নিয়াজ আহমেদ
Advertisement
স্বপ্নের একটা ভুল স্ট্রাটেজি এই ভাগা বিক্রি। একান্তই আমার পার্সোনাল অপিনিয়ন। এটার কিছু কারণ বলবো। আজকে স্বপ্নতে রেগুলার কেনাকাটা করতে গিয়ে দেখলাম, কেনাকাটা শেষ করার পর বিল দিতে ১৫ মিনিট লাইন দিতে হবে। কাজেই আমি কেনাকাটা না করে চলে আসলাম। ১৫ মিনিট লাইনে দাঁড়ানো আপাতত আমার পক্ষে সম্ভব না। তার ওপর তারা মাছ কাটছেন। সেগুলোর ভাগা দেবেন, ম্যানেজার সেটা চেক করবেন, তারপর বিক্রি। সেখানেও বেশ অনেকেই অপেক্ষমান। স্বপ্ন এমনিতেই প্রিমিয়াম সুপার শপ না, এখানেই আরও ইম্প্রুভমেন্ট দরকার। তার ভেতর স্বপ্ন এলো এই অফার নিয়ে।
আরও বেশকিছু কেস বলি। ২০২০ সালে আমরা কক্সবাজারের হোটেলে গিয়ে থাকি। ১২ হাজার টাকা দিয়েছিলাম সেবার। সেরা একটা এক্সপেরিয়েন্স ছিল সেবার। এর কিছুদিন পর একটি ই-কমার্স কোম্পানির সাথে কোলেবরেশন করে তারা ৪০০০ টাকায় রুম বিক্রি শুরু করে। এরপর আমরা আরেকবার সেখানে গিয়েছি। গিয়ে দেখতে পাই, এক ভদ্রলোক লুঙ্গি পরে পুলে নেমে, সেখানেই লুঙ্গি ধুয়ে কাপড় বদলে যাবেন। হোটেলের কোনো সেবায় সেই যত্নের ছোয়া নেই। একটা রুম সার্ভিস পেতে লাগে ২০-২৫ মিনিট। এখন সেই হোটেল এই যে ৫-৬ হাজারের ক্লাসে নেমে এসেছে, আর কোনোদিন তারা সেবার মানোন্নয়ন করতে পারেনি বা সেইভাবে আর কাস্টমার টানতে পারেনি।
সুপারশপে মানুষ তারাই কেনাকাটা করতে যান, যাদের সবকিছু গোছানো দরকার। খুব দ্রুত প্রতিটা পয়েন্টে সেবা পাওয়া, এরপর কুইকলি বিল দেওয়া, ভাঙতি নিয়ে দুর্গতিতে না পড়া—এগুলো হচ্ছে এর অ্যাডভান্টেজ। এখন স্বপ্নের যে অবস্থা, তারা ১০০ টাকার কাস্টমার ধরতে গিয়ে সেবার ম্যান জীবনেও সেইম রাখতে পারবে না। কাজেই তাদের এতদিনের অনেক গোছানো ক্লায়েন্ট অন্য অপশন খুঁজবে।
Advertisement
আবার ধরেন, ২০০ টাকায় গরুর গোস্ত আর আলু কেনা কাস্টমার সবাই কি হ্যাপি? নো, বিগ নো। যার ভাগে একটা চর্বি বা হাড় পড়বে, তার ভেতরে থেকে যাবে ক্ষোভ। যেদিন ভোক্তা অধিদপ্তর বা কেউ স্বপ্নকে কোনো এক কারণে বা অকারণে জরিমানা করবে, সেইদিন এই নাখোশ সস্তা ক্লায়েন্ট প্রজাতি একসাথে জেগে উঠবে।
এ ছাড়া এই বিপুল পরিমাণের কাস্টমার একই বেতনে সামাল দিতে গিয়ে স্বপ্নের কর্মচারীদের দশা খারাপ হওয়ার অবস্থা। এদের বেতন বৃদ্ধি না করলে, এদের ভেতরে চলে আসবে অসন্তোষ। তখন তাদের সেবা দিতে আর ইচ্ছা করবে না। তাই স্বপ্নের উচিত হবে—১০০ বা ২০০ টাকার এই সেগমেন্ট নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে তাদের মূল কাস্টমার সেগমেন্ট নিয়ে কাজ করা।
তবে, স্বপ্নের এই ইনিশিয়েটিভের পজিটিভ দিক আছে। স্বপ্ন ছাড়া হুট করে কাঁচাবাজারে আজকে এরকম অফার দিলে, মেরে তার হাড্ডি ভেঙে দিতো প্রতিবেশী ব্যবসায়ীরা। স্বপ্নের একটি পশমেও তারা হাত দিতে পারবে না। তাই কাঁচাবাজার ও ব্যবসায়ীদের উচিত হবে, এরকম ভাগা সিস্টেম চালু করা। ভাগা সিস্টেম আসলেই স্বস্তিদায়ক। স্বপ্ন এ ক্ষেত্রে স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে থাকলেই ভালো হবে।
লেখক: সিইও, কর্পোরেট আস্ক।
Advertisement
এসইউ/জিকেএস