দেশজুড়ে

দাবদাহে পুড়ছে যশোরাঞ্চলের পাটক্ষেত

দাবদাহ আর বৃষ্টিহীনতায় পুড়ছে যশোরাঞ্চলের পাটক্ষেত। বৈশাখের তপ্ত রোদে তাই পাটক্ষেত নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। পাটের জমিতে ঘন ঘন সেচ দেয়ায় যেমন উৎপাদন খরচ বাড়ছে, তেমনি প্রচণ্ড খরায় জমির আগাছা পরিস্কার করতে পারছেন না কৃষকরা। এমনটা চলতে থাকলে উৎপাদন অনেকটা হুমকির মুখে পড়বে বলেও আশঙ্কা কৃষকদের। চাষিরা জানিয়েছেন, অনেক স্থানে তীব্র দাবদাহে পাট গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। ঘন ঘন সেচ দিয়েও তারা গাছের আশানুরূপ পরিবর্তন আনতে পারছেন না। যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার ধলগ্রাম ইউনিয়নের মানিকদহ গ্রামের কৃষক হরিচাঁদ বিশ্বাস এ বছর দুই একর জমিতে পাট চাষ করেছেন। তিনি জানান, অনাবৃষ্টির কারণে এবার ঘন ঘন সেচ দিতে হচ্ছে। তারপরও পাট গাছ বাড়ছে না। পাট গাছের বৃদ্ধি দ্রুত না হওয়ায় জমিতে আগাছার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্বিগুন হারে। এদিকে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে সকলেই ব্যস্ত। এ কারণে পাটের জমিতে কাজ করানোর জন্য কৃষি শ্রমিকদের মজুরিও বেড়ে গেছে। একই উপজেলার ভুলবাড়িয়া গ্রামের কৃষক সুজিত বিশ্বাস বলেন, ধান গোছানোর ব্যস্ততায় পাটের খবর নিতে পারছি না। আবহাওয়া  আর কয়েকদিন এরকম থাকলে জমিতে যাওয়া লাগবে না। সব পাট গাছই মরে যাবে। শার্শা উপজেলার শালকোনা গ্রামের বাবুল আক্তার বলেন, গত এক মাস ধরে যশোরে তীব্র দাবদাহ চলছে। মাঝে একদিন ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে কিছুটা বৃষ্টি হলেও এখন ফের রোদের তাপ। এতে করে তার এলাকার ক্ষেতের পাটগাছ মরে যাচ্ছে।কৃষি বিভাগ যশোরের অতিরিক্ত পরিচালক নিত্য রঞ্জন জানান, বর্তমানে যে তাপমাত্রা বিরাজমান তাতে পাট গাছে মাইট (মাকড়) এর উপদ্রব বেড়ে যাবে। ফলে পাটের কচি পাতা কুকড়ে যাবে। গাছ ও পাতার বৃদ্ধি ব্যাহত হবে। জমিতে খাদ্য থাকা সত্ত্বেও পাট গাছ তা গ্রহণ করতে পারবে না। তিনি আরো বলেন, এছাড়া ঘোড়া পোকার আক্রমণও বেড়ে যাবে। যেসব জমি সেচের আওতার বাইরে সে সব জমিতে পাটের ফলন কমে যাবে। অনেক কৃষক তপ্ত রোদে পাটের জমিতে সেচ দিচ্ছেন। এতে ভাল হওয়ার বদলে ক্ষতিই বেশি হচ্ছে। এ অবস্থায় তিনি কৃষকদের সন্ধ্যার পর জমিতে সেচ দেয়ার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। মাইট এর জন্য মকড় নাশক ও ঘোড়া পোকার জন্য কীটনাশক স্প্রে করার পরামর্শও দেন তিনি।  কৃষি সম্প্রসারণ যশোরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কামরুজ্জামান জানান, এ অঞ্চলের ৬ জেলায় এবার এক লাখ ৬০ হাজার ৪১৬ হেক্টর জমিতে পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কুষ্টিয়ায় ৩৭ হাজার ৫২০ হেক্টর। আর সবচেয়ে কম চুয়াডাঙ্গায় ১৮ হাজার ৫৭০ হেক্টর। এছাড়া যশোর জেলায় ২৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমি, ঝিনাইদহে ২০ হাজার ৫১১ হেক্টর, মাগুরায় ৩৩ হাজার ৫৯০ হেক্টর ও মেহেরপুরে ২৩ হাজার ৭২৫ হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে অধিকাংশ জমিতে বপন কাজ শেষ হয়েছে এবং অনেক স্থানে চারা বড় হয়ে গেছে। গতবছর পাটের মূল্য ভাল পাওয়ায় কৃষকরাও এবার বেশি জমিতে পাট চাষ করেছেন।এফএ/পিআর

Advertisement