দেশজুড়ে

বিপুল সম্পদের মালিক ডিবি হারুনের ‘ক্যাশিয়ার’ মোকারম

কিশোরগঞ্জে আলোচিত নাম ‘মোকারম সরদার’। একসময় দৈনিক মাত্র ৮০ টাকা মজুরিতে লোড-আনলোডের কাজ করতেন নারায়ণগঞ্জের আলীগঞ্জে। পরে শ্রমিক থেকে হয়ে যান শ্রমিকদের সরদার। এখন শত শত কোটি টাকার মালিক তিনি।

Advertisement

তার আরেক পরিচয় সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদের ক্যাশিয়ার। তার আশীর্বাদে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ নিজ জেলায় গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। বিপুল পরিমাণ এ সম্পদ দেখে বিস্মিত স্থানীয়রাও। একসময় নুন আনতে পান্তা ফুরানো মোকারম সরদারের এত অর্থ সম্পদের উৎস জানতে চান তার নিজ গ্রামের লোকজন। অনেকেরই ধারণা, এসব অর্থ সম্পদের ভাগ আছে হারুনেরও।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে তিনতলা একটি বাড়ি নির্মাণ করছেন মোকারম সরদার। গ্রামের ভেতর প্রায় ২২ শতাংশ জায়গার ওপর বিশাল এ বাড়িটি দেখে যে কারও চোখ ছানাবড়া হয়ে যাবে। বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে ৯ একর জায়গাজুড়ে রয়েছে মাছচাষের বিশাল ফিশারি। হাওরে বিরাট একটা জায়গাজুড়ে রয়েছে ফসলি জমি।

শুধু তাই নয়, নিজে শিক্ষার আলোয় আলোকিত না হলেও বাবার নামে নিজ এলাকা দামপাড়ায় ১ একর ৪ শতাংশ জায়গায় গড়ে তুলেছেন একটি কলেজ। সেই কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্বে রয়েছেন তার ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন। যিনি একইসঙ্গে দামপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। মায়ের নামে প্রতিষ্ঠা করেছেন কিন্ডারগার্টেন। অসহায়দের সহায়তায় গঠন করেছেন ট্রাস্টি বোর্ড।

Advertisement

নিজ উপজেলার মসজিদ-মাদরাসার উন্নয়নেও ভূমিকা রয়েছে মোকারম সরদারের। নিজ এলাকার বাইরে উপজেলার সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ সড়কের পাশে কারপাশা ইউনিয়নে গড়ে তুলেছেন অটো রাইস মিল। রাইস মিলের ময়লা-আবর্জনা ও ছাইয়ের কারণে নষ্ট হচ্ছে ধানের জমি। মারা যাচ্ছে হাওরের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। সেখানেও মুখ খুলতে ভয় পান স্থানীয়রা।

স্থানীয়রা বলছেন, একসময় যে ব্যক্তির নুন আনতে পান্তা ফুরোনো অবস্থা ছিল, আজ তিনি শত শত কোটি টাকার মালিক। কথার অবাধ্য হলে মামলা-হামলা দিয়ে হয়রানি করেন মোকারম সরদার ও তার পরিবারের সদস্যরা।

শুধু তাই নয়, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার চৌদ্দশত এলাকায় ইটভাটার মালিক মোকারম সরদার। ১০ বছর ধরে চলছে ইটভাটাটি। তথ্য বলছে, আরও বেশ কয়েকটি ইটভাটা রয়েছে তার। জেলা শহরের উকিলপাড়া এলাকায় একটি বাড়ির মালিক তিনি। নাম দেওয়া হয়েছে ‘সরদার বাড়ি’। নগুয়া এলাকায় আনসার ক্যাম্পের সামনে গড়ে তোলা হয়েছে মার্কেট। মার্কেটের পেছনে রয়েছে জমি।

জেলা শহরের জেলখানা মোড় এলাকায় ৭০ শতাংশ, জেলা পরিষদের কাছে ১০ শতাংশ, হাওরে প্রায় ১০০ একর, দামপাড়া বাজারে ১০ শতাংশসহ কিশোরগঞ্জ শহর ও তার নিজ এলাকায় নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তার।

Advertisement

কথা হয় মো. ইমরান নামের স্থানীয় একজনের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘যে ফিশারির পাড়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছি এটাও মোকারমের। তিনি এখন শত শত কোটি টাকার মালিক। এই ফিশারির মধ্যে ৯ একর জায়গা আছে। অন্যান্য জায়গায়ও বিশাল সহায়-সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। এত অল্প দিনে কীভাবে শিল্পপতির পর্যায়ে চলে গেলেন তা অবাক করার মতো।’

বিস্ময় প্রকাশ করে ইমরান বলেন, ‘তার বাবা মৃত্যুর সময় অসুস্থ ছিলেন। মারা গেলে অন্য জায়গায় থেকে সাহায্য তুলে দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আজ তিনি শত শত কোটি টাকার মালিক। এলাকায় জমিজমা, ফিশারি, তিনতলা বিল্ডিং, অটো রাইস মিল, কিশোরগঞ্জ শহরে বাসা ও মার্কেট রয়েছে। তার সম্পদের হিসাব বলেও শেষ করা যাবে না।’

একসময় মোকারম সরদারের অধীনে কাজ করতেন খোকন সরদার। মোকারমের উত্থানে বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনিও। খোকন সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের আলীগঞ্জে লোড আনলোডের লেবার সরদার হিসেবে মোকারম কাজ করতেন। সরদারি করে এত টাকা-পয়সা কীভাবে হয়? আমিও সরদারি করেছি ১৫ বছর। আমার কাছে তো টাকা নেই।’

আলীগঞ্জে মোকারম সরদারের অফিসে ডিবির হারুন কয়েকবার গেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেখানে তার সঙ্গে বসে খাওয়া-দাওয়া করেছে। তারপর থেকে তার সঙ্গে ভালো একটা রিলেশন হয়েছে মোকারম সরদারের। ডিবি হারুনের সঙ্গে ছবি তুলে তার অফিসে লাগাইছে।’

স্থানীয় মুক্তার উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘মোকারম সরদারতো গরিব ছিল। তার বাবার সঙ্গে আমি লেবারের কাজ করেছি। এখন মোকারম সরদারের অনেক টাকা-পয়সা। টাকার পাহাড়।’

মোকারম সরদারের ছোট ভাই দামপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন এসব প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও দানের কথা স্বীকার করলেও ডিবি হারুনের প্রভাব দেখানো আর মানুষকে নির্যাতনের কথা মিথ্যা বলে দাবি করেন।

এসব বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও মোকারম সরকারকে পাওয়া যায়নি।

এসকে রাসেল/এসআর/জিকেএস