খ্যাতিমান নাট্যজন প্রয়াত আলী যাকেরের আজ ৮১তম জন্মদিন। ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর তিনি মারা যান। বাংলার এই ‘গ্যালিলিও’র জন্মদিনে আজ নেই কোনো আয়োজন। প্রতি বছর যে আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে তার জন্মদিন উদযাপন করা হয়, এ বছর সেটা হচ্ছে না। কেন? জানতে যোগাযোগ করা হলে কথা বলেন আলী যাকেরের ছেলে অভিনেতা ইরেশ যাকের।
Advertisement
অভিনেতা ইরেশ যাকেরেরও আজ ৪৯তম জন্মদিন। বাবা-ছেলের একই দিনে জন্ম বলে বেশ ঘটা করেই বাড়িতে উদযাপিত হতো দিনটি। বিশেষ করে আলী যাকেরের কৃত্তিময় জীবনকে উদযাপন ও স্মরণ করা হতো গুণী অভিনেতাকে। এ বছর সেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি পরিবারের।
গতকাল (৫ নভেম্বর) মঙ্গলবার ইরেশ যাকের জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার আমার এবং বাবার জন্মদিনে বিশেষ কোনো আয়োজন নেই। বাবা চলে যাওয়ার পর আমাদের দুজনার জন্মদিন সেভাবে আনন্দময় পরিবেশে উদযাপন করা হয় না। তার অনুপস্থিতিই এর কারণ বলা যেতে পারে। বাবা বেঁচে থাকতে দিনটি আমরা উপযাপন করতাম। কিন্তু তিনি তো আর এখন আমাদের মাঝে নেই।’
এত বড় একজন নাট্যব্যক্তিত্বের জন্মদিনে তাকে কোনো না কোনো উপায়ে স্মরণের আয়োজন করা প্রয়োজন ছিল। সেটা কীভাবে? জানতে চাইলে ইরেশ বলেন, ‘বাবার জন্ম এবং মৃত্যু একই মাসে হওয়ায় আমরা একটু আলাদাভাবে তাকে স্মরণ করি। বাবার অফিসে আমরা একটা গ্যালারি করেছি। সেখানে আলোকচিত্র প্রদর্শনী করি। তবে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকারিএ বছর সেই প্রস্তুতি নিতে পারিনি। একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী করতে গেলে অনেকদিন আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হয়। আর্টিস্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। আর্টিস্টদের ছবি আঁকার জন্যও মাস দুয়েক সময় লাগে। কিন্তু মাস দুয়েক আগে দেশের অবস্থা ভালো ছিল না। প্রতিবছর আমরা আগস্ট-সেপ্টেম্বরের দিকে প্রদর্শনীর প্রস্তুতির কাজ হাতে নিই। সে সময় দেশের পরিস্থিতি দেখে আমরা কী করবো সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, তাও বুঝতে পারছিলাম না। পাশাপাশি প্রতিবার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আমরা আলী যাকের নাট্যোৎসবের আয়োজন করি। সময় মতো সেটাও কোনো প্রস্তুতি নিতে পারিনি। সে কারণে এবার কোনো কিছুই করা হচ্ছে না।’
Advertisement
আলী যাকের ১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবার সরকারি চাকরি, সেই সুবাদে তিনি কুষ্টিয়া ও মাদারীপুরে বড় হয়েছেন। ১৯৬০ সালে সেন্ট গ্রেগরিজ উচ্চবিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। পরে ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে। তিনি ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
১৯৭২ সালে আলী যাকের আরণ্যক নাট্যদলের হয়ে মামুনুর রশীদের নির্দেশনায় মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকে অভিনয় করেন। সে বছরই তিনি যোগ দেন নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে। আতাউর রহমানের নির্দেশনায় অভিনয় করেন ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ নাটকে। এই দলের হয়ে ‘বাকি ইতিহাস’, ‘সৎ মানুষের খোঁজে’, ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’, ‘কোপেনিকের ক্যাপ্টেন’, ‘গ্যালিলিও’, ‘ম্যাকবেথ’সহ অনেক আলোচিত মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছেন তিনি। নির্দেশক হিসেবেও আস্থা অর্জন করেছিলেন তিনি।
টিভি নাটকে আলী যাকের অভিনীত কালজয়ী নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘আজ রবিবার’, ‘বহুব্রীহি’, ‘তথাপি’, ‘পাথর দেয়াল’। তার লেখা বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘সেই অরুণোদয় থেকে’, ‘নির্মল জ্যোতির জয়’।
শিল্পকলায় অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন আলী যাকের। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদক পেয়েছেন।
Advertisement
১৯৭৭ সালে আলী যাকের ও সারা যাকের বিয়ে করেন। এই দম্পতির দুই সন্তান, ছেলে ইরেশ যাকের ও মেয়ে শ্রিয়া সর্বজয়া। দীর্ঘদিন ক্যানসারে ভোগার পর ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর আলী যাকের মারা যান।
এমএমএফ/আরএমডি/জেআইএম