২৫০ শয্যা পাবনা জেনারেল হাসপাতালের ইসিজি কক্ষ থেকে যন্ত্রাংশ জোরপূর্বক খুলে নিয়ে যাওয়া এবং ওই বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হত্যার হুমকির অভিযোগ উঠেছে দালাল চক্রের বিরুদ্ধে। এতে তিন দিন ধরে হাসপাতালে বন্ধ রয়েছে ইসিজি সেবা।
Advertisement
এ ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার (৯ নভেম্বর) সকালে হাসপাতাল চত্বরে মানববন্ধন করেছেন ইসিজি বিভাগসহ হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগও দিয়েছেন তারা।
দালালদের হয়রানি থেকে মুক্তি চেয়ে দেওয়া কয়েকটি অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, শুরু থেকেই পাবনা জেনারেল হাসপাতালে দালালের দৌরাত্ম অসহনীয়। আগে হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা ইসিজি সেবা ছিল না। ফলে এ টেস্টের নামে দালালরা রোগী ও তার স্বজনদের জিম্মি করে ৫০০-৭০০ টাকা আবার কখনো ১৫০০ টাকা করে বাগিয়ে নিতেন। কিন্তু বছরখানেক ধরে রাতদিন ২৪ ঘণ্টা মাত্র ৮০ টাকায় এ সেবা হাসপাতাল থেকে দেওয়া হচ্ছে। এতে তাদের বাণিজ্য বন্ধ হওয়ায় দফায় দফায় ইসিজি কক্ষ-২ থেকে ইসিজি মেশিন ছিনিয়ে নিয়েছেন তারা।
এ মেশিন দিয়ে তারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে রোগীদের পরীক্ষা করিয়ে ৫০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। এ কাজে বাধা দিলে বা আপত্তি জানালে দালাল চক্রের মূলহোতা সাদ্দাম প্রাণনাশের হুমকি দেন। ইসিজি রুমে চাকু নিয়ে ঢুকে আগে ভয়ভীতি দেখান এবং মেশিন নিয়ে যান। কখনো কখনো মেশিন না নিলেও পরীক্ষা বন্ধ করিয়ে রেখে নিজেদের বাণিজ্য পরিচালনা করেন। সবশেষ বুধবার (৬ নভেম্বর) রাত ১১টার দিকে আবার চাকু নিয়ে ইসিজি রুমে প্রবেশ করেন সাদ্দাম। পরে ইসিজি মেশিনের লিডসহ নানা যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে যান। এরপর থেকে ইসিজি বন্ধ রয়েছে।
Advertisement
সাদ্দাম ও তার সহযোগীরা হাসপাতালকে নিজেদের রাজত্বে পরিণত করেছেন বলে অভিযোগ করেন ইসিজি বিভাগের একাধিক কর্মী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, ‘হাসপাতালে আসা দরিদ্র রোগীদের চিকিৎসা সেবার ব্যয় কমাতে ২৪ ঘণ্টা ইসিজি সেবা চালু করে হাসপাতাল। কিন্তু এতে তাদের ব্যবসা বন্ধ হওয়ায় যান্ত্রিক ত্রুটি দেখিয়ে ইসিজি পরীক্ষা বন্ধ রাখতে বলেন। আবার মেশিন নিয়ে যেতে চান। তাদের এসব কাজে বাধা দিলে বা আপত্তি জানালে আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হন। আমাদের হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। এভাবে নিরাপত্তাহীনতায় আমরা কীভাবে রোগীদের সেবা দেবো?’
আরেকজন টেকনিশিয়ান বলেন, ‘ব্রিফকেসে মেশিন নিয়ে ঘুরে ঘুরে এরা পরীক্ষা করান। এভাবে রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেন। বেশিরভাগ পরীক্ষাই সঠিক হয় না। এতে টাকা অপচয়ের পাশাপাশি ভুল চিকিৎসায় রোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। এসব নিয়ে মাঝে মাঝে ঝামেলাও হয়। এরপরও তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলা যায় না। উল্টো তাদের সহযোগিতা না করলে ইদানীং চাকু দেখিয়ে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। এর আগেও অনেকবার ঘটিয়েছেন। আমরা হাসপাতালের ঊর্ধ্বতনদের জানিয়েছি। তাতেও কোনো সুরাহা হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যেন এই দালালদের কাছে অসহায়।’
এ ঘটনায় দালাল চক্রের মূলহোতা সাদ্দামের বিরুদ্ধে আইনগত সহায়তা চেয়ে পাবনা জেলা পুলিশকে চিঠি দিয়েছেন হাসপাতালের সহকারী পরিচালক রফিকুল হাসান।
Advertisement
তিনি বলেন, ‘দালালদের কাছে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। দিনে প্রচণ্ড কড়াকড়ি করায় রাতে তারা হাসপাতালে ঢুকে এসব অপকর্ম করে। আমরা একাধিকবার এ নিয়ে স্টেপ নিয়েছি, তাতে স্থায়ী কোনো ফল মেলেনি।’
রফিকুল হাসান বলেন, ‘এ ধরনের সমস্যা নিরসনে হাসপাতাল ক্যাম্পাসে একটি স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প প্রয়োজন। এটি সম্ভব হলে এদের দৌরাত্ম্য অনেকাংশেই কমে আসবে।’
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) কাজী শাহনেওয়াজ বলেন, শৃঙ্খলা রক্ষা বা হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তায় টহলসহ নানাভাবে পুলিশ কাজ করছে। পুলিশ সদর দপ্তরের অনুমোদন পেলে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প দেওয়া সম্ভব। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
এসআর/জিকেএস