দেশজুড়ে

সড়ক ভেঙে অকেজো ৬ কোটি টাকার ব্রিজ

ছয় কোটি টাকার বেশি অর্থে ঠাকুরগাঁওয়ে এলজিইডির তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করা হয় ব্রিজ ও প্রায় এক কিলোরমিটার সংযোগ সড়ক। তবে বছর পার হতে না হতেই বৃষ্টিতে সড়ক ভেঙে তা অচল হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সদর উপজেলার আসাননগর ও রাজাগাঁও ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ। বর্তমানে ব্রিজের ওপর দিয়ে চলছে না কোনো ধরনের ভারি যানবাহন।

Advertisement

গত তিন মাস থেকে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ব্রিজটি অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে সাড়ে ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজটি মানুষের কোনো উপকারে আসছে না। বরং ব্রিজের সংযোগ সড়কটি এখন পথচারীদের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সংযোগ সড়কের বেহাল দশা নিয়ে স্থানীয়রা এলজিইডি কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অবগত করলেও তারা আমলে নেয়নি। ফলে রাজাগাঁও ইউনিয়নের আসাননগর ও খড়িবাড়ি এলাকার অধিকাংশ কৃষককে উৎপাদিত পণ্য শহরের পাইকারি বাজারে নিতে বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে।

জানা গেছে, ২০১৯ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ২৫০০.০০ মিটার দৈর্ঘ্যের পিএসসি গার্ডার ব্রিজটি নির্মাণ করে। সঙ্গে প্রায় এক কিলোমিটার সংযোগ সড়কও রয়েছে। আর এর ব্যয় ধরা হয় প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা। এ কাজটি বাস্তবায়ন করেছেন জামাল হোসেন নামে এক ঠিকাদার। কাজ শেষে গত বছরের ২ মার্চ ব্রিজটি উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলী সদস্য ও ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ সেন।

Advertisement

ব্রিজটি উদ্বোধনের পর থেকেই কয়েকবার সড়কের দেওয়াল ও ব্লকসহ নদীতে ধসে যায়। স্থানীয়রা তাৎক্ষণিকভাবে বালুর বস্তা দিয়ে সাময়িক সংস্কার করে ধস ঠেকায়। কিন্তু এবারের সামান্য বৃষ্টিতে আবারো ব্রিজটির পশ্চিম তীরের সড়কের একটি অংশ ব্লক ভেঙে যায়।

এছাড়া সড়ক ভেঙে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। এভাবে কয়দিন থাকার পর স্থানীয়রা বালুর বস্তা ও বাঁশ দিয়ে সংস্কার করে চলাচলের ব্যবস্থা করেন। তবে মানুষ ছাড়া কোনো ভারি যানবাহন চলাচল করতে পারছে না ব্রিজটি দিয়ে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ছোট্ট একটা ব্রিজ আর সাড়ে ৭শ মিটারের রাস্তার কাজে এতো টাকা বরাদ্দ হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি, ঠিকাদার ও এলজিইডি কর্তৃপক্ষ লাখ লাখ টাকা লুটপাট করে খেয়েছে। তা না হলে এমন অবস্থা সৃষ্টি হতো না। আমরা দাবি করছি এ কাজের সঠিক তদন্ত হোক। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষ ও বিভাগীয় দায়িত্বরতরা কাজের মান পরীক্ষা করলেই অর্থ লুটের বিষয়টি বেরিয়ে আসবে। সেইসঙ্গে সড়ক সচলের উদ্যোগ নিয়ে জনগণের ভোগান্তি দূর করবে এমনটাই আশা তাদের।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল কাদের জানান, এ প্রকল্পের আওতায় শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। পরবর্তীতে তা বাড়িয়ে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা করা হয়। গেলো টানা বর্ষণে ব্রিজের কোনো ক্ষতি না হলেও সংযোগ সড়ক ভেঙে গেছে। বিষয়টি আমরা অবগত। ঊর্ধ্বতনদের কাছে পত্র পাঠানো হয়েছে, বরাদ্দ পেলেই সংস্কার করা হবে।

Advertisement

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মামুন বিশ্বাস বলেন, ব্রিজটির সঙ্গে সংযোগ সড়ক সংস্কার জরুরি। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত সংস্কার করার জন্য। এরইমধ্যে সংস্কারের জন্য ঢাকায় এস্টিমেট পাঠানো হয়েছে। অপেক্ষায় আছি বরাদ্দের জন্য। তবে এ কাজে কোনো অনিয়ম ও অর্থ লুট হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

এফএ/এএসএম