না। ‘শ্যামল ছায়া’ দেখার সময় এ ঘটনার কথা আমাদের সবার মনে পড়ে। ঘটনাটি ঘটেছিল বিকেলের দিকে। কয়েকদিন পর ৫০-৬০ জন লোক এনে সেই নৌকা কূলে ওঠানো হয়। দুদিন শুটিং বন্ধ ছিল। সেটি মেরামত করে আবারও শুটিং শুরু করতে হয়। সেখানে আমরা প্রায় একমাস শুটিং করেছি।

আরও পড়ুন:

আট ঘণ্টা চেষ্টা করে বৃদ্ধ হলেন ফারুক আহমেদ! যে নেশায় ডুবে ছিলেন অভিনেতা ফারুক আহমেদ

জাগো নিউজ: হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে এসব স্মৃতি নিশ্চয়ই আপনার কাছে অনেক মূল্যবান?ফারুক আহমেদ: অবশ্যই। হুমায়ূন ভাইকে নিয়ে কিছু বলতে গেলে বুকটা ভারি হয়ে আসে। তিনি আমাদের মাঝে নেই ভাবতে পারি না। তিনি আমাদের বটবৃক্ষের মতো ছিলেন। বটগাছ ঝড়ে ভেঙে গেলে যা হয়, আমাদের এখন সেই অবস্থা। আমি তাকে প্রতিনিয়ত স্মরণ করি। তার জন্মদিনে একটা প্রত্যাশা, তিনি যেখানে থাকুন, ভালো থাকুন। তার স্মৃতির প্রতি রইলো গভীর শ্রদ্ধা।

এমএমএফ/আরএমডি/এমএস

Advertisement