দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে সংস্কারের অভাবে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে সাতক্ষীরা-শ্যামনগর সড়ক। এতে চলাচলে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ছেন জেলার চার উপজেলার অন্তত ১৫ লাখ মানুষ। এ সড়কের সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ থেকে শ্যামনগর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত পিচ ও পাথর উঠে গিয়ে এবড়ো থেবড়ো হয়ে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। এতে বাস-ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচলের সময় ধুলায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে গোটা এলাকা। ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা।
Advertisement
সাতটি উপজেলা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা জেলার চারটি উপজেলার মানুষ সরাসরি সাতক্ষীরা-শ্যামনগর সড়ক দিয়ে যাতায়াত করেন। এগুলো হলো শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, দেবহাটা ও সাতক্ষীরা সদর। এছাড়া আশাশুনি উপজেলার একাংশের মানুষের যাতায়াতের রাস্তা এটি। সড়কটি উন্নয়নে বিগত সরকারের সময় সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ ও কালিগঞ্জ-ভেটখালী মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প নামে দুটি প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রকল্প দুটি ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর একনেকে পাস হয়।
এরপর প্রকল্প দুটির কাজ শুরুর লক্ষ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়কের দু’পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু করে। যা চলে প্রায় এক সপ্তাহ। এরপর অদৃশ্য কারণে বন্ধ হয়ে যায় উচ্ছেদ অভিযানসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কার্যক্রম। সেই থেকে অদ্যাবধি প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি।
স্থানীয়রা জানান, বর্তমানে সড়কটির অবস্থা এতোটাই খারাপ যে তা দিয়ে চলাচল করলে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেইসঙ্গে ধীরে ধীরে স্থবির হয়ে পড়ছে পণ্য পরিবহন। সড়কের দূরাবস্থার কারণে পর্যটক কমছে সুন্দরবনে। একইসঙ্গে ব্যাহত হচ্ছে দুইশো কিলোমিটার সীমান্তের নিরাপত্তায় নিয়োজিত বিজিবি সদস্যদের রসদ সরবরাহ।
Advertisement
সড়কে চলাচল ঠিক রাখতে সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ, আলিপুর বাজার, আলিপুর শ্মশান, কুলিয়াসহ সড়কটির অন্তত ১৬টি স্পট চিহ্নিত করে পাকা রাস্তার ওপর নির্মাণ করা হয় ইটের হেরিংবন্ড। এছাড়া মাঝে মাঝে রাস্তার কিছুর অংশে পুডিং করে দায় সারছে তারা।
এ প্রসঙ্গে দেবহাটার মুজিবর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এতোদিন জানতাম ইটের রাস্তার পরে পিচের রাস্তা হয়। অথচ আমাদের এলকায় পাকা রাস্তার ওপর ইটের সোলিং। বিষয়টি খুবই লজ্জার।
সাতক্ষীরা জেলা ব্র্যান্ডিংয়ের স্লোগান ‘সাতক্ষীরার আকর্ষণ, সড়কপথে সুন্দরবন’। কিন্তু সাতক্ষীরা-শ্যামনগর সড়কের বেহাল দশার কারণে জেলা ব্র্যান্ডিংয়ের এ স্লোগান ভুলতে বসেছেন মানুষ। কারণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক হওয়ায় সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জে আসতে উৎসাহ হারাচ্ছেন পর্যটকরা। এতে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে সুন্দরবন কেন্দ্রিক পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল জনতার জীবন-জীবিকায়।
এ প্রসঙ্গে শ্যামনগরের ওসমান গণি বলেন, সাতক্ষীরাই বাংলাদেশের একমাত্র জেলা যেখানে সড়কপথে সুন্দরবন উপভোগ করা সম্ভব। কিন্তু সাতক্ষীরা-শ্যামনগর সড়কের যে নাজুক ও জরাজীর্ণ অবস্থা তাতে এখানে আর পর্যটকরা আসতে চান না।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, ঢাকা থেকে সাতক্ষীরা শহরে আসতে সময় লাগে সাড়ে চার ঘণ্টা থেকে পাঁচ ঘণ্টা। আর সাতক্ষীরা থেকে শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জ আসতে সময় লাগে চার ঘণ্টা। তারপর মানুষ আসতে গেলে অসুস্থ হয়ে পড়েন। সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা দরকার।
কালিগঞ্জের ব্যবসায়ী শাওন আহমেদ বলেন, সাতক্ষীরায় প্রচুর মাছ উৎপাদন হয়। এরমধ্যে কালিগঞ্জ ও শ্যামনগরে প্রচুর মাছ, কাঁকড়ার ঘের রয়েছে। এসব পণ্য জেলার বাইরে পাঠাতে বা কোনো কিছু বাইরের জেলা থেকে আনতে চাইলে ট্রাকচালকরা এই সড়কের কথা শুনলে আসতে রাজি হয় না। ফলে বাড়তি ভাড়া দিয়ে যানবাহন ভাড়া নিতে হয়।
সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটির যুগ্ম-সদস্য সচিব আলি নূর খান বাবুল জাগো নিউজকে বলেন, সড়কটির উন্নয়নে আমাদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন সরকার গৃহীত দুটি প্রকল্প একনেকে পাস করে। তবে বর্তমানে তার কোনো অগ্রগতি নেই। এতে হতাশ সাতক্ষীরাবাসী। বর্তমান সরকারের এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার পারভেজ জাগো নিউজকে বলেন, সাতক্ষীরা থেকে কালিগঞ্জ পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার চারলেন ও কালিগঞ্জ থেকে ভেটখালী পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার ২৪ ফুট প্রস্থ রেখে ২০২৩ সালে একটি প্রকল্পের খসড় মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ৮২২ কোটি টাকা ব্যয় দেখিয়ে প্রকল্পের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। গত দুই মাস মন্ত্রণালয়ে এ কাজের দরপত্রগুলো অনুমোদনের জন্য রয়েছে। দ্রুত যদি অনুমোদন না হয় আর ঠিকাদার না আসে তাহলে আমাদের পক্ষে এ সড়ক আর মেরামত করে রাখা সম্ভব হবে না।
এফএ/এএসএম