অভিনেতা হিসেবে সর্বজনের কাছে শ্রদ্ধেয় হলেও একাধারে তিনি নন্দিত নির্মাতা, লেখক ও চিত্রশিল্পী। বলছি আফজাল হোসেনের কথা। প্রায় সময়ই দেশের নানা ইস্যু নিয়ে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় কলম ধরেন। তুলে আনেন নানা অসঙ্গতির কথা।
Advertisement
আজ বুধবার (৩০ অক্টোবর) তিনি দিয়েছেন এক স্ট্যাটাস। সেখানে তিনি আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘খাদ্যে প্রতারণা, অষুধে, চিকিৎসায়, নিত্য ব্যবহার্য পণ্যে, প্রাতিষ্ঠানিক সেবায়, শিক্ষায়, তথ্য প্রবাহে এমনকি সম্পর্কেও মানুষ অন্যায় বুদ্ধি খাটিয়ে জীবন যাপন জটিল করে তুলছে। সে জটিলতায় পড়ে মানুষের হয় করুণ দশা।’
আরও পড়ুনস্ত্রীকে খোলাচিঠিতে আফজাল হোসেনের প্রশ্ন আফজাল হোসেনের লেখাটি হুবহু পাঠকের উদ্দেশ্যে তুলে দেওয়া হলো০১আমরা একটা দেশে বাস করি। দাবি করি, দেশটা আমাদের। দেশ আমাদের হলে কিছু দায় তো থাকে। দায় কি, কেনো- অনেক মানুষ হয়তো বোঝেনা। এই না বোঝা দোষের নয়। কিন্তু বুদ্ধিমান, বুঝদার মানুষদের কেলো কীর্তিকলাপে মানুষের জীবনে হয়রানি বেড়েই চলেছে! এ ভয়ানক বিপদ থেকে উদ্ধারের কি উপায়?
দোকানে দরকারি জিনিস কিনতে গিয়ে মানুষ দামে ঠকছে। বুদ্ধি খাটিয়ে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়া পণ্যের মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়ে সেই পণ্য ক্রেতাকে কেনানো হচ্ছে। কেউ বলবেনা, এইসব বুদ্ধির প্যাঁচ ভালো। সেদিন দেখতে পেলাম, পোশাকে চেহারায় ধর্ম পালনকারী একজন মানুষ- যার কাছে শুধু সততাই আশা করা উচিৎ, তিনি আসলে প্রচন্ড অসৎ। জানা গেলো, ডিমের দাম বৃদ্ধিতে এই ধর্মপালনকারী লোকটার হাত রয়েছে। এইরকমের মানুষকে নিজের ধনসম্পদ বৃদ্ধির অসৎ বুদ্ধি খাটাতে দেখলে আশা টিকে থাকে না।
Advertisement
খাদ্যে প্রতারণা, অষুধে, চিকিৎসায়, নিত্য ব্যবহার্য পণ্যে, প্রাতিষ্ঠানিক সেবায়, শিক্ষায়, তথ্য প্রবাহে এমনকি সম্পর্কেও মানুষ অন্যায় বুদ্ধি খাটিয়ে জীবন যাপন জটিল করে তুলছে। সে জটিলতায় পড়ে মানুষের হয় করুণ দশা। কিছু মানুষ শুধুই নিজের সমৃদ্ধির জন্য দেশের সকলের সাথে ক্রমাগত অন্যায় বুদ্ধি খাটিয়ে খাটিয়ে- শেষমেষ কতটা লাভ হয়, কতটুকু হয় অর্জন?
তথ্য বের হয়ে আসে, অমুকে এতো হাজার কোটি টাকা চাঁদা তুলে খেয়েছে। জানা যায়, অমুকে বিদেশে এত পরিমান টাকা সরিয়েছে- যার পরিমান ভাবাও অসম্ভব। এই জাতীয় মানুষগুলো মানসিকভাবে সুস্থ বলে কি ভাবা যায়? এসকল মানুষদের প্রিয়জন, বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজনেরা এই ঘটনা ছড়িয়ে গেলে কি রটনা ভেবে উড়িয়ে দিতে পারে?
যে মানুষটা রোজ মিথ্যা খবর পরিবেশন করে করে দেখে পাঠক, দর্শকসংখ্যা হু হু করে বেড়ে চলেছে, কেমন অনুভব করে সে! গৌরববোধ করে। গৌরববোধই করে। প্রতারণা সাফল্য এনে দিচ্ছে বিবেচনা করে প্রতারণার মাত্রা দেয় বাড়িয়ে। এমনই তো অভিজ্ঞতা আমাদের।
০২কত কত মানুষদের মরতে হলো। সবাই মরেছে সরল বিশ্বাসে। বিশ্বাস, দেশের ভালো হবে। মানুষ ভালো থাকবে। আমরা ভালো থাকবার মতো কথায়, খবরে লাভ হবে মনে করিনা। লাভ দেখি উত্তেজনা ছড়ানোয়, হতাশ হওয়ার মতো গল্পে, বিবরণে। নানা রকমের প্রতারণার খাঁচায় একটা দেশ, দেশের মানুষেরা ক্রমশ আটকা পড়ে যাচ্ছে। এ এক নয়া সংকট। মানুষ বহুকাল ধরে দেখে আসছে- দেশ বদলের জন্য মানুষ নিজের প্রাণকে তুচ্ছজ্ঞান করতে পারে। বেঁচে থাকারা এতোটাই নির্লজ্জ এবং স্বার্থপর- মানুষের আত্মত্যাগ, রক্তের উপর হেসে খেলে নিজের নিজের সাফল্যসৌধ নির্মাণ করতে চায়।
Advertisement
এইসব অসভ্য চাওয়া পূর্ণ হয়ও। মানুষ কি এসবকে সাফল্য, পরম প্রাপ্তি ভাবতে পারে?
০৩একদিনের একটা ঘটনা। কবরস্থানে এক পরিচিতজনের দাফনক্রিয়া শেষ করে ফিরছি। ফেরার সময় এক কীর্তিমানের নাম দেখে সে কবরের পাশে আমরা কজনা দুদন্ড দাঁড়াই। তিনি আমাদের চেনা, কখনও পরিচয় হয়নি তবু মনে হয় কাছের ছিলেন। দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করি। তারপর মনে হয়, একটু ঘুরে দেখা যাক- আর কোন কোন নামী মানুষের কবর এ কবরস্থানে রয়েছে।
দেখতে পাই- একটা কবরের পাশে অনেক মানুষ জড়ো হয়ে মনোযোগ দিয়ে কি যেন দেখছে। কৌতুহলে আমরাও দাঁড়াই। একজন মহিলার কবর। নাম, ঠিকানা লেখা। কবে, কোন সনে মৃত্যু উল্লেখ করা আরও বড় করে উল্লেখ করা নামী, সফল স্বামীর নাম ও পরিচয়। বড় করে লেখা স্বামীর নামটা পড়ে দুএকজনকে অশোভন উক্তি করতে শুনি। ফেরার পথে মনে প্রশ্ন জাগে, টাকা পয়সা, ক্ষমতা, সাফল্য- এসবের জন্য মানুষ কত বেপরোয়া। দুনিয়ায় কি এজন্যেই আসা! সব পেতে চাওয়ায় আনন্দ আছে- সবকিছু পেয়ে যাওয়াই কি জীবনের স্বার্থকতা?
এলএ/জেআইএম