নেত্রকোনার দুর্গাপুরে ঘরে দম্পতির হত্যার রহস্য ৯ বছরে উদঘাটন হয়নি। এ সময়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়েছে অন্তত আটবার। সর্বশেষ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটি তদন্ত করছিল। কারও নাম উল্লেখ না করেই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। এর ফলে কে বা কারা এ দম্পতির হত্যাকারী সেটি অজানাই রয়ে গেল।
Advertisement
পুলিশ ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২৩ অক্টোবর দুর্গাপূজার দশমীর দিন নিজের ভবনের তিনতলায় খুন হন ব্যবসায়ী অরুণ কুমার সাহা (৭৪) ও তার স্ত্রী হেনা রানী সাহা (৬৫)। অরুণ সাহা ছিলেন দুর্গাপুর পৌর শহরের মধ্যবাজার এলাকায় ‘সুবর্ণা প্লাজা’ নামের একটি মার্কেট এবং সেখানকার সুবর্ণা বস্ত্রালয়ের মালিক। তিনি ও তার স্ত্রী সুবর্ণা প্লাজার তৃতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। তাদের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। ছোট ছেলে সুদীপ কুমার সাহা ও মেয়ে সুলেখা সাহা ইতালি এবং বড় মেয়ে সুবর্ণা সাহা কানাডায় থাকেন। বড় ছেলে সুজিত কুমার সাহা মা-বাবার সঙ্গে থাকতেন। এখন সুজিত স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন।
হত্যাকাণ্ড যেদিন ঘটে তার আগের দিন সুজিত মা-বাবাকে বাসায় রেখে ঢাকায় যান। পরদিন সকাল ১০টার দিকে মা-বাবার খোঁজ নিতে মুঠোফোনে কল করেন। কিন্তু সংযোগ বিচ্ছিন্ন পান। পরে দুপুরের দিকে প্রতিবেশী কাকা অজিত কুমার সাহাকে কল করে খোঁজ নিতে বলেন। অজিত ও তার স্ত্রী সুচিত্রা তৃতীয় তলায় অরুণ-হেনা দম্পতির বাসার দরজা খোলা দেখে ভেতরে ঢুকে অরুণ ও হেনার গলাকাটা মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। ঘটনার তিনদিন পর সুজিত কুমার সাহা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, মামলার তদন্তের দায়িত্ব দুর্গাপুর থানা-পুলিশের কাছ থেকে ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) দেওয়া হয়। সিআইডি তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়। সিআইডির সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা নেত্রকোনা সিআইডিতে দায়িত্বে থাকা তখনকার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার শংকর কুমার দাস ২০১৭ সালের শেষ দিকে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন।
Advertisement
শংকর কুমার দাস জানান, এই জোড়া খুনের তদন্তভার এক বছর চলে যাওয়ার পর আমাকে দেওয়া হয়েছিল। অনেকদিন চলে যাওয়ায় খুনের আলামত নষ্ট হয়ে যায়। কিছুই সংরক্ষণ করা হয়নি। সন্দেহে থাকা কয়েকজনের ব্যবহৃত মুঠোফোনের কল রেকর্ডও পাওয়া যায়নি।
মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য পরে বাদী নারাজি আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে পিবিআইকে দায়িত্ব দেন। এরপর পিবিআইয়ের চারজন তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়। সর্বশেষ পরিদর্শক অভিরঞ্জন দেব তদন্ত শেষে গত জুনের প্রথম সপ্তাহে দুর্গাপুর চৌকি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিরঞ্জন দেব বর্তমানে সিলেটে ট্যুরিস্ট পুলিশে কর্মরত।
তিনি মোবাইলে বলেন, ক্রাইম সিনসহ খুনের প্রয়োজনীয় আলামত তখন সংরক্ষণ না করায় মামলাটি নিয়ে খুবই বেগ পেতে হয়। কোনো কিছু না পেয়ে শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। মামলাটি নিয়ে বাদীরও তেমন কোনো আগ্রহ ছিল না।
এ বিষয়ে বাদী সুজিত কুমার সাহা বলেন, আমার আগ্রহ নেই বিষয়টি এমন নয়। পুলিশ যখন ফোন করে আসতে বলত বা আদালতে যেতে বলত তখন আমি বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকতাম। এছাড়া দীর্ঘদিন তদন্ত করে রহস্য উদ্ঘাটন করতে না পারায় এখন হতাশ হচ্ছি। আমি চাই আমার মা-বাবার হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটিত হোক।
Advertisement
পিবিআই নেত্রকোনার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মো. রফিকুল আক্তার বলেন, রহস্য উদ্ঘাটন করতে না পেরে তখনকার পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার স্যারের পরামর্শে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
এইচএম কামাল/আরএইচ/এএসএম