ধর্ম

জীবনের সব ক্ষেত্রে ইসলামের অনুসরণ জরুরি

ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইসলামের দিক-নির্দেশনা ও বিধি-বিধান রয়েছে। কেউ যদি ইসলাম অনুসরণ করতে চায়, তার কর্তব্য পরিপূর্ণভাবে ইসলাম অনুসরণ করা। নিজের পছন্দ অনুযায়ী ইসলামের কিছু বিধান মেনে, কিছু বিধান ছেড়ে দিলে তা ইসলাম বা আল্লাহর বিধান ও শরিয়ত অনুসরণ করা হয় না, বরং নিজের খেয়ালখুশির অনুসরণ করা হয়। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন,

Advertisement

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُبِينٌ فَإِنْ زَلَلْتُمْ مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَتْكُمُ الْبَيِّنَاتُ فَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

হে মুমিনগণ, তোমরা সর্বাত্মকভাবে ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সুস্পষ্ট নিদর্শন তোমাদের কাছে আসার পর যদি তোমাদের পদস্খলন ঘটে তবে জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়। (সুরা বাকারা: ২০৮, ২০৯)

এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, তারা যেন দীনের সমস্ত শরয়ী বিষয়ের ওপর অটল থাকে এবং কোনো কিছু বাদ না দেয়। তারা যেন তাদের মতো না হয় যারা নিজেদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। কারণ এসব লোক শরীয়তের যেসব বিষয় তাদের প্রবৃত্তির সঙ্গে মেলে সেগুলো পালন করে এবং যেগুলো তাদের প্রবৃত্তির সঙ্গে মেলে না সেগুলো পালন করে না। অথচ উচিত হলো প্রবৃত্তি ও স্বভাবকে শরীয়ত অনুযায়ী গঠন করে এবং সাধ্যের মধ্যে সমস্ত বিধান পালন করা ও কল্যাণকর কাজ করা। আর সাধ্যের বাইরে যে-সকল বিধান ও আমল রয়েছে সেগুলোর জন্য নিয়ত ও সংকল্প করা। নিয়তের দ্বারাও সওয়াব মেলে।

Advertisement

ইসলামে সর্বাত্মকভাবে প্রবেশের পর শয়তানের পথ ও পদাঙ্ক পরিত্যাগ না করে কোনো উপায়ই নেই। শয়তান মুসলমানদের প্রকাশ্য শত্রু। সে কেবল অশ্লীল, গর্হিত ও নিন্দনীয় কাজেরই নির্দেশ দেয় এবং ক্ষতি ছাড়া আর কিছু চায় না। বান্দার পদস্খলন ও বিচ্যুতি ঘটতে পারে, তাই আল্লাহ তাআলা বলেছেন, সুস্পষ্ট নিদর্শন (সুনিশ্চিত জ্ঞান) আসার পরও যদি তোমাদের পদস্খলন ঘটে তবে জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহ মহাপরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়। এতে অত্যন্ত কঠিন ধমকি রয়েছে। সুতরাং পদস্খলন ও বিচ্যুতি যাতে না ঘটে তার সর্বদা সর্তকা থাকা উচিত এবং যে-কোনো ধরনের স্খলন থেকে দূরে থাকা উচিত। কারণ, প্রত্যেক পাপীই তার প্রাপ্য শাস্তি পাবে। এটাই আল্লাহর হিকমত। (তাফসিরে সা‘দী: ৯৪)

যারা ইসলামকে শুধু মসজিদ ও ইবাদতের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে, সামাজিক আচার-ব্যবহারকে ইসলামের সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত বলে মনে করে না, তাদের জন্য এই আয়াতে কঠিন সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। তথাকথিত দীনদারদের মধ্যেই ত্রুটি বেশি দেখা যায়। এরা দৈনন্দিন আচার-আচরণ, বিশেষত সামাজিকতার ক্ষেত্রে পারস্পরিক যেসব অধিকার রয়েছে সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। মনে হয় এরা যেন এসব রীতিনীতিকে ইসলামের নির্দেশ বলেই বিশ্বাস করে না। তাই এগুলো জানতে-শিখতেও যেমন এদের কোনো আগ্রহ নেই, তেমনি এগুলোর অনুশীলনেও এদের কোনো ইচ্ছা নেই। (তাফসিরে মা‘আরিফুল কোরআন: ১/৪৭৩)

কোরআনের আরেকটি আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইয়াহুদিদের দীনের কিছু অংশ মানা আর কিছু অংশ ছেড়ে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, এই কাজের পরিণাম হলো দুনিয়ার লাঞ্ছনা ও আখেরাতের কঠোর শাস্তি। ইরশাদ হচ্ছে,

اَفَتُؤۡمِنُوۡنَ بِبَعۡضِ الۡكِتٰبِ وَ تَكۡفُرُوۡنَ بِبَعۡضٍ ۚ فَمَا جَزَآءُ مَنۡ یَّفۡعَلُ ذٰلِكَ مِنۡكُمۡ اِلَّا خِزۡیٌ فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ۚ وَ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ یُرَدُّوۡنَ اِلٰۤی اَشَدِّ الۡعَذَابِ ؕ وَ مَا اللّٰهُ بِغَافِلٍ عَمَّا تَعۡمَلُوۡنَ

Advertisement

তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশে ঈমান রাখ আর কিছু অংশ অস্বীকার কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা তা করে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনা ছাড়া তাদের কী প্রতিদান হতে পারে? আর কেয়ামতের দিনে তাদেরকে কঠিনতম আজাবে নিক্ষেপ করা হবে। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে গাফেল নন। (সুরা বাকারা: ৮৫)

মুসলিম মানে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী। মুসলিম হতে হলে অবশ্যই মহান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে। জীবন গঠন ও পরিচালন করতে হবে তার বিধান অনুযায়ী, তার পছন্দ ও ইচ্ছা অনুযায়ী। কোরআনে আল্লাহ তাআলা আদর্শ মুসলিম হিসেবে তার নবি ও খলিল ইবরাহিমের (রা.) কথা উল্লেখ করেছেন যে তিনি আল্লাহর কাছে নিঃশর্ত ও পরিপূর্ণভাবে নিজেকে সমর্পন করেছিলেন। এটাই প্রকৃত মিল্লাতে ইবরাহিম বা মিল্লাতে ইসলাম। সব মুসলমানের কর্তব্য আল্লাহর এই মহান নবিকে অনুসরণ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَ مَنۡ یَّرۡغَبُ عَنۡ مِّلَّۃِ اِبۡرٰهٖمَ اِلَّا مَنۡ سَفِهَ نَفۡسَهٗ وَ لَقَدِ اصۡطَفَیۡنٰهُ فِی الدُّنۡیَا وَ اِنَّهٗ فِی الۡاٰخِرَۃِ لَمِنَ الصّٰلِحِیۡنَ اِذۡ قَالَ لَهٗ رَبُّهٗۤ اَسۡلِمۡ ۙ قَالَ اَسۡلَمۡتُ لِرَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ

আর যে নিজকে নির্বোধ বানিয়েছে, সে ছাড়া কে ইবরাহিমের আদর্শ থেকে বিমুখ হতে পারে? আর অবশ্যই আমি তাকে দুনিয়াতে মনোনীত করেছিলাম এবং সে আখেরাতে নেককারদের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। যখন তার রব তাকে বললেন, ‘তুমি আত্মসমর্পণ কর’। সে বলল, ‘আমি সকল সৃষ্টির রবের কাছে নিজকে সমর্পণ করলাম’। (সুরা বাকারা: ১৩০, ১৩১)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে নবি ইবরাহিমের মতো ইসলামের পূর্ণ অনুসরণ করে দুনিয়া ও আখেরাতে সফল হওয়ার তওফিক দান করুন!

ওএফএফ/জিকেএস