জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে শেয়ার বিক্রি হতে অর্জিত মূলধনী মুনাফার ওপর করহার কমানোর খবরে দেশের শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হয়েছে।
Advertisement
সোমবার (৪ নভেম্বর) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে সবকটি মূল্যসূচক। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। এতে এ বাজারটিতেও মূল্যসূচক বেড়েছে। তবে লেনদেনের পরিমাণ কমেছে।
দিনের লেনদেন শেষে দুই বাজারেই মূল্যসূচকের বড় উত্থান হলেও এদিন লেনদেন শুরুর দিকের চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমায় এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ২০ পয়েন্ট কমে যায়।
Advertisement
এমন পরিস্থিতিতে দুপুর ১২টার দিকে মূলধনী মুনাফার ওপর করহার কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার লেনদেন থেকে ৫০ লাখ টাকার বেশি মূলধনী মুনাফা হলে তার ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে। আগে এই করহার ছিল ৩০ শতাংশ।
মূলধনী মুনাফার করহার কমানোর পাশাপাশি সারচার্জও কমানো হয়েছে। এনবিআরের আগের নির্দেশনা অনুযায়ী, সম্পদশালী করদাতাদের দেওয়া করের ওপর সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ হারে সারচার্জ দিতে হতো। এতে শেয়ারবাজার থেকে অর্জিত মূলধনী মুনাফার ওপর আইন অনুযায়ী আয়কর ও সারচার্জ বাবদ মোট ৪০.৫০ শতাংশ হারে কর দেওয়া লাগতো।
এনবিআরের নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, একজন করদাতার ৫০ কোটি টাকার অধিক নিট সম্পদ থাকলে, শেয়ারবাজার হতে অর্জিত ৫০ লাখ টাকার অতিরিক্ত আয়ের ওপর তাকে ১৫ শতাংশ হারে কর এবং প্রদেয় কর ১৫ শতাংশের ওপর ৩৫ শতাংশ অর্থাৎ ৫.২৫ শতাংশ সারচার্জসহ মোট ১৫ শতাংশ + ৫.২৫ শতাংশ = ২০.২৫ শতাংশ কর ও সারচার্জ দিতে হবে।
আরও পড়ুন
Advertisement
তবে করদাতার নিট সম্পদের পরিমাণ ৫০ কোটি টাকার কম হলে সারচার্জের হার ৩৫ শতাংশের পরিবর্তে কম হারে (১০ শতাংশ, ২০ শতাংশ ও ৩০ শতাশ) হতে পারে। সেক্ষেত্রে আয়কর ও সারসার্জের মোট হার নিট সম্পদের ভিত্তিতে ২০.২৫ শতাংশ থেকে আরও কম হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নেওয়া এই উদ্যোগ দ্রুতই শেয়ারবাজারে ছড়িয়ে পড়ে। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে শেয়ারবাজারে। ফলে দুপুর ১২টার পর দাম কমার তালিকা থেকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় চলে আসে। এতে একদিকে দাম বাড়ার তালিকা বড় হয়, অন্যদিকে মূল্য সূচকের বড় উত্থান হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ২৫৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ১০৭টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৩২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৬১ পয়েন্ট বেড়ে ৫ হাজার ২৫২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২২ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৯৩৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ১৬২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৫৬৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪৩১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। সে হিসেবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ১৩৩ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে লেনদেন হয়েছে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৯ কোটি ৭২ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফারইস্ট নিটিংয়ের ১৭ কোটি ৭৬ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশন।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ইসলামী ব্যাংক, ইউনিক হোটেল, মিডল্যান্ড ব্যাংক, ওরিয়ন ফার্মা, জেনেক্স ইনফোসিস, ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস এবং এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১২২ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২১৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪২টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৫৬টির এবং ১৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয় ১২ কোটি ৯ লাখ টাকা।
এমএএস/এমআরএম/এমএস