নারায়ণগঞ্জে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই গুলিবিদ্ধ হন ফতুল্লার সস্তাপুর এলাকার বাসিন্দা রানা। গুলিতে তার নাড়িভুঁড়ি ছিঁড়ে যায়। পরে দুই দফা অস্ত্রোপচার করলেও আজও তিনি সুস্থ হননি। যন্ত্রণায় প্রতিনিয়ত কাতরাচ্ছেন তিনি।
Advertisement
রানা বিয়ে করলেও স্ত্রী ছেড়ে চলে গেছেন অনেক আগেই। গার্মেন্টস কর্মী তার ছোট বোন মাঝে মাঝে সাধ্যমতো সহযোগিতা করে থাকেন। কিন্তু এ টাকায় তার পরিপূর্ণ চিকিৎসা হচ্ছে না। একটি গ্যারেজে দিন কাটছে তার।
রানার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১৯ জুলাই আন্দোলন চলাকালে অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি শামীম ওসমান ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। এসময় গুলিবিদ্ধ হন রানা। পরে ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক এস কে শাহীন তাকে উদ্বার করে খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কয়েকদিনের চিকিৎসার পর জানা যায়, তার নাড়িভুঁড়ি ছিঁড়ে গেছে, তার অস্ত্রোপচার করা লাগবে। পরে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা শাহীনের সহযোগিতায় তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে সেখানে অস্ত্রপাচার করা হয়। সেখানে চিকিৎসা নেওয়ার কিছুদিন পর তার শারীরিক অবস্থার আবার অবনতি হয়। পরে ভর্তি করা হয় খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালে।
সেখানে কোনোরকম চিকিৎসা শেষে তাকে আবার ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। বর্তমানে শাহীনের গ্যারেজের এক কোণে নিঃসঙ্গ দিন কাটছে তার। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই। স্ত্রী অনেক আগেই ছেড়ে চলে গেছেন। গার্মেন্টস কর্মী বোন আর ভাই মাঝেমধ্যে যোগাযোগ করেন। তবে তাদেরও তেমন সাধ্য নেই।
Advertisement
রানা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আন্দোলন চলাকালীন শামীম ওসমানের গুলিতে আমি আহত হয়েছি। এ পর্যন্ত অনেক টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু কোথাও থেকে তেমন কোনো সহযোগিত পাইনি। শুধু শুনি সহযোগিতা করা হচ্ছে। কিন্তু আমাকে একমাত্র শাহীন ভাই ছাড়া আর কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা কোনো ব্যক্তি সহযোগিতা করেনি। আমি গরিব মানুষ। টাকার ব্যবস্থা হলে পরিপূর্ণ চিকিৎসা পেতাম।’
রানাকে নিজ গ্যারেজে আশ্রয় দেওয়া ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক এসকে শাহীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘রানা আমার সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক দলের ব্যানারে সব মিছিলে যোগ দিতো। ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই মার্কেটের সামনে রাস্তা পারাপার হওয়ার সময় শামীম ওসমানের নেতৃত্বে অতর্কিত গুলিতে সে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে। এরপর থেকে তাকে বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোথাও থেকে তাকে সহযোগিতা করা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত অনেকেই নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে নিয়ে গেছেন। কিন্তু কেউ সাহায্য-সহযোগিতা করছেন না। টাকার অভাবে তার চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের জন্য সংগঠন করা হয়েছে। আমরা নির্দেশনা অনুযায়ী আহতদের তালিকা পাঠিয়েছি। সে অনুযায়ী সরকার থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Advertisement
মোবাশ্বির শ্রাবণ/এসআর/জিকেএস