পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ২২ বছর পরও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত বরিশাল সিটির ১নং ওয়ার্ডের পশ্চিম কাউনিয়া লাকুটিয়া খাল পাড়ের ১৪৭টি পরিবার। ভাঙা বাঁশের সাঁকো, জলাবদ্ধতা, দূষিত পানি, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ আর জনদুর্ভোগ যেন নিত্যদিনের সঙ্গী এখানকার বাসিন্দাদের।
Advertisement
একের পর এক জনপ্রতিনিধি আসলে গেলেও ন্যূনতম নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পায়নি লাকুটিয়া খাল পাড়ের ১৪৭টি পরিবারের ৬ শতাধিক মানুষ। সিটি করপোরেশন এলাকায় থাকার সুবাদে তারা নিয়মিত ট্যাক্স পরিশোধ করলেও কোনো সুবিধা পান না বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
সরেজমিনে নগরীর ১নং ওয়ার্ডের পশ্চিম কাউনিয়া লাকুটিয়া খাল পাড় ঘুরে দেখা যায়, এই ১৪৭টি পরিবারের চলাচলের একমাত্র পথ একটি ভাঙা বাঁশের সাঁকো। সাঁকো পার হয়ে ভেতরে গিয়ে দেখা যায় বিসিক শিল্প নগরীর দেওয়াল ঘেঁষা খালের পাড়ে ১৪৭টি পরিবারের জন্য সরু একটি রাস্তা। আবার রাস্তার পাশে অর্ধেক জায়গায় বসে রান্না করছেন মহিলারা।
তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘ ২০ বছরের বেশি সময় ধরে তারা সেখানে বসবাস করলেও কোনো নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না।
Advertisement
সন্তান, পূত্রবধূ ও নাতি নাতনি নিয়ে বসবাস করা ষাটোর্ধ্ব সুফিয়া বেগম বলেন, ‘মেয়র-কমিশনার আয় আর যায়, কিন্তু এই এলাকার কোনো উন্নয়ন হয় না। ভোট আইলে হেরা খালি প্রতিশ্রুতি দেয়, ভোট গেলে আর কোনো খবর থাহে না। কেমনে এই জায়গায় থাহি হে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। একটু বৃষ্টি হইলেই খালের ময়লা পানি সব ঘরের মধ্যে ঢোকে। তহন গুরাগারা লইয়া খাডের উফর বইয়া থাহোন ছাড়া আর উপায় থাহে না।’
আরেক বাসিন্দা নার্গিস আক্তার বলেন, প্রায় ৬০০ লোকজনের বেশি মানুষ এই ভাঙা বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করে। মেয়র-কমিশনাররা খালি আশার বাণী শুনিয়ে যায়, কিন্তু আমাগো চলাচলের পথটা কেউ ঠিক করে দেয় না। কতজন আইলো আর গেলো। কিন্তু এই বাঁশের সাঁকোটা কেউ ঠিক করে দেয় নাই। তাছাড়া এখানে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার কোনো ব্যবস্থা নেই। মাঝে মাঝে দু’একটি এনজিও থেকে শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সাথী জানায়, এখানে শতাধিক কিশোরী রয়েছে, কিন্তু তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য কোনো ধরনের সহায়তা পাওয়া যায় না। মাঝে মাঝে দু’একটি এনজিও থেকে এসে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী দিয়ে যায়। এছাড়া এখানে একটি এনজিওর মাধ্যমে শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আভাস’র নির্বাহী পরিচালক রহিমা সুলতানা কাজল জাগো নিউজকে বলেন, এই জনগোষ্ঠীর পাশে সিটি করপোরেশনের দাঁড়ানো উচিত। কিন্তু তারা তেমন কোনো সহায়তা করে না। আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রোজেক্টের মাধ্যমে শিশু ও নারীদের সাহায্য সহযোগিতা করে থাকি। পিছিয়ে পড়া এসব জনগোষ্ঠীর জন্য সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার পাশে দাঁড়ানো উচিত।
Advertisement
এ ব্যাপারে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল বারী জাগো নিউজকে বলেন, আমরা যতটুকু খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি তারা এখনো সিটি করপোরেশনের ট্যাক্সের আওতায় আসেনি। যদি তারা ট্যাক্সের আওতায় আসে তাহলে তাদের সকল ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।
এফএ/জেআইএম