তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পর শেষ ধাক্কায় শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
Advertisement
তিনি বলেন, এখন অনেক গল্প শুনছি, শেখ হাসিনার পতনের গল্পের শেষ নেই। প্রতিদিন নতুন নতুন গল্প শুনছি। ওরা নাকি এটা করেছে, সেটা করেছে। ১৫ বছর যখন আমরা রাস্তায় আন্দোলন করেছি, জীবন দিয়েছি, গুম-হত্যার শিকার হয়েছি, জেলে গিয়েছি বারবার, তখন তো এসব গল্প শুনিনি। তখন তো আমাদের সঙ্গে কেউ আসেনি।
শনিবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউরী আলমাস সিনেমা মোড়ে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত র্যালিপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আমীর খসরু বলেন, ঢাকায় গুলি করে বিএনপির সমাবেশ পণ্ড করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনার সেই আশা তারেক রহমানের নেতৃত্বের গুণের কারণে সফল হয়নি। তারেক রহমানের নেতৃত্বে সমস্ত দেশ ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কারণে শেষ ধাক্কা যখন দিয়েছে, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন। সেই পটভূমি সৃষ্টি না হলে, সেই অবস্থা সৃষ্টি না হলে শেখ হাসিনাকে ধাক্কা দিয়ে সরানোর সুযোগ ছিল না।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার সহযোগিতায়, সক্রিয় অংশগ্রহণে বাংলাদেশের মানুষ জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেছিলেন। বাংলাদেশে এক নতুন ঐক্য সৃষ্টি হয়েছে ৭ নভেম্বর। শেখ মুজিবুর রহমান, বাকশাল, আওয়ামী লীগ, ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ মুক্তির স্বাদ পেয়েছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে, খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে দিয়ে, বিএনপির সাত লাখের অধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে নিপীড়ন, নির্যাতন, খুন, গুম, হত্যা, জেলহত্যা, পুলিশের হেফাজতে হত্যা, এর মাধ্যমে সেদিন বাংলাদেশে আবারও একটি নিরাপত্তাহীন জনগণের জন্য পরাধীন জাতি সৃষ্টি করেছিল। সেখানে আবারও খালেদা জিয়া রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। এ কারণে তাকে জেলে যেতে হয়েছে, জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে, চিকিৎসা না দিয়ে তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, এরপরের আন্দোলন এবার তারেক রহমানের নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল সমস্ত দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। ছাত্র-জনতা ও সর্বস্তরের মানুষকে তারেক রহমানের নেতৃত্বে একটি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে আমরা শেখ হাসিনাকে মোটামুটি পরাস্থ করতে পেরেছিলাম।
তিনি আরও বলেন, যেই আন্দোলনকে নিজেদের জীবনের বিনিময়ে আমাদের নেতাকর্মীরা বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে, চাকরি হারাতে হয়েছে, ব্যবসা হারাতে হয়েছে, পঙ্গু হতে হয়েছে, জেলে যেতে হয়েছে। তোমরা কয়জন? সব হিসাব করলে কিন্তু অসুবিধা আছে! আমরা কিন্তু হিসাব করতে চাচ্ছি না। আমরা চাচ্ছিলাম, সবাই মিলে শেখ হাসিনাকে বিদায় করে দিতে। দেশ একটা গণতন্ত্রের অবস্থা ফিরিয়ে আনুক। গণতন্ত্রের মাধ্যমে দেশবাসী তাদের ভোটে যাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে, সংসদে যাবে, সরকারে যাবে, তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে, জবাবদিহি থাকবে। জবাবদিহিহীন কোনো সরকার বাংলাদেশের কল্যাণ করতে পারবে না।
Advertisement
আমীর খসরু বলেন, জনপ্রতিনিধিত্বহীন কোনো সরকার জনগণের কথা ও কষ্ট বুঝবে না। কারণ, বুঝতে হলে জনগণের কাছ যেতে হবে, পাশে থাকতে হবে, দুঃখ-দুর্দশা বুঝতে হবে। বিদ্যুতের বিল দিতে পারছে না, দুই বেলা খেতে পারছে না সেটা বুঝতে হবে।
তিনি বলেন, এখন বয়ান হচ্ছে, সংস্কারের বয়ান। আরে সংস্কার কি বিএনপির আগে আপনারা দিয়েছেন? ছয় বছর আগে খালেদা জিয়া বলেছিলেন। কারণ, আমরা জনগণের কথা বুঝেছি বলে দিয়েছি। এক বছর আগে তারেক রহমানের নেতৃত্ব আমরা সবাই একটি নতুন সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছি। ওই সংস্কারে সবকিছু আছে। কিছু বাকি নেই। আপনারা যা বলেছেন, তা-ও আছে, তার বাইরেও আছে। সংস্কারে আপনাদের চেয়ে আরও বেশি আছে।
তিনি বলেন, যে কয়েকটি সংস্কার, জাতীয় ঐকমত্যের পরিপ্রেক্ষিতে হবে সেগুলো সহসা করে ফেলুন। এরপর নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যান। যে সংস্কারে ঐকমত্য হবে না সেটা বাংলাদেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে আগামী দিনে। নির্বাচনের মাধ্যমে যে সংসদ হবে তারা ও সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। এর বাইরে অনির্বাচিত কারও কোনো অধিকার নেই। জাতীয় ঐক্যমতের পরিপ্রেক্ষিতে যতটুকু হবে সহসা সমাধান করে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
‘জাতি তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি দেখতে চায়। তাদের নির্বাচিত সরকার দেখতে চায়। এ কারণেই ঐক্য ঘটানো হয়েছে। আগে তো এক দফা ছিল না। কেন এক দফা জানেন? আমরা বলেছি, এক দফার মাধ্যমে শেখ হাসিনার যদি পতন না হয় তাহলে আপনারা যত দফা দেবেন কোনো দফা কাজে আসবে না। তারপর আপনারা এক দফায় আসছেন, আমরা সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে। এটাই সত্য, এটা বুঝুন।’
আমীর খসরু আরও বলেন, আমাদের ঐক্য নষ্ট করা যাবে না। আওয়ামী লীগ উঁকিঝুঁকি মারছে, ফ্যাসিস্টরা উঁকিঝুঁকি মারছে, এই ঐক্য ভাঙা যাবে না। তারেক রহমান যে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন তা অটুট থাকতে হবে। অটুট রেখে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দিকে যেতে হবে, নির্বাচনের দিকে যেতে, নির্বাচিত সরকারের দিকে যেতে হবে। যারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের পরিচালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক, কেন্দ্রীয় বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ভিপি হারুনুর রশীদ প্রমুখ।
এমডিআইএইচ/এমকেআর