কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গজুড়েই চলছে দীপাবলি উৎসব। কলকাতার অলি-গলি, বাড়ির ছাদ সেজেছে নিয়ন আলোয়। এমনকি কলকাতার এক টুকরো ছোট্ট বাংলাদেশ নামে পরিচিত নিউমার্কেট চত্বরও উৎসবের আমেজে সেজে উঠেছে। কিন্তু চলতি বছরের দীপাবলি উৎসবেও চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন কলকাতার নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা।
Advertisement
প্রতি বছরের মতো এই দীপাবলির সময় কলকাতায় প্রচুর বাংলাদেশি পর্যটক ভিড় জমায়। কিন্তু এবারের দীপাবলি উৎসবের চিত্র ভিন্ন। পূজার মৌসুমে জুলাই মাস থেকেই কলকাতার হোটেলগুলোতে বুকিং দেওয়া শুরু করেন বাংলাদেশি পর্যটকরা। কিন্তু চলতি বছরের পূজার মৌসুমে দেখা নেই কোনো বাংলাদেশি পর্যটকের।
এই মুহূর্তে যে কয়েকজন বাংলাদেশি পর্যটক কলকাতায় অবস্থান করছেন তারা প্রায় সবাই চিকিৎসার জন্যই এসেছেন। তারা ভারতে এসেছেন তাদের আগে করানো পুরোনো ভিসায়।
কলকাতা অথবা চেন্নাইয়ে চিকিৎসা করাতে এসে বাংলাদেশি পর্যটকরা ভ্রমণ করার সময় পান না। ফলে কলকাতার নিউমার্কেটের হোটেল ব্যবসায়ী ও ট্রাভেল এজেন্সিগুলো এক প্রকার মাথায় হাত বলা যায়।
Advertisement
কলকাতার নিউমার্কেট চত্বরে যারা বিমান ও ট্রেনের রিজার্ভেশনের টিকিট বিক্রি করে কমিশনের ওপর নির্ভর করে তারাও অনেকে ব্যবসা বন্ধ করার মুখে।
এছাড়া নিউমার্কেট চত্বরের ফুটপাতে ছোট ছোট ব্যবসায়ীরাও নির্ভর করে বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর। কিন্তু বাংলাদেশি পর্যটকদের অভাবে তাদের ব্যবসাও বন্ধের মুখে।
এই বিশাল ক্ষতি শুধু বাংলাদেশি পর্যটকদের অভাবে। বাংলাদেশি পর্যটক না থাকায় চরম লোকসানের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে নিউমার্কেট চত্বরের ব্যবসায়ীরা।
ভারতীয় ভিসার জটিলতার কারণে কলকাতায় দেখা নেই বাংলাদেশি পর্যটকদের- এমনটাই মনে করছেন নিউমার্কেট চত্বরের ব্যবসায়ীরা।
Advertisement
কলকাতার মার্কোস্ট্রিটের হোটেল ব্যবসায়ী মনোতোষ সরকার বলেন, একটি হোটেলের বিদ্যুৎ খরচ, কর্মচারীদের বেতন, হোটেলের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ সবমিলিয়ে প্রতি মাসে প্রায় ৩ লাখ রুপি খরচ হয়। অনেক সময় দেখা যায় এ খরচের পরিমাণটাও অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু এখন এই পরিস্থিতিতে সেই সব খরচের রুপি নিজেদের পকেট থেকে দিতে হচ্ছে।
মনোতোষ সরকার আরও বলেন, আমাদের এখানকার ব্যবসা পুরোটাই নির্ভর করে বাংলাদেশি অতিথিদের ওপর। এখন কিছু ভিসার জটিলতার কারণে এই মুহূর্তে বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা অনেকটাই কম। তবে আশা করছি এ সমস্যা দ্রুত মিটে যাবে।
কলকাতার মার্কোস্ট্রিটের বাংলাদেশি রসনাতৃপ্তির খাবারের হোটেলগুলোও নির্ভর করে বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর। সেখানকার একটি হোটেলের মালিক বলেন, আমাদের এই অঞ্চলের বেশিরভাগ খাবারের হোটেলগুলোতে পাওয়া যায় বাংলাদেশি খাবার। পুরোটাই নির্ভর করে বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর। কিন্তু এই মুহূর্তে কোনো বাংলাদেশি পর্যটক নেই। রাঁধুনি এবং কর্মচারীদের বেতন নিজের পকেট থেকে দিতে হচ্ছে। জানি না কতদিন এভাবে চলবে। তবে আশা রাখছি ভিসা সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে।
কলকাতা নিউমার্কেট চত্বরের ব্যবসায়ীরা পুরোটাই নির্ভর করে বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর। আগে প্রতিদিন এই চত্বরে লাখ লাখ বাংলাদেশি পর্যটকের আনাগোনা ছিল। পূজার মৌসুমে এ সংখ্যা আরও বাড়ে। এই বিশাল অঞ্চলে বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৬০০শ পর্যটক রয়েছে। তারা উন্নত চিকিৎসার জন্য এখানে এসেছেন।
আরও পড়ুন: বিশ্বের অন্যতম সেরা শহরের তালিকায় নাম লেখালো কলকাতা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে ক্ষমা চাইলেন নরেন্দ্র মোদী আলোর উৎসবে মেতে উঠতে প্রস্তুত পশ্চিমবঙ্গকলকাতার নিউমার্কেট চত্বরের ব্যবসায়ীরা আশা করছেন যে, দ্রুত ভিসার জটিলতা মিটে যাবে এবং আবারও বাংলাদেশি পর্যটকদে আনাগোনা বাড়বে কলকাতার এই ছোট্ট এক টুকরো বাংলাদেশে।
ডিডি/টিটিএন