ঢাকায় ৭ উইকেটে হেরে ১-০’তে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ কি ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে সিরিজ ড্র করার লক্ষ্য নিয়ে চট্টগ্রামে জিততে মাঠে নেমেছিল? নাকি পরাজয় এড়িয়ে মুখ রক্ষার ড্র’ই ছিল চট্টগ্রাম টেস্টের লক্ষ্য?
Advertisement
২৯ অক্টোবর জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টসের পর বাংলাদেশ একাদশ দেখার পর প্রায় সবার মনে সেই প্রশ্নই দেখা দিয়েছিল। সবাই বুঝে গিয়েছিলেন, বাংলাদেশ আসলে জিততে চায় না। যেহেতু ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি উইকেট, এখানে বাড়তি ব্যাটার নিয়ে মাঠে নেমে কোনরকমে প্রোটিয়া বোলিং আক্রমন সামলে ম্যাচ ড্র করতে পারলেও খানিক মুখ রক্ষা হবে। আর তাই একাদশে ৫ নম্বর বোলার না খেলে ৮ ব্যাটার নিয়ে মাঠে নামা।
কিন্তু জায়গামত দেখা গেল তার ফল শূন্য। ৮ ব্যাটার নিয়ে খেলেও কোন ইনিংসে ২০০ রানও করতে পারেনি শান্তর দল। সিরিজ ড্র করতে জয় ভিন্ন পথ নেই । প্রতিপক্ষকে দু’র অলাউট করতে হলে চাই কোয়ালিটি বোলিং। সেই সাথে বাড়তি বোলিং অপশন। কিন্তু ৪ বোলার নিয়ে দল সাজানোয় সে অপশন্টা ছিল না বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে। ২৯ অক্টোবর প্রথম দিনের খেলা শেষে প্রেস কনফারেন্সে আসলে কোচ ফিল সিমন্সের কাছে সে কারণ জানতে চান সাংবাদিকরা। মিডিয়ার সামনে এ ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বোঝানোর চেষ্টার করেন, কেন ৫ বোলার খেলানো হলো না? ব্যাটিং পিচে একজন বোলার কমিয়ে কি কারণে তারা (বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট) ৮ ব্যাটার নিয়ে একাদশ সাজালেন? সে কথার ব্যাখ্যাও দেয়ার চেষ্টা করেছেন সিমন্স।
তবে সে কথায় চিড়ে ভেজেনি। তিনি ঠিক পরিষ্কার করতে পারেননি বা এমন কোনো অকাট্য যুক্তিও দাঁড় করাতে পারেননি যে, ঠিক এই কারণেই বাংলাদেশ ৫ স্পেশালিস্ট বোলারের পরিবর্তে ৪ বোলার তথা ৮ ব্যাটার নিয়ে চট্টগ্রাম টেস্টে মাঠে নেমেছিলেন।
Advertisement
সিমন্স বলেছেন, ‘হ্যা আমরা ৫ স্পেশলিষ্ট বোলার খেলানোর কথাও ভেবেছিলাম। তবে শেষ পর্যন্ত আমরা আর সে পথে হাঁটিনি। ৪ বোলারের ফর্র্মুলায় একাদশ সাজিয়েছি। অর্থাৎ ৮ ব্যাটার খেলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
সরাসরি কোন মন্তব্য না করলেও বাংলাদেশের নতুন কোচের কথায় ছিল পরিষ্কার আভাস, তারা মনে করেছেন, যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাটিংয়েই ধুঁকছে, দলের প্রধান ঘাটতি, কমতি আর দূর্বল জায়গা ব্যাটিং। তাই ব্যাটিংটা সমৃদ্ধ করে তারপর দল সাজাই। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা কোনই কাজে দেয়নি।
ওপেনার সাদমান, জয়ের সাথে জাকির এবং জাকের আলী অনিকের কনকাশন হিসেবে শেষ মুহুর্তে কিপার কাম মিডলঅর্ডার অংকনকে দলে এনে তাকে খেলানো হলো; কিন্তু তারা কেউ কিছুই করতে পারেননি। সাদমান আর জয় নিজেকে মেলে ধরতে চরম ব্যর্থ। জাকিরের অবস্থাও তথৈবচ।
অংকন প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে ফিরলেও পরেরবার ২৯ করেছেন; কিন্তু তাতে কোনই লাভ হয়নি। বাড়তি ব্যাটারের অন্তর্ভুক্তিতে ইনিংস একবারের জন্য লম্বা হয়নি। দেখে মনেই হয়নি এ ম্যাচে বাংলাদেশের একাদশে ছিলেন ৮ ব্যাটার।
Advertisement
তবে পঞ্চম বোলারের অভাব অনুভুত হয়েছে। বিশেষ করে একজন বাড়তি স্পিনারের অভাব বোধ হয়েছে। যেহেতু উইকেটের কাছ থেকে তেমন সহায়তা পায়নি বোললা, তারওপর দক্ষিণ আফ্রিকার জর্জি ছাড়া ব্যাটারদের বড় অংশ ডানহাতি, সব মিলিয়ে মিরাজ কিছুই করতে পারেননি।
উইকেট যা পাওয়ার পেয়েছেন তাইজুল। বাঁ-হাতি হাসান মুরাদকে এ ম্যাচে ‘ট্রাই’ করে দেখা যেত। দক্ষিণ আফ্রিকা ঠিকই মিডলঅর্ডার কাম বাঁ-হাতি স্পিনার সেনুরান মুথুসামিকে খেলিয়ে বাজিমাত করেছে।
প্রথম ইনিংসে মাত্র তিনওভার বল করা এ বাঁ-হাতি স্পিনার পরেরবার বাংলাদেশের ব্যাটিং মেরুদন্ড ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে ঝুলিতে ভরেছেন ৪ উইকেট। সবার ওপরে রাবাদা বড় ত্রাস। ব্রেক থ্রু দিয়েছেন। সাথে প্যাটারসন আর কেশব মহারাজ; সঙ্গে সেনুরান মুথুসামি যোগ হওয়ায় প্রোটিয়া বোলিংয়ের ধার বাড়ে আরও।
দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটাররা এই বাঁ-হাতি স্পিনারকেই দিয়েছেন ৪ উইকেট। আর তাই দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৪৩.৪ ওভারে গুঁড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের মাটিতে এসে বাড়তি স্পিনার তাও বাঁ-হাতি স্পিনার দলভুক্ত করে সাফল্যর মুখ দেখলো প্রোটিয়ারা। আর বাংলাদেশ ঘরের মাঠে অদুরদর্শী দল সাজিয়ে আর যাচ্ছে-তাই ব্যাট করে ডুবলো আরও একবার।
এআরবি/আএইচএস