আইন-আদালত

অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেলেন বিএনপির ৬ আইনজীবী

আপিল বিভাগের দুই বিচারপতির পদত্যাগ চেয়ে তাদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন ও মিছিল-সমাবেশ করার ঘটনায় আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে বিএনপিপন্থি ছয় আইনজীবীকে অব্যাহতি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

Advertisement

একই সঙ্গে আবেদনকারী আইনজীবী নাজমুল হুদাকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ওই টাকা জমা দিতে হবে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে।

এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে রোববার (৩ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালতে বিএনপি নেতাদের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মো. বদরুদ্দোজা বাদল ও ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনিক আর হক।

Advertisement

এর আগে, গত ২৫ এপ্রিল নির্ধারিত দিনে ছয় আইনজীবীর পক্ষে আদালত অবমাননার লিখিত ব্যাখ্যা দাখিল করা হয়। এদিন এ বিষয়ে শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত বেঞ্চ আদেশ দেন।

বিএনপিপন্থি আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ জাগো নিউজকে জানান, এর আগে গত ১২ জুন আপিল বিভাগের দুই বিচারপতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন ও মিছিল সমাবেশ করার ঘটনায় আদালত অবমাননার মামলায় বিএনপির ছয় শীর্ষ আইনজীবী নেতাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে আদালত অবমাননার অভিযোগের বিষয়ে ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে তাদের লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ছয় আইনজীবী তাদের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা দাখিল করেন।

আরও পড়ুন>>>‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ বলায় উচ্চ আদালতের দুই বিচারপতির পদত্যাগ দাবি ‘শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ বলা বিচারপতিদের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ

আদালত অবমাননায় অভিযুক্ত ছিলেন সাত জন। তাদের মধ্যে সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী গত ২ মে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তাই তার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ বাদ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান আইনজীবী মাকসুদ উল্লাহ।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী ছাড়া আদালত অবমাননার অভিযোগ ওঠা বিএনপিপন্থি ছয় আইনজীবী হলেন- জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহ-সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট গাজী মো. কামরুল ইসলাম সজল।

Advertisement

আপিল বিভাগের দুজন বিচারপতি সম্পর্কে এক সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যের সূত্র ধরে এই আইনজীবীদের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৯ আগস্ট আদালত অবমাননার অভিযোগে আবেদন করা হয়। আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. নাজমুল হুদা।

আবেদনে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে গত বছরের ২৭ আগস্ট সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যের কয়েকটি লাইন উদ্ধৃত করা হয়। বিচারপতিদের নিয়ে ব্যানার-লিফলেটসহ বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মিছিল-অবস্থানের ছবিও আবেদনে যুক্ত করা হয়।

এর আগে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দুই বিচারকের পদত্যাগ দাবি করে সংবাদ সম্মেলন ও মিছিল-সমাবেশ করায় বিএনপিপন্থি সাত আইনজীবীকে আদালত অবমাননার ব্যাখ্যা দিতে বলেন আপিল বিভাগ। গত বছরের ১৫ নভেম্বর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে আদালত প্রাঙ্গণে মিছিল-সমাবেশের বিষয়েও রায় মেনে চলার নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।

গত বছরের ৩০ আগস্ট অবসরে যাওয়া প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হয়। এ বিষয়ে ব্যাখ্যাও তলব করেছিলেন সর্বোচ্চ আদালত।

একই বছরের ১৫ আগস্ট শোক দিবসের আলোচনা সভায় সংবিধান অনুসারে বিচারপতিরা শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ উল্লেখ করে বক্তব্য দেওয়ায় আপিল বিভাগের দুজন বিচারপতির বিরুদ্ধে একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। এছাড়া ওই দুজন বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখতে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে বিএনপিপন্থি আইনজীবী নেতারা মিছিল-সমাবেশ করেন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে গত বছরের ২৭ আগস্ট ওই সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে দেওয়া বক্তব্যের কয়েকটি লাইন উদ্ধৃত করে ২৯ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. নাজমুল হুদা আবেদনটি করেন। এতে বিচারপতিদের নিয়ে ব্যানার-লিফলেটসহ বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মিছিল ও অবস্থানের ছবি যুক্ত করা হয়।

দুদিন পর ২৯ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টে আদালত অবমাননার এ আর্জি জানান যুবলীগ সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী ও আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি। এদিন আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যুথি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চে এ আবেদনের বিষয়টি উপস্থাপন করেন।

তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, যেহেতু বেঞ্চ পুনর্গঠনের প্রয়োজন রয়েছে কাজেই ২৯ আগস্ট এ আবেদন শোনা যাবে না। তিনি তার সচিবের কাছে আবেদনটি জমা দিয়ে যেতে বলেন। আইনজীবী নাজমুল হুদার পক্ষে অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি এ আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়, বিচারপতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন ও মিছিল-সমাবেশ করায় বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে। বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালসহ সাতজনকে বিবাদী করে তাদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা হয়।

গত বছরের ৩০ আগস্ট আবেদনটি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য উঠেছিল। সেদিন আপিল বিভাগ আদালত প্রাঙ্গণে সমাবেশ, মিছিল, মানববন্ধন ও ধর্মঘট না করতে হাইকোর্টের ২০০৫ সালের ২৩ মে দেওয়া আদেশ কঠোরভাবে মেনে চলতে সবাইকে নির্দেশ দেন।

এফএইচ/এসআইটি/জেআইএম