দেশজুড়ে

শর্তের বেড়াজালে ৪ মাস ধরে বন্ধ আমদানি, ক্ষতি কোটি টাকা

ভারতের মেঘালয় রাজ্য ঘেঁষা জামালপুরের একমাত্র স্থলবন্দর বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া কামালপুরে অবস্থিত। চার মাস ধরে আমদানি বন্ধ রয়েছে বন্দরটিতে। এতে বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক। আমদানি বন্ধ থাকায় সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, গত চার মাসে প্রায় দুই কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে সরকার।

Advertisement

স্থলবন্দর ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বন্দরে বেশি চার্জ, অতিরিক্ত শুল্ক আদায়, ভারতের পাথরের মূল্য বেশি হওয়া, ব্যবসায়ীদের সুবিধামতো পাথর আমদানির সুযোগ না দেওয়াসহ নানা সমস্যার কারণে চার মাস ধরে আমদানি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। চলতি অর্থবছরে এই বন্দরের শুল্ক বিভাগ থেকে বছরে ১০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু বছরে এখন পর্যন্ত কোনো আমদানি না হওয়ায় এক টাকাও রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয়নি। চলতি বছরের জুন থেকে আমদানি বন্ধ রয়েছে ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দরে।

১৯৭৪ সালে জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া কামালপুর সীমান্তে লোকাল কাস্টমস (এলসি) স্টেশনটি চালু হয়। ২০১৫ সালের মে মাসের দিকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দরে রূপ নেয় স্টেশনটি। পাথর, আদা, সুপারিসহ প্রায় ৩৪টি পণ্য আমদানি করার অনুমতি রয়েছে এই বন্দর দিয়ে। তবে এই বন্দর দিয়ে বেশিরভাগ সময় মেঘালয় রাজ্য থেকে পাথর আমদানি হয়ে থাকে। প্রতিদিন প্রায় কয়েকশ ট্রাক পাথর নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতো এই বন্দর দিয়ে।

বন্দরে লোড-আনলোডের কাজ করতেন মো. শাওন। তিনি বলেন, ‘বন্দর বন্ধ থাকায় কাজ নেই। এখন এক টাকাও ইনকাম হয় না। বেকার আছি। ধারকর্জ করে চলছি। এখন ধারকর্জও কেউ দেয় না। বউ-পোলাপান নিয়ে খুব কষ্টে আছি।’

Advertisement

সোহেল মিয়া নামের আরেক শ্রমিক বলেন, ‘ছয় বছর ধরে পাথর ভাঙার কাজ করি। এখন পাথর ভাঙা নেই। বিভিন্ন জায়াগায় গিয়ে মানুষের বাড়িতে কাজ করি। বউ-বাচ্চা নিয়ে কীভাবে চলবো, এ নিয়ে চিন্তায় আছি।’

ব্যবসায়ীরা বলছেন, পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রামের রৌমারী বন্দরে ওয়ে ব্রিজ না থাকায় স্কেল দিয়ে পাথর পরিমাপ করা হয়। ফলে ব্যবসায়ীরা সেখান থেকে পাথর আমদানি করে বেশি লাভবান হচ্ছেন। এখানে ওয়ে ব্রিজের মাধ্যমে পাথর পরিমাপ করে অতিরিক্ত শুল্ক আদায় করার কারণে ব্যবসায়ীরা পাথর আমদানি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ফলে সম্ভাবনাময় এই বন্দরে আমদানি-রপ্তানিতে ভাটা পড়েছে।

জাবেদ ট্রেডার্সের মালিক আমদানিকারক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ইন্ডিয়া থেকে মাল দিতে পারে ১২ টন। অথচ আমাদের কাস্টম বলছে মিনিমাম ২৫ টন মাল আনতে হবে। ইন্ডিয়ার রাস্তা ভালো না থাকায় ১২ টনের বেশি মাল আনার অনুমতি নেই। আমাদের মাল আসে ১০-১৭ টন। তারা আমাদের ওপর বাড়তি চাপ দিচ্ছে ২৫ টনের ট্যাক্স দিতে হবে। আমরা ২৫ টনের ট্যাক্স কেন দেবো? আমাদের দাবি, এখানে স্কেল আছে। ওজন দেওয়ার পর যে পরিমাণ ট্যাক্স আসবে, সে পরিমাণ পরিশোধ করবো। আমরা কোনো ট্যাক্স ফাঁকি দিতে চাই না।’

কামালপুর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম রসুল সেতু বলেন, ‘ইন্ডিয়া থেকে ১২ টনের অতিরিক্ত মাল বহন করা যাচ্ছে না। আর বাংলাদেশে ২৫ টনের নিচে বন্দর কর্তৃপক্ষ মাল মেনে নিচ্ছে না। যে কারণে অন্য বন্দরের চেয়ে আমাদের মালের কস্টিং বেড়ে যাচ্ছে। ভারত থেকে জেসিবি দিয়ে মাল লোড করার কারণে মালের সঙ্গে ওয়েস্টেজ/মাটি আসে, যেটা আমাদের কস্টিং করে নিতে হচ্ছে। এই কস্টিং লেস করা প্রয়োজন। তাহলে এই পোর্টের সঙ্গে অন্য পোর্টের পাথরের দাম এক থাকবে, তখন আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারবো।’

Advertisement

ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দরের ইনচার্জ হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান। তিনি বলেন, ‘আমাদের সব কার্যক্রম সচল আছে। অফিস খোলা আছে। আমরা এক্সপোর্টার ও ইমপোর্টারদের সবসময় সহযোগিতা করার জন্য বসে আছি। এখন কেউ মালপত্র আনছে না। এটা এক্সপোর্টার , ইমপোর্টার এবং কাস্টমসের বিষয়। আমাদের বন্দরের পক্ষ থেকে কোনো বাধা নেই।’

এ বিষয়ে ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দরের শুল্ক বিভাগের রাজস্ব কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার দাস বলেন, পার্শ্ববর্তী রৌমারী স্টেশনের আমদানিকারকদের সঙ্গে আমাদের আমদানিকারকদের প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এ কারণেই হয়তো আমাদের আমদানি কমে গেছে। তবে আমদানি সচল করার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এসআর/এএসএম