রাজধানী ঢাকার প্রবেশদ্বার খ্যাত মহানগরীর চন্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কে চলছে না কোনো গণপরিবহন ও পণ্যবাহী যানবাহন। চরম ভোগান্তি আর নানা দুর্ভোগ নিয়ে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে শত শত মানুষ হেঁটে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী হয়ে ঢাকার দিকে ফিরছেন।
Advertisement
একইভাবে যারা ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধাসহ উত্তরাঞ্চলে যাচ্ছেন তারা গাজীপুর চৌরাস্তা বাদ দিয়ে বিকল্প পথে গন্তব্যের দিকে রওয়ানা হয়েছেন।
আর সকালে যারা এই পথ দিয়ে উত্তরাঞ্চলে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছেন তারা হেঁটে এবং নানা ঝক্কিঝামেলা করে গাজীপুর চৌরাস্তায় এসে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হচ্ছেন।
দুদিন ধরে বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবিতে গাজীপুর মহানগরীর মালেকের বাড়ি এলাকায় টিঅ্যান্ডজেড গ্রুপের শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় যানজট তৈরি হয়েছে। তৈরি হয়েছে জনদুর্ভোগ।
Advertisement
রোববার (১০ নভেম্বর) দুপুরে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ইব্রাহিম খান জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হওয়া শ্রমিক আন্দোলন রাতভর চলে। টানা প্রায় ২৮ ঘণ্টা মহাসড়কে শ্রমিকরা অবস্থান করে অবরোধ তৈরি করে রেখেছে। এ কারণে মহাসড়কের উভয় পাশে টঙ্গী থেকে রাজেন্দ্রপুর পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন, যানজটে আটকা পড়ে মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীরা বিকল্প পথে চলাচল করছে।
এছাড়া গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে বিকল্প সড়ক ব্যবহারে অনুরোধ করে একটি ট্রাফিক আপডেট দেওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আন্দোলনকারী শ্রমিকদের সঙ্গে লাঠিসোঁটা হাতে কিছু বহিরাগত যোগ দিয়েছে। শ্রমিকদের অবরোধের জায়গার উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। যানজটে আটকা পড়া যানবাহনের মধ্যে বেশিরভাগই অন্য পরিবহন ও জাতীয় পরিবহনের গাড়ি। এসব গাড়ি গত রাতে যাত্রা করে যানজটে আটকা পড়ায় আর কোনো দিকে যেতে পারেনি। আটকে পড়া পণ্যবাহী যানবাহনের মধ্যে পচনশীল পণ্য রয়েছে। যাত্রীবাহী অনেক বাস থেকে যাত্রীরা নেমে হেঁটে বা বিকল্প উপায়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।
Advertisement
চন্দনা চৌরাস্তা এলাকায় পরিবহন শ্রমিক সাইফুল ইসলাম বলেন, শনিবার সকাল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক শ্রমিকরা অবরোধ করে রাখায় রাতে বিকল্প পথে একটি ট্রিপ পরিচালনা করলেও আজ বিকল্প পথগুলোয়ও যানজটের সৃষ্টি হয়। যার কারণে ঢাকার দিকে যেতে পারছি না।
মহাসড়কে অনেক ব্যক্তিগত যানবাহন যানজটের কারণে আটকা পড়ে আছে। যানবাহনগুলোর মালিক বিকল্প উপায়ে গন্তব্যে চলে গেলেও চালকসহ গাড়িটি রেখে গেছেন সড়কে। নিরুপায় হয়ে চালক অধীর আগ্রহে বসে আছেন কখন অবরোধ তুলে নেবে শ্রমিকরা।
এদিকে শ্রমিক আন্দোলনে যানজটের কারণে মহাসড়কে দূরপাল্লার যানবাহন কম চলাচল করছে। স্বল্প দূরত্বের লোকাল পরিবহন চলাচল করলেও অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।
সকাল থেকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করলে শ্রমিকরা তাদের বকেয়া বেতন দাবি করে। তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত মহাসড়ক থেকে সরে যাবে না বলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সাফ জানিয়ে দেন।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ইব্রাহিম খান জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবরোধ প্রত্যাহার করলেই যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হবে।
তবে বিকল্প পথে ঢাকা বাইপাস হয়ে অনেক যাত্রীবাহী বাস এবং পণ্যবাহী যানবাহন ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া টঙ্গী স্টেশন রোড বনমালা হয়ে জয়দেবপুর শহর দিয়েও কিছু যানবাহন ঢাকা থেকে আসা-যাওয়া করছে।
এদিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক বন্ধ থাকায় শহরের বিকল্প রাস্তাগুলোতে বড় বড় বাস-ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান প্রবেশ করায় ওই এলাকাগুলোতেও ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।
আমিনুল ইসলাম/এফএ/এমএস