বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ঠিকাদারদের এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ঠিকাদার নেতারা ৯ দফা দাবি জানান।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) রাজধানীর এক রেস্তোরাঁয় পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকাদার সমিতির মতবিনিময় সভায় এ নয় দফা দাবি উত্থাপন করা হয়।
এ সময় ঠিকাদার সমিতির নেতারা বর্তমানে ঠিকাদারির সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় ও সেগুলো সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করেন। তাদের দাবিগুলো হলো-
১. বর্তমানে সকল কাজের ক্ষেত্রে ওএমটি পদ্ধতিতে টেন্ডার আহ্বানের ফলে কয়েকজন নির্ধারিত ঠিকাদার সব কাজ বরাদ্দ পাচ্ছেন। এতে আঞ্চলিক সাধারণ ঠিকাদারা পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ছিটকে পড়ছেন। এই বিদ্যমান অবস্থার অবসানের জন্য অনুন্নয়ন রাজস্ব খাতের সব কাজ এলটিএম ভিত্তিতে বাস্তবায়ন এবং এডিপিভুক্ত সব প্রকল্পের কাজের ন্যূনতম ১০ শতাংশ কাজ এলটিএম ভিত্তেতে করতে প্রয়োজনে প্রকিউরমেন্ট প্ল্যান সংশোধন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
Advertisement
২. ঠিকাদারদের ইন্স্যুরেন্স করতে প্রিমিয়াম ও ভ্যাট বাবদ যে অর্থ একতরফা তাদের চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো সিন্ডিকেট করে সাধারণ বীমা করপোরেশন থেকে ইন্স্যুরেন্স করা বাধ্যতামূলক করেছে তা তাদের ওপর জুলুম। এ অবস্থায় চলমান কাজে ইন্স্যুরেন্স সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যয় ভেরিয়েশন হিসেবে প্রতিটি কাজের বিপরীতে প্রদান ও ভবিষ্যতের সব টেন্ডারে ইন্স্যুরেন্স আইটেম বাবদ ফিক্সড রেট আইটেম অন্তর্ভুক্ত এবং ইন্স্যুরেন্স সংক্রান্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জারি করা সার্কুলার অবিলম্বে বাতিলের আহ্বান জানানো হয়।
৩.সরকার গঠিত টাস্কফোর্স হরহামেশাই সাইট থেকে ব্যাগের নমুনা সংগ্রহ করে কোনো ব্যত্যয় পেলেই ব্যাগ বাতিল করে। প্রতিটি গণনার সময় নমুনা সংগ্রহ ও টেস্ট সম্পাদনের যাবতীয় ব্যয় তাদের বহন করতে হয়। এ টেস্টের ফলাফল ঠিকাদারদের সরবরাহ করা হয় না এবং অনেক বিলম্বে তারা মৌখিকভাবে জানতে পারেন। তখন ব্যাগ বাতিলের বিষয়ে জিও-টেক্সটাইল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে কোনো অভিযোগই গ্রহণযোগ্য হয় না। এ অবস্থায় টাস্কফোর্স কর্তৃক সব জিও-টেক্সটাইল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে পানি উন্নয়ন বোর্ডে তালিকাভুক্ত করে জিও-ব্যাগ গণনার সময় যে নমুনা ফেল করবে, তাকে টাস্কফোর্সে কালো তালিকাভুক্ত করতে হবে।
আরও পড়ুনএবার অনলাইনে বাণিজ্য মেলার স্টল বরাদ্দ১০০ টাকার প্রাইজবন্ডে ৬ লাখ টাকার পুরস্কার পেলেন যিনি৪. কোনো কাজে এক হাজার ব্লক টেস্ট করার পর যদি একটি ব্লকের শক্তি যাচিত শক্তির নিচে নামে তাহলে গণনা করা সব ব্লকের ওপর শতকরা হারে ব্লক বাতিল করা হয়। একই সঙ্গে সেই তারিখে নির্মিত সব ব্লকও বাতিল করা হয়। এটি সরাসরি অন্যায়, অনৈতিক এবং ন্যায়বিচারের পরিপন্থি। এতে ঠিকাদার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এজন্য একই সঙ্গে গণনা করা ও গৃহীত সব নমুনার প্রাপ্ত শক্তির গড় হিসেবে টাস্কফোর্সের ফলাফল নির্ধারণ করতে হবে। ব্লক বাতিলের ক্ষেত্রে রিডাকশন ফ্যাক্টর হিসেবে যথাক্রমে ১. ১.৫, ২, ২.৫, ৩ ও ৩.৫ ধরে হিসেব করতে হবে।
৫. সব কাজের ক্ষেত্রে প্রি এবং পোস্ট ওয়ার্ক পরিমাপ গ্রহণের ক্ষেত্রে যৌথ সইয়ের বিধান থাকলেও এটা অনুসরণ করা হচ্ছে না। এছাড়া নদী/খালের যে কোনো ড্রেজিং কাজের ক্ষেত্রে পরিমাপ গ্রহণে বিলম্বের কারণে ড্রেজিং করা জায়গায় ব্যাপক সিলট্রেশন ও বাঁধ নির্মাণ সমাপ্তির পরও পরিমাপ গ্রহণে বিলম্ব হওয়ায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ অবস্থায় যৌথ পরিমাপ গ্রহণের পর কাজের ভৌত পরিমাণ নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে অবহিত করা ও সব ড্রেজিং ও বাঁধের কাজের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ দৈর্ঘ্যে সেগমেন্ট বিবেচনা করে এক বা একাধিক সেগমেন্টের কাজ শেষ হলে সমাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে।
Advertisement
৬. অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় টাকা বরাদ্দের পরও বিভিন্ন বিভাগীয় দপ্তর থেকে বিল প্রদানে অস্বাভাবিক বিলম্ব হয়। বিল বিলম্বের কারণে ঠিকাদারের ব্যাংক লোনের সুদের পরিমাণ বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় অর্থ বরাদ্দের ১০ দিনের মধ্যে প্রকল্পের চলমান সব কাজের বিল প্রণয়ন করে একই সঙ্গে দপ্তরে পাঠানোর মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের জন্য জোর দাবি জানানো হয়।
৭. সম্পাদিত কাজের পিজি রিলিজ, চূড়ান্ত বিল প্রণয়ন, সার্টিফিকেট ইস্যু এবং রিটেনশন মানি ফেরত কঠিন হওয়ায় এবং অধিকাংশ কর্মকর্তা অনীহা প্রদর্শনসহ নানান কারলে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। এ অবস্থায় অচিরেই কোনো কাজ শেষ হওয়ার ২৮ দিনের মধ্যে পিজি রিলিজ করতে হবে। এছাড়া কাজ শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে চূড়ান্ত বিল প্রণয়ন করে কমপ্লিশন সার্টিফিকেট ইস্যু করতে হবে।
৮. অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট এলাকার তালিকাভুক্ত ঠিকাদারদের পরিবর্তে দূরবর্তী এলাকা থেকে ঠিকাদার আমদানি করা হয়। আপতকালীন কাজ বাস্তবায়নের সময় নির্বাহী প্রকৌশলী সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে কাজ সম্পর্কিত কোনো তথ্য বা নথি সরবরাহ করেন না। সবকিছুই গোপন বা অপ্রকাশিত থাকায় বিলের অংশবিশেষ বেনামে গোপনে আত্মসাৎ করা হয়। এই অবৈধ কাজ বন্ধ হওয়া জরুরি। এ অবস্থায় আপৎকালীন কাজ বাস্তবায়ন তদারকির জন্য পাউবোর স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং প্রধান প্রকৌশলীর প্রতিনিধি নিয়োজিত করতে হবে।
৯. বাংলাদেশ ঠিকাদার সমিতি সরকারি নিবন্ধিত ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অন্যতম ডেভেলপমেন্ট পার্টনার। এই সংস্থার জন্য পানি ভবনে কোনো অফিস স্পেস বরাদ্দ নেই। তাই পানি ভবনে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকাদার সমিতির জন্য একটি যথাযথ কক্ষ বরাদ্দের দাবি জানানো হয়।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন ন্দকার শাহিন আহমেদ। আরাধনা এন্টারপ্রাইজের মাহবুবুল হক রিপনের সঞ্চালনয় সভায় উপস্থিত ছিলেন খায়রুল হুদা, ভাওয়াল কন্সট্রাকশন লিমিটেডের ফকরুদ্দিন আহমেদ, ইব্রাহিম ট্রেডার্সের বাচ্চু মিয়া, নিয়াজ ট্রেডার্সের নিয়াজ আহমেদ খান, এএইচএম সাইফুল্লাহ রুবেল, প্রকৌশলী হুমায়ুন কবির, বিপ্লব কুমার গুণ বাবু, ইন্জিনিয়ার ইয়াসিন মোল্লা প্রমুখ।
কেএসআর/জেআইএম