ফেনীর সোনাগাজীতে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। বুধবার (৩০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় উপজেলা শহরে এ ঘটনা ঘটে।
Advertisement
ঘটনার পর সোনাগাজী উপজেলা ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক (সহসভাপতি পদমর্যাদা) মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, কেন্দ্রীয় সংসদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক, ফেনী জেলা শাখার অধীনস্থ সোনাগাজী উপজেলা ছাত্রদলের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো। শিগগিরই এ ইউনিটের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বুধবার এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন।
Advertisement
এ ব্যাপারে ফেনী জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সালাহ উদ্দিন মামুন বলেন, কেন্দ্রীয় পরিষদ থেকে কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে দ্রুতই সাংগঠনিক প্রক্রিয়া শুরু হবে।
এর আগে সোনাগাজীতে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। বুধবার সন্ধ্যায় উপজেলা শহরে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর ছাত্রদলের দুই গ্রুপ পৃথক স্থানে সংবাদ সম্মেলনে পরস্পরকে দোষারোপ করে বক্তব্য রাখেন। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাটি তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেয় জেলা ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ।
দলীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রের দাবি, গত সোমবার দলীয় কোন্দলের জের ধরে সোনাগাজী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের কর্মী মিরাজ ও রায়হানকে মারধর করেন দলীয় প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনার প্রতিবাদে মিরাজ-রায়হানের অনুগতরা মঙ্গলবার বিকেলে সোনাগাজীতে বিক্ষোভ করে প্রতিবাদ জানিয়ে হুংকার ছাড়েন। ওই হুংকারের প্রতিবাদে বুধবার বিকেলে মিরাজ-রায়হানের প্রতিপক্ষ গ্রুপ জিরোপয়েন্ট থেকে একটি বিক্ষোভ বের করে হাইস্কুল পর্যন্ত গিয়ে ফেরার পথে হঠাৎ পেছন থেকে অতর্কিত হামলার শিকার হন। এ সময় পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও হুইহুল্লোড়ে চতুর্দিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এতে ছাত্রদল নেতাকর্মী ও পথচারীসহ অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
ঘটনার পর সন্ধ্যায় কলেজ রোডের গার্লস স্কুলের সামনে সোনাগাজী উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সোহাগ ও যুগ্ম আহ্বায়ক মিজবাহ উদ্দিন পিয়াস সাংবাদিকদের বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল নিয়ে জিরোপয়েন্ট থেকে পশ্চিমবাজার হাইস্কুল পর্যন্ত গিয়ে ফিরে আসার সময় ছাত্রদল-যুবদলের কিছু কর্মী পেছন থেকে হামলা করে। এতে অনেকেই আহত হয়েছে।
Advertisement
অপরদিকে চর দরবেশ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নুর ইসলাম রিয়াদ ও পৌরসভা ছাত্রদলের সদস্য সচিব রহমত উল্লাহ শাহীন দাবি করেন, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সোহাগ নুরের নেতৃত্বে একটি মিছিল থেকে কোনো রকম উসকানি ছাড়াই আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করা হয়েছে।
ফেনী জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলম মিলন জানান, সোনাগাজীতে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ায় বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার কথা মোবাইলে জানতে পেরেছি। ঠিক কী কারণে সেখানে এমন পরিস্থিতি হয়েছে তা নিশ্চিত করে জানি না। এ বিষয়ে সাংগঠনিকভাবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত উপসহকারী মেডিকেল অফিসার সাদেকুল করিম আরাফাত জানান, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনায় আহত ১৩ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এরমধ্যে আমরা দুইজনকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছি। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। রাত অবধি এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জমান জানান, সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী সদস্যরা রাস্তায় নেমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এবিষয়ে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আবদুল্লাহ আল-মামুন/এফএ/এএসএম