খেলাধুলা

আফগানিস্তানের কাছে কেন এমন সিরিজ হার

হতাশা দিয়ে শুরু। হতাশা দিয়েই শেষ। তবে মাঝখানে সম্ভাবনার সূর্য উঁকিঝুকি দিচ্ছিল। কিন্তু সেটা শেষ পর্যন্ত কালো মেঘে ঢেকে গেলো।

Advertisement

আফগানদের বিপক্ষে সিরিজ বিজয়ের সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারলো না বাংলাদেশ।

শেষ ম্যাচে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে হারলো ৫ উইকেটে। সেই সঙ্গে সিরিজও হলো হাতছাড়া। ২-১ ব্যবধানে সিরিজের ট্রফি নিজেদের করে নিলো আফগানরা।

আফগানিস্তানও এখন বলেকয়ে বাংলাদেশকে হারিয়ে দিচ্ছে। সিরিজ শেষে একটা চাপা হতাশা ও ক্ষোভ কাজ করছে ভক্ত ও সমর্থকদের মনে। সেটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের পছন্দের ফরম্যাট ওয়ানডে, তাতে কিনা আফগানদের কাছে এভাবে নাকাল হতে হলো! কেন এমন খেললো বাংলাদেশ? তা নিয়ে চলছে আলোচনা-পর্যালোচনা, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল আফগানিস্তানের সাথে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের চুলচেরা বিশ্লেষণের পাশাপাশি পুরো সিরিজটির পোস্টমর্টেম করেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপে। আশরাফুলের মূল্যায়ন অবশ্য ইতিবাচক। তার মতে, সামগ্রিক বিচারে বাংলাদেশ খারাপ খেলেনি। দল সিরিজও জিততে পারতো।

Advertisement

আশরাফুলের কথা, ‘সামগ্রিকভাবে ওরাও (আফগানিস্তান) ভালো খেলেছে। তারপরও আমি বলবো, ৭ মাস যেভাবে টি-টোয়েন্টি আর টেস্টে আমরা ব্যতিব্যস্ত ছিলাম, সেই অনুযায়ী খারাপ খেলেনি আমাদের দল। আফগানিস্তান তো ভালো দল। কঠিন প্রতিপক্ষ। সেই অনুযায়ী আমরা খারাপ খেলিনি।’

আশরাফুল মনে করেন, আফগানিস্তানের সাথে ওয়ানডে সিরিজ খেলার আগে অন্তত গোটা দুয়েক প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলা উচিত ছিল টাইগারদের।

এ ব্যাপারে তার ব্যাখ্যা, ‘আমরা শেষ ৭ মাস ওয়ানডে খেলিনি। এই সময়ের পুরোটা আমরা ব্যস্ত ছিলাম টি-টোয়েন্টি আর টেস্ট নিয়ে। জানি অনেকেই বলবেন, আমরা তো এই সময় ক্রিকেটের ভেতরেই ছিলাম। হয়তো ওয়ানডে খেলিনি, এই যা। কিন্তু আমার মনে হয় এই সিরিজ শুরুর আগে অন্তত গোটা দুয়েক প্রস্তুতি ম্যাচের ব্যবস্থা করতে পারলে ভালো হতো। জানি এখন ক্রিকেটারদের যে ব্যস্ত সূচি, তাতে তাদের জন্য সময় বের করাও কঠিন। তারপরও প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে পারলে ভালো হতো। যে ফরম্যাটে খেলবেন, সেই ফরম্যাটে একটা-দুটো প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে পারলে নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য সম্পর্কে ধারণা পরিষ্কার হয়।’

সিরিজের ৩ ম্যাচের পোস্টমর্টেম করতে গিয়ে আশরাফুল বলেন, ‘আমাদের প্রথম ম্যাচে সুবর্ণ সুযোগ ছিল আফগানদের অনেক কম রানে বেঁধে ফেলার। আমরা ব্যাটিং ও বোলিং দুই বিভাগেই শুরুটা ভালো করেছিলাম। বোলিংয়ে আফগানদের ৩০+ রানে ৪ উইকেট ফেলে দিয়েও আটকে রাখতে পারিনি। তারা পরের ৬ উইকেটে ২০০ রান করে ফেলে। আমাদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৩৫। যেটা অনেক কম হতে পারতো, যদি আমরা আফগান মিডল ও লেট অর্ডারকে চট জলদি সাজঘরে ফেরাতে পারতাম।’

Advertisement

বাংলাদেশের ব্যাটিং ধস নিয়ে আশরাফুলের কথা, ‘১২০ রানে ২ থেকে ১৪৩ রানে অলআউট হয়ে যাবে দল, এটা কেউ কল্পনাও করিনি। তবে এটা কিন্তু হয়। হয় না যে তা নয়। ভালো বোলিংয়ের বিপক্ষে এমন মড়ক লাগতেই পারে। অনেক সময় এমন হয়। যেহেতু গজনফারের বল কেউ দেখেইনি। তাই তার বোলিং সম্পর্কে আসলে কোনো ধারণা ছিলনা। মুশফিক ভেবেছে বল ভেতরে আসবে। বল বেরিয়ে গেছে। এরপর রিশাদ এলবিডব্লিউ হয়েছে। এটা হতেই পারে।’

প্রথম ম্যাচের হতাশাজনক পরাজয়ের পরও আশরাফুলের মনে হয়েছে, ভালো খেলতে পারলে আফগানিস্তানকে হারানো সম্ভব। তার ব্যাখ্যা, দ্বিতীয় ম্যাচে আমরা ভালো খেলেছি, তাই জিতেছি।

শেষ ম্যাচ জিততে না পারার কারণ ব্যাখ্যা করে আশরাফুল জানান, ‘পুঁজি (২৪৫) কম হওয়াই হারের মূল কারণ। আমাদের আরও বেশি রান করার সুযোগ ছিল। কারণ উইকেট ভালো ছিল। যদিও আমরা অল্প সময়ে ৪ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিলাম। তারপরও সুযোগ ছিল ইনিংসটাকে বড় করার। ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর মিরাজ আর মাহমুদউল্লাহ ১৪৫ রানের জুটি করেছে, ওই জায়গায় আরও বেশি রান হলে ভালো হতো। সেটা মিসিং ছিল। শেষ দিকেও আমরা আরও একটু হাত খুলে খেলে ১৫-২০টা রান বেশি করতে পারতাম। তাও পারিনি। বোলিংয়ে স্টাম্পিং-ক্যাচ অপরচ্যুনিটি মিস করেছি। গুরবাজের ২৪ রানে পয়েন্টে ক্যাচ মিস হয়েছে। কিপার জাকের আলীও স্টাম্পিং চান্স মিস করলো। এগুলো করতে পারলে হয়তো ম্যাচটা জেতা যেতো।’

এআরবি/এমএমআর/এমএস