দেশজুড়ে

অস্তিত্বহীন সংগঠনের কোটি টাকার ঋণ নিতে আবেদনের হিড়িক

কুড়িগ্রামে ১ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার নামে সাধারণ মানুষের কাছে আবেদনপত্র বিতরণ করছে ‘অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠন। তবে আবেদনটি একটি উড়োচিঠির মতো মনে করছেন স্থানীয়রা। কারণ মাঠে কোনো কর্মী বা সংগঠকের সঠিক তথ্য কিংবা সঠিক পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেননি ঋণ প্রত্যাশীরা। প্রাথমিকভাবে ভুঁইফোড় সংগঠন মনে করে প্রতারিত ও জালিয়াতির ফাঁদে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

Advertisement

তবে সংগঠনটির আহ্বায়ক আ ব ম মোস্তফা জামান আমীন দ্বায়ভার নিয়ে বলেন, সংগঠনটি দেশের মানুষের সঙ্গে কোনো প্রকার প্রতারণা করবে না, কেউ আবেদনপত্র বিক্রির নামে অর্থ লেনদেন করে থাকলে আইনের আশ্রয় নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

আবেদন পত্রটিতে লেখা আছে, ‘পুঁজির জন্য ঋণের আবেদন- বিপুল ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণ অহিংস পন্থায় আইনের দ্বারা গঠিতব্য ‘অবৈধ অর্থ উদ্ধার ও গণমুখী বিনিয়োগ জাতীয় সংস্থা’ বরাবর পূঁজির জন্য ঋণের আবেদন। ভ্যাট টেক্স সেবার নামে সর্বস্তরের জনগণ থেকে আদায় করা লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার একটি বড় অংশ, স্বাধীনতার পর থেকেই, লুটপাট, ও বিদেশে পাচার করা হয়েছে। জনগণের কাষ্টার্জিত এসব অর্থ প্রস্তাবিত জাতীয় সংস্থা কর্তৃক উদ্ধার করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উৎপাদন, ব্যবসা বাণিজ্য আয় বৃদ্ধি তথা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বার্থে বিনা সুদে, বিনা জামানতে সহজ কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য ১ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণের মাধ্যমে পুঁজির যোগান দেওয়ার পরিকল্পিত কর্মসূচির আওতায় ঋণ পেতে আগ্রহীদের আবেদন।’

সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের মাদাজল গ্রামের ঋণ প্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশ দুস্থ সংগঠনটি অসহায় মানুষের জন্য বিনা শর্তে লক্ষাধিক টাকা ঋণ দেবে। এ কারণে সংগঠনটির নির্দিষ্ট আবেদনপত্র পূরন করে ঢাকা অফিসে পাঠাতে হবে। আবেদনপত্রটি ঋণ প্রতাশিদের ফটোকপি করতে হবে। কোনো জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি ছাড়াই প্রতি ফরমে ২০ জন মানুষের নাম, বয়স, জন্মতারিখ, পেশা, মোবাইল নম্বর, স্বাক্ষরসহ পূরণ করে অফিসের ঠিকানায় পাঠাতে হবে। পরে আবেদনপত্রের সূত্র ধরে ১ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করবেন বলে জানান ঋণ প্রত্যাশীরা।

Advertisement

কথা হয় মাদাজল গ্রামের ঋণ প্রত্যাশী মো. ছাত্তার আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, কাঁঠালবাড়িতে আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন এই ফরম পূরণ করেছে। ওদের দেখাদেখি আমার মেয়ে ফজিলা একটি ফরম ফটোকপি করে নিয়ে আসছে। আমরা এখানকার ২০ জন নারী পুরুষ ফরম পূরণ করে রেখেছি। বড় কালিরপাট এলাকার রফিকুল হাজি নামের এক লোক ফরমগুলো নিয়ে গেছে। পরে খোঁজ নিয়ে দেখেছি কাঁঠালবাড়িতে বড় কালিরপাট নামে কোনো স্থান নেই। আর রফিকুল হাজি নামে কোনো লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

ফজিলা বেগম বলেন, আমি ওই লোককে দেখেছি উনি ফরম দিয়ে লোকজনের নাম পূরণ করে নিয়ে গেছেন। কাগজ যাচাই বাছাই হওয়ার পর সবাইকে ঋণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে উনার মোবাইল নম্বর চাইলেও নম্বর দিয়ে যাননি। ফরমে ঋণ চাওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হবে আশ্বাস দিয়ে চলে গেছেন।

আরেক ঋণ প্রত্যাশী হুজুর আলী বলেন, আমরা ফরম পূরণ করেছি। এ বিষয়ে কাউকে এখন পর্যন্ত কোনো টাকা দেয়রি। তবে মনে হচ্ছে ফরমে নাম টিকে গেলে টাকা চাইতে পারে। আমরা মুর্খ মানুষ, এ ঘটনা নিয়ে একটু আতঙ্কে আছি।

‘গণঅভ্যুত্থান আন্দোলন পরিষদ’র আহ্বায়ক আ ব ম মোস্তফা জামান আমীন বলেন, আমরা সারা বাংলাদেশ থেকে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষের স্বাক্ষরসহ ফরম হাতে পেয়েছি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিভিন্ন নেতা নেত্রীর লুটপাটের অর্থ উদ্ধার করে সংগঠনের মাধ্যমে জনগণের মাঝে ঋণ হিসেবে দিয়ে দেবো। নভেম্বর মাসের ২৫ তারিখ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লক্ষাধিক মানুষকে নিয়ে আমরা একটি সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করবো। কেননা লুটপাট করা অর্থ এ দেশের জনগণের। আমরা সেই অর্থ দেশের মানুষের প্রয়োজনে ব্যবহার করবো।

Advertisement

হলোখানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম রেজা বলেন, বিষয়টি সন্দেহপূর্ণ। আমি দেখতেছি। কোনো ব্যক্তি যাতে প্রতারণার শিকার না হয় এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নিচ্ছি।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাঈদা পারভীন বলেন, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফজলুল করিম ফারাজী/এফএ/এএসএম