আইন-আদালত

গণহত্যা মামলায় প্রথম কারাগারে পুলিশ কর্মকর্তা জসিম

জুলাই-আগস্ট গণহত্যার ঘটনায় করা মামলায় গ্রেফতার হওয়া পরোয়ানাভুক্ত আসামি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের সাবেক উপ-কমিশনার (ডিসি) জসিম উদ্দীন মোল্লাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। জুলাই-আগস্ট গণহত্যার ঘটনায় প্রথম কোনো আসামি হিসেবে পুলিশের এ কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠালো ট্রাইব্যুনাল। 

Advertisement

বুধবার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে এ সংক্রান্ত মামলায় তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এদিন বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জসিম উদ্দীন মোল্লাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এরপর ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় থেকে বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটের দিকে এজলাস কক্ষের কাঠগড়ায় তোলা হয়। এর কয়েক মিটির পর তার গ্রেফতারি পরোয়ানা ও অন্যান্য বিষয়ে শুনানি হয়।

আরও পড়ুন

Advertisement

গণহত্যা মামলায় ডিসি জসিম ট্রাইব্যুনালে গণহত্যা মামলায় সাবেক ডিসি জসিম গ্রেফতার

বুধবার (৩০ অক্টোবর) বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটের দিকে জসিম উদ্দীন মোল্লাকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে ট্রাইব্যনালে নিয়ে আসা হয়। এরপর তাকে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানার ১২২ নম্বর কক্ষে রাখা হয়। হাজতখানার ভেতরে পায়চারি করছিলেন তিনি। মাঝে মাঝে হাজতখানার ভেতরে থাকা চেয়ারে বসলেও পুরো সময় তাকে বিমর্ষ দেখা গেছে।

একপর্যায়ে হাজতখানার সামনে থাকা পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি কাঁদতে থাকেন। বারবার টিস্যু দিয়ে মুখ মুছছিলেন পুলিশের এই শীর্ষপদস্থ কর্মকর্তা। এরপর তাকে ট্রাইব্যুনালের এজলাস কক্ষে নিয়ে আসা হয়। এজলাসের কাঠগড়ায় থাকা চেয়ারে তিনি বসেছিলেন। বিকেল ৪টা ৪২ মিনিটে ট্রাইব্যুনালের এজলাস কক্ষে বিচারপতিরা প্রবেশ করেন। এসময় প্রসিকিউশন টিম উপস্থিত থাকলেও পুলিশ কর্মকর্তা জসিমের পক্ষে কোনো আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন না।

শুনানিকালে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালকে বলেন, আজ রংপুর থেকে ভোর বেলা পুলিশের মিরপুর জোনের সাবেক ডিসি জসিম উদ্দীন মোল্লাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার বাড়ি যেহেতু গোপালগঞ্জে তাই তাকে সেই জেলার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে গ্রেফতার দেখিয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আগে যে মামলায় ওয়ারেন্ট ছিল সেই মামলার তদন্তের স্বার্থে তাকে কারাগারে পাঠানো হোক।

পরে ট্রাইব্যুনাল মামলার বিষয়ে যথাযথ তদন্তের স্বার্থে আসামি জসিম উদ্দীন মোল্লাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২০ নভেম্বর দিন ঠিক করেন। আদেশের পর ট্রাইব্যুনালের এজলাস থেকে আসামিকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

Advertisement

এর আগে গণহত্যায় অভিযুক্ত আসামি হিসেবে বুধবার সাবেক ডিসি জসিম উদ্দিনকে রংপুর থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর মাধ্যমে জুলাই-আগস্ট গণহত্যার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া প্রথম কোনো আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলো।

 

আরও পড়ুন

সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুরসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম জানান, প্রাথমিক তদন্তে জসিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেয়েছে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম।

এর আগে গত ১৩ আগস্ট রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপসচিব মো. মাহবুর রহমান শেখের সই করা পৃথক প্রজ্ঞাপনে জসিম উদ্দীনকে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়।

এর আগে তিনি ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার ছিলেন। গত ২৭ অক্টোবর চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ ১৭ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। আগামী ২০ নভেম্বর তাদের হাজির করার আদেশ দেন আদালত। জসিম সেই ১৭ জনের একজন।

এফএইচ/এমকেআর/এমএস