দেশজুড়ে

বৃষ্টিতে পিছিয়েছে পেঁয়াজ আবাদ, বীজের দামে বাড়ছে খরচ

পেঁয়াজ আবাদে একটি সমৃদ্ধ জেলা রাজবাড়ী। সারাদেশের প্রায় ১৬ শতাংশ পেঁয়াজ উৎপাদন হয় এ জেলায়। তবে বৃষ্টির কারণে এবার প্রায় এক মাস দেরিতে শুরু হয়েছে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ। জেলার বিভিন্ন স্থানের উঁচু মাঠে এখন মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণ ও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। এই পেঁয়াজ বাজারে উঠতে সময় লাগবে প্রায় ২ থেকে ৩ মাস। ফলে কিছুটা হলেও মিটবে চাহিদা।

Advertisement

তবে এ বছর পেঁয়াজ বীজ, শ্রমিকসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তারপরও একটু লাভের আশায় পেঁয়াজ আবাদ করছেন চাষিরা। সবকিছুর দাম অনুযায়ী প্রতিমণ পেঁয়াজের বাজার মূল্য ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা হওয়ার দাবি কৃষকদের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালকের দাবি, বৃষ্টির কারণে রোপণ দেরিতে শুরু হলেও আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে যাবে। এছাড়া বৃষ্টির মধ্যে রোপণকৃত কিছু পেঁয়াজে পচন ধরায় ফলন কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণ শুরুর উপযুক্ত সময় হলেও এ বছর অতিবৃষ্টিতে রাজবাড়ীতে প্রায় এক মাস পিছিয়ে গেছে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ। বৃষ্টির মধ্যে রোপণকৃত প্রায় ৫০ শতাংশ ক্ষেতই নষ্ট হয়েছে। ফলে তারা এখন আবার রোপণ করছেন। আগাম জাতের এই পেঁয়াজ প্রায় দুই থেকে তিন মাস অর্থাৎ জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি বা শেষের দিকে বাজারে উঠবে।

Advertisement

এ বছর প্রথম পর্যায়ে এক বিঘা জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ করতে চাষিদের বীজ ক্রয়, জমি প্রস্তুত, সেচ, কিটনাশক প্রয়োগ, রোপণসহ বাজারজাত পর্যন্ত প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। ফলন ভালো হলে এক বিঘায় ৫০ থেকে ৮০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রাজবাড়ী জেলায় প্রায় ৩৬ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৫ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা উঁচু জমিতে চাষ করছেন কৃষকরা। এছাড়া আমন ধান কাটা শেষ হলে ওইসব জমিতে হালি পেঁয়াজের আবাদ করবেন চাষিরা।

কৃষক আলম শেখ, মহম্মদ আলী জিন্নাহ, মসলেম, আনোয়ার ও দেলোয়ার হোসেন বলেন, বৃষ্টির কারণে এবার প্রায় এক মাস পরে তারা মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণ করছেন। এই পেঁয়াজ বাজারে আসবে প্রায় ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে। এবার বীজের দাম ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত কিনেছেন। তারওপর আবার শ্রমিক, কিটনাশক, সার, ওষুধের দাম বেশি। যার কারণে এবার এক বিঘা জমিতে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। এরপর সেচ, কিটনাশকসহ বাজারজাতকরণ পর্যন্ত আরও খরচ হবে। সে হিসাবে মৌসুমের সময় মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাস ন্যূনতম ১০০ টাকা কেজি এবং মণ ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা পেলে তারা লাভবান হবেন। বৃষ্টির মধ্যে যারা রোপণ করেছেন তাদের অনেকের পেঁয়াজ গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যাদের ভালো আছে তারা প্রায় এক মাস আগে বিক্রি করতে পারবেন।

রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, রাজবাড়ীতে এ বছর রবি মৌসুমে ৩৬ হাজার ২০ হেক্টর জমির মধ্যে ৫ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ জেলায় অনেক আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ হলেও এবার বৃষ্টির কারণে পিছিয়ে গেছে। আগে কিছু কিছু উঁচু জমিতে অল্প কিছু আবাদ হয়েছে এবং বর্তমানে পুরোদমে আবাদ চলছে। এখন পর্যন্ত জেলায় প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে এবং আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে যাবে। তবে বৃষ্টির মধ্যে যারা রোপণ করেছে, তাদের কিছু পেঁয়াজে পচন ধরায় ফলন কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

Advertisement

এফএ/এমএস