খেলাধুলা

স্টুয়ার্ট বিনির পর গজনফার

কখনো কখনো শাপেও বর হয়। বাংলাদেশের বিপক্ষে আজ বুধবার শারজায় আফগানদের যেন তাই হলো। ব্যাথা পেয়ে এ সিরিজের বাইরে স্পিনার মুজিবুর রহমান। আফগান ক্রিকেটের এ রহস্যময় স্পিনারের পরিবর্তে একাদশে এসেছেন সদ্য কৈশোর পার করা মোহাম্মদ গজনফার। এ বহুমুখি অফব্রেক বোলারের বয়স ১৯ পুরো হয়নি। ১৮ বছর ২৩১ দিন।

Advertisement

এ যেন স্বপ্নলোকের এক রাজকুমারের আবির্ভাব। তিনি আসলেন। খেললেন। জয় করলেন। আর নিজের অফস্পিন, দুসরা, ক্যারম বল ছুঁড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং ডিপার্টমেন্টকে পুরে ছারখার করে শান্ত বাহিনীর সাড়ে সর্বনাশ করে তবে ছাড়লেন।

বাংলাদেশের বিপক্ষে এতকাল রশিদ খান, মুজিব আর মোহাম্মদ নবি যে বোলিং তাণ্ডব দেখাতে পারেননি, আজ ৬ নভেম্বর শারজায় তারচেয়ে অনেক বড় তাণ্ডব দেখালেন এ আফগান স্পিনার।

আজকের আগে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে কোন আফগান বোলারের ৫ উইকেটও ছিল না। রশিদ খানের সেরা স্পেল ছিল ৩/৩৫, নবির সেরা বোলিং ফিগার ছিল ৩/৪৪, মুজিবের সেরা স্পেল ৩/৩৯। একমাত্র ফজলহক ফারুকির ৪ উইকেট ছিল ৫৪ রানে; কিন্তু আজ শারজায় তাদের সবাইকে ছাড়িয়ে গেলেন গজনফার। একটি-দুটি নয়, ছয়-ছয়টি উইকেট দখল করলেন এ বহুমাত্রার অফস্পিনার।

Advertisement

ফজলহক ফারুকির সাথে বোলিংয়ের সূচনা করে দ্বিতীয় ওভারেই আঘাত। তার বলে বোল্ড বাংলাদেশ দলের বাঁ-হাতি ওপেনার তানজিদ তামিম। ৩ ওভারের টানা প্রথম স্পেলে এক মেডেনসহ মাত্র ৭ রানে ওই একটি মাত্র উইকেট। তা দেখে কেউ হয়ত স্বপ্নেও ভাবেননি, এই ১৮ বছরের যুবার হাতে জ্বলে-পুড়ে ছারখার হবে বাংলাদেশের মিডল ও লেট অর্ডার।

কি করে ভাববেন? বাংলাদেশ ইনিংসের ৯ নম্বর ওভারে আবার বল করতে এসে টাইগার ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ছক্কা ও বাউন্ডারি হজম করাসহ ১৪ রান দিয়ে ফেলেন গজনফার।

কিন্তু ৩১ নম্বর ওভারে তৃতীয় স্পেলে বোলিং করতে এসেই সাজানো-গোছানো বাংলাদেশ ইনিংসকে লণ্ডভণ্ড করে দেন তিনি। ৫ নম্বর ওভারে বল করতে গিয়ে ৪ নম্বর ডেলিভারিতে ফিরিয়ে দেন মেহেদি হাসান মিরাজকে। প্যাডেল সুইপ করতে গিয়ে ফাইন লেগে আজমতউল্লাহ ওমরজাইর অসামান্য ক্যাচে পরিণত হন মিরাজ।

সেই যে মড়ক লাগলো, আর ফেরানো গেল না। পরের ওভারে অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ লেগস্পিনার রশিদ খানের বলে বোল্ড হলেন। তারপর শুরু হলো গজনফার জাদু। একের পর এক বাংলাদেশের ব্যাটাররা অসহায়ের মত এ বহুমাত্রিক অফস্পিনারের শিকারে পরিণত হলেন।

Advertisement

গজনফারের ৬ নম্বর ওভারেই আউট হলেন ৩ জন- মুশফিক, রিশাদ ও তাসকিন। প্রথম বলে অফস্ট্যাম্পের ঠিক বাইরে ফ্লাইট ও টার্নে পরাস্ত হয়ে স্ট্যাম্পড মুশফিক। পঞ্চম বলে ক্যারম ডেলিভারিতে লেগবিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়লেন রিশাদ। ঠিক পরের বলে আবার ক্যারম ডেলিভারি। বোল্ড আউট তাসকিন।

৭ নম্বর ওভারে গিয়ে নিজের ৬ নম্বর উইকেট শিকার করলেন আফগান স্পিন বোলিংয়ের নতুন সেনসেশন গজনফার। তার শেষ শিকার হলেন শরিফুল। ফুল লেন্থ ডেলিভারিতে ফ্লাইট ও টার্নে পরাস্ত হলেন শরিফুল। ২৬ রানে ৬ উইকেট শিকারের আনন্দে মাতোয়ারা হলেন গজনফার।

বাংলাদেশের বিপক্ষে এতকাল দেশের মাটিতে ৬ উইকেট শিকারী ছিলেন ভারতের মিডিয়াম পেসার স্টুয়ার্ট বিনি। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বর্তমান সভাপতি রজার বিনির ছেলে স্টুয়ার্ট বিনি ২০১৪ সালের ১৭ জুন ঢাকার মিরপুরে শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে মাত্র ৪ রানে ৬ উইকেটের পতন ঘটিয়েছিলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে। ১০ বছর ৫ মাস পর এবার আবার বাংলাদেশের বিপক্ষে ৬ উইকেট দখলের কৃতিত্ব দেখালেন আফগান স্পিনার গজনফার।

তবে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ৬ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখান শ্রীলঙ্কার চামিন্দা ভাস। ২০০৩ বিশ্বকাপে পিটারমারিৎজবার্গে চামিন্দা ভাস ২৫ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ৬টি উইকেট। ৬ উইকেট নেয়া দ্বিতীয় বোলার ছিলেন স্টুয়ার্ট বিনি এবং তৃতীয় বোলার হলেন গজনফার।

এআরবি/আইএইচএস/এমআরএম