রাজনৈতিক পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিদেশি বিনিয়োগের আশা নতুন করে না করে বিদ্যমান বিনিয়োগের ক্ষেত্র এবং বিদেশি বিনিয়োগ টিকিয়ে রাখার দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচ্যাম) সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ। তিনি বলেছেন, বর্তমান সরকার এখন বিদ্যমান বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সব ক্ষেত্রে সহায়তা করার দিকে মনোনিবেশ করছে, যা বিদেশের বাজারে বাংলাদেশের একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করতে সহায়তা করবে।
Advertisement
জাগো নিউজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগের নানা চ্যালেঞ্জ এবং এর থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে কথা বলেছেন এক্সপিডিটরস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের চেয়ারপারসন এবং প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এরশাদ আহমেদ। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক মো. সামিউর রহমান সাজ্জাদ।
জাগো নিউজ: বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বেসরকারি খাতে ব্যবসায়িক সম্ভাবনা কেমন?
সৈয়দ এরশাদ আহমেদ: রপ্তানির সুযোগ তৈরি করতে পারলে বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের ব্যবসা বৃদ্ধির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের ভৌগোলিক অবস্থান, প্রতিযোগিতামূলক শ্রমশক্তি এবং আবহাওয়া বিনিয়োগের জন্য খুবই অনুকূল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য এক নম্বর বিনিয়োগকারী। জ্ঞান ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের পাশাপাশি তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি মাধ্যমে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একক বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য।
Advertisement
আরও পড়ুন:
দীর্ঘ সময় সংকোচনমূলক নীতি থাকলে প্রকৃত অর্থনীতি সংকুচিত হবেদেশে প্রসাধনীর বড় বাজার, কালোবাজারিতে কম রাজস্বঅর্থনীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ হলে আসল পরিস্থিতি জানা যাবেআমাদের এই মুহূর্তে বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস ফেরানো, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, প্রযুক্তি, পরিবহন ব্যবস্থা, নিম্ন বিনিময় হার, অর্থ, শ্রম, বিদেশি কর্মীদের প্রতিস্থাপনের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, ব্যবসা সম্প্রসারণ, বাণিজ্য নীতির দিকে মনোনিবেশ করা উচিত।
বর্তমান সরকার এখন বিদ্যমান বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সব ক্ষেত্রে সহায়তা করার দিকে মনোনিবেশ করছে, যা বিদেশের বাজারে বাংলাদেশের একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করতে সহায়তা করবে।
জাগো নিউজ: নতুন পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কী ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে? সমাধান কী?
Advertisement
সৈয়দ এরশাদ আহমেদ: আমাদের অর্থনীতিতে অনেক চ্যালেঞ্জ অব্যাহত রয়েছে। বেকারত্ব বাড়ছে, প্রবৃদ্ধির স্থবিরতা, দুর্বল ব্যাংকিং খাত, বর্ধিত বৈদেশিক ঋণ এবং বিশেষ করে ব্যক্তি খাতে ব্যাপক অস্থিরতা। দেশের লজিস্টিক ইনডেক্স উন্নত করার জন্য বাধাহীন বন্দর ব্যবস্থাপনা এবং সব বন্দরে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা অবশ্যই প্রয়োজন যা আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর সঙ্গে লড়াই করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি বাংলাদেশে বিদ্যমান বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য মুনাফা লেনদেন ঝামেলামুক্ত হওয়া উচিত।
বর্তমান সরকার এখন বিদ্যমান বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সব ক্ষেত্রে সহায়তা করার দিকে মনোনিবেশ করছে, যা বিদেশের বাজারে বাংলাদেশের একটি ভালো ভাবমূর্তি তৈরি করতে সহায়তা করবে। একই সঙ্গে সরকারকে ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং বিভিন্ন পরিষেবা যেমন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহকারী সংস্থাসহ আর্থিক ও প্রশাসনিক খাতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। এই কঠিন সময়ে আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশা করি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিজ্ঞ নেতৃত্বে আমরা এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে সক্ষম হবো।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য বাংলাদেশের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুর্বল ব্র্যান্ডিং। আমাদের উচিত কী কী খাতে বিদেশিরা এখানে বিনিয়োগ করতে পারেন সে সব ক্ষেত্র স্পষ্ট করা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনেক কাজের জায়গা আছে।
জাগো নিউজ: নতুন বিনিয়োগে স্থবিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা এবং আরও বেশি সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণের উপায় কী?
সৈয়দ এরশাদ আহমেদ: পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিদেশি বিনিয়োগের আশা না করে বিদ্যমান বিনিয়োগগুলোকে টিকিয়ে রাখার দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য বাংলাদেশের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুর্বল ব্র্যান্ডিং। আমাদের উচিত কী কী খাতে বিদেশিরা এখানে বিনিয়োগ করতে পারেন সে সব ক্ষেত্র স্পষ্ট করা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনেক কাজের জায়গা আছে।
আরও পড়ুন:
আবাসন ব্যবসায় ধস, বেড়েছে পুরোনো ফ্ল্যাটের কদরস্বচ্ছতা ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশে জোর পরামর্শকদেরত্রিমুখী চাপে রড-সিমেন্ট খাত, লোকসানে বিক্রিএছাড়া বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোসহ (ইপিবি) সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে ব্রান্ডিং করতে হবে। পাশাপাশি তাদের কাজকে আরও সম্প্রসারণ করতে হবে।
জাগো নিউজ: এরই মধ্যে এনবিআর চেয়ারম্যান, বিডা, বেজা, পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছে অ্যামচেম। সেসব আলোচনার ফলাফল কী?
সৈয়দ এরশাদ আহমেদ: অ্যামচ্যাম সব ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি-সম্পর্কিত মন্ত্রণালয়, অংশীজন, সুবিধা প্রদানকারী ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছে। এসব বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে একটি ভালো ব্যবসায়িক ইকোসিস্টেম প্রতিষ্ঠার জন্য সুপারিশ হস্তান্তর করা। আমরা এরই মধ্যে অ্যামচেম সুপারিশমালা তাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি।
ব্যবসায়ের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে বাণিজ্য সুবিধার ব্যবস্থা করা, প্রযুক্তি আনয়ন, পাবলিক সেক্টর আধুনিকায়ন এবং ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের দিকে নজর দেওয়া উচিত।
জাগো নিউজ: এই মুহূর্তে বেসরকারি খাতের সমস্যা সমাধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে?
সৈয়দ এরশাদ আহমেদ: অন্তর্বর্তী সরকারকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, শক্তিশালী ও প্রভাবমুক্ত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) প্রতিষ্ঠার দিকে নজর দিতে হবে। আর্থিক খাতের সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। অর্থপাচারে জড়িত আমলা ও ব্যাংকারসহ দুর্নীতিবাজদের যারা ভৌত অবকাঠামো প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতকে ধ্বংস করেছে তাদের উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ব্যবসায়ের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে বাণিজ্য সুবিধার ব্যবস্থা করা, প্রযুক্তি আনয়ন, পাবলিক সেক্টর আধুনিকায়ন এবং ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের দিকে নজর দেওয়া উচিত। আমাদের শিক্ষাখাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার্থীদের সুবিধা প্রদান করা যাতে তারা তাদের পড়াশোনায় ফিরে যেতে পারে। তারা আমাদের ভবিষ্যৎ নেতা এবং তাদের প্রতি আমাদের অনেক দায়িত্ব রয়েছে।
আরও পড়ুন:
৩৭৮ কোটি টাকা খরচের খবর নেই, আরও ৩৪৫ কোটি আবদারইউরোপীয় ইউনিয়নে পোশাক রপ্তানিতে হোঁচটগ্রেফতার আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা, থমকে যেতে পারে ব্যবসার গতিবর্তমানে আমাদের চার লাখেরও বেশি স্নাতক পাস করা বেকার রয়েছে। আমাদের তাদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে এবং এটি বাংলাদেশ সরকারের অগ্রাধিকারের একটি হওয়া উচিত। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন করতে হবে এবং দেশের জন্য আরও বেশি একাডেমিক ও শিল্প সম্পৃক্ততা অপরিহার্য। বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিপিএসসি) এবং নির্বাচন কমিশনসহ (ইসি) সব প্রতিষ্ঠানকে মেধাবী লোকবল দিয়ে সুষ্ঠু ও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে।
এসআরএস/এসএনআর/এমএমএআর/জেআইএম