দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনে অভিনেতা দীপক সুমনকে প্রায় সবাই চেনেন। গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্রজনতার পক্ষে তিনি সরব ছিলেন সামাজিক মাধ্যমে। সরকার পতনের পর পার্বতীপুরে নিজ বাড়িতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এই অভিনেতা। ঘটনার সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে ফেসবুকে বেশ কিছু পোস্টও দিয়েছেন তিনি। এতে নতুন এক বিপদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে এই অভিনেতাকে।
Advertisement
জানা গেছে, পার্বতীপুর উপজেলায় নিজ বাড়ির প্রবেশমুখে পার্কিং টাইলস বসানোকে কেন্দ্র করে বাকবিতণ্ডায় লাঞ্ছিত হয়েছেন সুমন। পৌরসভার সদ্যসাবেক কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলমের উপস্থিতিতে গত (৩০ অক্টোবর) বুধবার এই ঘটনা ঘটে। দীপক কুমার গোস্বামী ফেসবুকে লেখেন, ‘গত বুধবার রাতে পার্বতীপুরে আমার বাড়িতে এসে আনুমানিক ৫০ জনের সংঘবদ্ধ দল আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। আমি ভিডিও করতে গেলে আমার ফোন কেড়ে নেয়। আমি ফোন ফেরত চাওয়ার কারণে একপর্যায়ে সবাই মিলে আমাকে মারধর করে। আমার মা আমাকে রক্ষা করতে গেলে মাকেও আঘাত করে ওই গুণ্ডাবাহিনী।’
গণমাধ্যমকে দীপক সুমন বলেন, ‘হামলার নেতৃত্বে ছিলেন আমাদের গলির বিএনপির এক নেতা। তাকে উসকে দিয়েছেন একজন সাবেক কলেজশিক্ষক। আমার বাড়ির আশপাশে এই মুহূর্তে এদের অনেক দাপট। ঘটনায় বিএনপির একজন নারী নেত্রীও ছিলেন, যিনি আমার মাকে অকথ্য গালাগাল করছিলেন। আমি ভিডিও করতে গেলে তিনি বলেন, “ফোনটা কেড়ে নাও, নাহলে এই হিন্দুরা সংখ্যালঘু নির্যাতন হিসেবে এগুলো প্রচার করবে।” সাথে সাথে ওই সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা ঝাঁপিয়ে পড়ে আমার ওপর।’
কী ছিল এসব ঘটনার নেপথ্যের কারণ? জানতে চাইলে দীপক সুমন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের বাড়িটা অনেক আগে থেকে নিতে চাইছিল ওরা। আমার বাবা বাড়িটা বিক্রি করতে রাজি হননি। এ নিয়ে অনেক দিনের পুরোনো একটা সমস্যা ছিল। সম্প্রতি চলাচলের রাস্তার ওপরে পার্কিং টাইলস বসানোকে কেন্দ্র করে নতুন করে সমস্যা তৈরি করছে। বিএনপির সদ্যবিদায়ী ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসে আমার পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে। সে বোঝানোর চেষ্টা করছে, এলাকায় বসবাস করতে হলে তাদের বিরুদ্ধে যাওয়া যাবে না। এলাকার বিএনপির সম্ভাব্য এমপি পদপ্রার্থীর রেফারেন্সে সে নানা কথা বলেছে, যদিও আমি সেটা বিশ্বাস করিনি। এসব নিয়ে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।’
Advertisement
দীপক সুমনের এই ঘটনায় এরই মধ্যে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে প্রশাসন। তিনি জানান, দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও স্থানীয় থানার ওসি তাকে আশ্বস্ত করেছেন। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘আমাকে অনেক জায়গা থেকে ফোন করা হচ্ছে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে, এ রকম মানুষেরাও ফোন করছে। সংখ্যালঘু হিসেবে আমাকে নির্যাতন করা হয়েছে, এ রকম ট্রিটমেন্ট দেওয়ারও চেষ্টা করা হয়েছে, আমি সাড়া দিইনি। রংপুর বিভাগের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংগঠনের সভাপতি ফোন করেছিলেন। আমি তাকে বিনয়ের সঙ্গে কিছু করতে নিষেধ করেছি। প্রচলিত রাজনৈতিক যে ধারা এতদিন চলে আসছে, যার বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক লড়াইয়ে আমি জড়িত, সেই আমাকে সাম্প্রদায়িক বানিয়ে দেওয়ার পক্ষে আমি নই।’
অভিযুক্ত সাবেক কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘দীপকের ওপর কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। সুমনদের বাড়িতে গাড়ি উঠানোর জন্য চলাচলের রাস্তার ওপরে টাইলস বসানোকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের সাথে তর্ক হয়েছে। আমরা পারিবারিকভাবে খুবই আন্তরিক। তার বাবা আমার শিক্ষক। কিন্তু সুমন কেন এমন অদ্ভুত ব্যবহার করলো আমার মাথায় আসছে না।’
এমআই/আরএমডি/এমএস
Advertisement