সাংবাদিক ও সংগঠক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর স্মরণে ‘আজীবন সম্মাননা ও নৃত্যাঞ্চল পদক চালু করেছে সাংস্কৃতিক সংগঠন নৃত্যাঞ্চল। ২০২২ সাল থেকে এ সম্মাননা চালু করেছে খ্যাতিমান নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নীপা ও শিবলী মহম্মদের সংস্থাটি। ২০২৪ সালে কে পাচ্ছেন এ সম্মাননা জানালেন শামীম আরা নীপা।
Advertisement
নিভৃতে লোকসংস্কৃতির চর্চা করে যাচ্ছেন এ রকম একজন সাধক শিল্পীকে সম্মানিত করা হয় নৃত্যাঞ্চলের লোক উৎসবে। দুবছর পর পর আয়োজন করা এ উৎসবের শুরু ২০২২ সালে সম্মানিত করা হয়েছিল নেত্রকোনার আবদুল হেলিম বয়াতীকে।
আগামীকাল আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৪ সালের সম্মাননা পাওয়া শিল্পীর নাম ঘোষণা করবে নৃত্যাঞ্চল। সোমবার (৪ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্রের ৪০১ নম্বর কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সেই শিল্পীর নাম ঘোষণা করা হবে। সে প্রসঙ্গে নৃত্যাঞ্চলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নীপা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের এবারের উৎসবে সম্মাননা পাচ্ছেন ধামাইল শিল্পী সুনামগঞ্জের কুমকুম রানী চন্দ। তার নাম ঘোষণার পাশাপাশি আমরা ধামাইল পরিবেশনও করবো। একটি তথ্যচিত্রও দেখানো হবে সেখানে।’
মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরের স্মরণ অনুষ্ঠান সংগৃহীত ফাইল ছবি
Advertisement
মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরের নামে সম্মাননা প্রসঙ্গে শামীম আরা নীপা বলেন, ‘জন্মদিন উপলক্ষে আমরা জাহাঙ্গীর ভাইকে স্মরণ করবো। তথ্যচিত্রে তার বক্তব্য দেখানো হবে। তার নামে এ সম্মাননা গুণীজনের হাতে তুলে দেওয়া হবে ফেব্রুয়ারি মাসে। নৃত্যাঞ্চল তার হাতে গড়া সংগঠন। শুরু থেকে তিনি আমাদের সব আয়োজনে থাকতেন। ২০১৯ এ তিনি চলে যাওয়ার পর থেকে আমরা যে কোনো আয়োজনে তার ছবি সামনে রাখি। এখন তিনি ছবি হয়ে আমাদের সঙ্গে থাকেন।’
সাধক শ্রী কুমকুম রাণী চন্দ জীবনজুড়ে মগ্ন ছিলেন বৈষ্ণব কবি রাধারমণের গানে। ধামাইল গানের শিল্পী কুমকুম ১৯৫২ সালের ১০ সেপ্টেম্বর গৌরারঙ্গ ইউনিয়নের বেরিগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা রূপচাঁন চন্দ এবং মাতা লক্ষ্মী রাণী চন্দ। নয় ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সপ্তম।
ধামাইল হিন্দু ধর্মের বিয়ের অনুষ্ঠানের অন্যতম অনুসঙ্গ। আর ধামাইল মানেই রাধারমণ। রাধারমণের ধামাইল গানের রয়েছে বিভিন্ন প্রহরানুরূপ সাঙ্গীতিক পর্যায়। হিন্দু বিয়ের অধিবাসে সন্ধ্যা থেকে শুরু করে ভোররাত পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ের ধামাইল গান গাওয়া হয়। এক এক সময়ে রয়েছে এক এক রকমের গান। প্রহর এবং অধিবাসের আনুষ্ঠানিক দিক বিবেচনা করে বা প্রহরের সঙ্গে মিল রেখে গাওয়া হয় ধামাইল গান। আর রাধারমণের ধামাইল গানে রয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিয়ের প্রতিটি পর্যায়ের সাঙ্গীতিক প্রকাশ।
বন্দনা, আসর, বাঁশি, জলভরা, জলধামাইল, গৌররূপ, শ্যামরূপ, বিচ্ছেদ, কুঞ্জসজ্জা, কুঞ্জবিচ্ছেদ, খেদবিচ্ছেদ, মান, মানভঞ্জন, সাক্ষাৎ বা দুঃখ প্রকাশ, মিলন ও বিদায় ধামাইলের নানান ধরন। এ ছাড়াও আছে ঢোল আসার গান, জামাই এবং কনের মা সাজানো গান, কূলা সাজানো গান, আলপনা আঁকার গান, সোমন্ধ মিথি, অধিবাসের টিকা দেওয়ার গান, চুরপানি গান, জলে প্রদীপ ভাসানোর গান। কারিকা ধামাইল, বাঁশি কারিকা, বিচ্ছেদ কারিকা, জলভরা কারিকা। সূর্যব্রত, মঙ্গলারতি, কন্ধী নারায়ণ সেবাসহ বিভিন্ন সনাতনধর্মীয় পূজার কীর্তনও গেয়ে থাকেন কুমকুম। তার সংগ্রহে রয়েছে প্রায় ৭০০ রাধারমণের ধামাইল গান। মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর স্মরণে ‘আজীবন সম্মাননা ও নৃত্যাঞ্চল পদক’ পাচ্ছেন এই শিল্পী।
Advertisement
২০০০ সালে সাংবাদিক ও সংগঠক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীরকে নিয়ে শামীম আরা নীপা ও শিবলী মহম্মদ গড়ে তোলেন নৃত্যাঞ্চল। ক্রমে এটি দেশের স্বনামধন্য সাংস্কৃতিক সংগঠন হিসেবে প্রসার লাভ করে। ২০১৯ সালে প্রয়াত হন সংগঠক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর। ২০২২ সাল থেকে তার নামে সম্মাননা চালু করে সংগঠনটি। এ সম্মাননার রয়েছে অর্থমূল্যও।
আরএমডি/জিকেএস