চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশের লক্ষ্য কী? ঢাকায় প্রথম টেস্ট হারার পর জয় ছাড়া ভাবার কী আছে? জিততে পারলে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ড্র হয়ে যাবে। তখন বলা যাবে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে সিরিজ হারেনি বাংলাদেশ।
Advertisement
আর চট্টগ্রাম টেস্ট ড্র হলেও সিরিজ জিতবে দক্ষিণ আফ্রিকাই। তখন ব্যবধান থাকবে ১-০। আর সাগরিকায় নাজমুল হোসেন শান্তর দল হারলে সিরিজের ব্যবধান দাঁড়াবে ০-২। তার মানে খুব পরিষ্কার, সিরিজ বাঁচাতে টাইগারদের জয় ছাড়া পথ নেই। সত্যিই যদি তাই হয়, তাহলে বাংলাদেশের একাদশ এমন কেন? আজ মঙ্গলবার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শান্তর দল যে ১১ জন নিয়ে মাঠে নেমেছে, সেটা কি টেস্ট জেতার মত? এই কম্বিনেশন নিয়ে টেস্ট জেতা সম্ভব? যেখানে জয় ছাড়া ভাবার কিছুই নেই, সেখানে বাংলাদেশ নেমেছে ৮ ব্যাটার নিয়ে। কেউ কেউ হয়তো যুক্তি দেবেন, জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেট ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি; তাই বাড়তি ব্যাটার নিয়ে নামা।
প্রশ্ন হলো, সিরিজ বাঁচাতে হলে এ টেস্টে জয়ই শেষ কথা। সেখানে ব্যাটিং সহায় পিচ হোক আর বোলিং সহায় উইকেটই হোক না কেন, টেস্ট জিততে চাই বাড়তি বোলার। বাড়তি ব্যাটার নয়। কিন্তু বাংলাদেশ বাড়তি ব্যাটার দিয়ে দল সাজালো।
জ্বরের কারণে খেলতে পারেননি লিটন দাস। আর আগেই মাথায় আঘাত পেয়ে ছিটকে গেছেন জাকের আলী অনিক। এ দুজন উইকেটরক্ষক ব্যাটার না থাকায় দুজন বাড়তি ব্যাটার কাম কিপার মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন আর জাকির হাসানকে একাদশে অন্তর্ভুক্ত করা হলো। কেন কী কারণে? সে ব্যাখ্যা নেই।
Advertisement
যেহেতু মুশফিকুর রহিম এখন টেস্টে কিপিং করেন না। তাই লিটন আর জাকের আলী অনিক না থাকায় শেষ মুহূর্তে দলে ঢোকা অঙ্কনকে কিপার হিসেবে নেওয়া হয়েছে। সেটা যুক্তিযুক্ত। কিন্তু জাকির হাসান কেন? কেন একজন বাড়তি বোলার অন্তর্ভুক্ত করা হলো না?
আর জাকির হাসান হাত খুলে খেলতে পারেন, সেই বিবেচনায় তাকে সাদমান ইসলামের পরিবর্তে ওপেনার হিসেবে নেওয়া যেত। তাকে মিডল অর্ডার হিসেবে দলে নেওয়া কোন যুক্তিতে? তার চেয়ে একজন বাড়তি পেসার কিংবা বাড়তি স্পিনার নিয়ে খেলাটাই কি অধিক যুুক্তিযুক্ত হতো না?
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ফ্ল্যাট পিচে ৫ বোলার দলে থাকা মানে একটি বাড়তি অপশন থাকা। সেই বাড়তি অপশনটাতো টাইগার ম্যানেজমেন্ট নিজেরাই বন্ধ করে দিয়েছে। আর তাই দেখা গেল, এক পর্যায়ে অধিনায়ক শান্ত অনিয়মিত স্পিনার মুমিনুলকে দিয়েও ৪ ওভার বোলিং করালেন।
মুমিনুলের হাতে বল তুলে না দিয়ে করবেন কী? জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ব্যাটিং সহায় পিচে বাংলাদেশের ৪ স্পেশালিস্ট বোলারে সাজানো বোলিং শক্তিকে নেহায়েত দুর্বল, নির্বিষ মনে হয়েছে। যেহেতু দক্ষিণ আফ্রিকার টপ অর্ডারে ডানহাতি ব্যাটার বেশি, তাই একজন বাঁহাতি স্পিনার খেলানো যেতো। সেক্ষেত্রে বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদকে সুযোগ দিয়ে দেখা যেত।
Advertisement
যেহেতু বাংলাদেশের দরকার জয়, তাই ভিন্ন কিছু করে দেখা যেত। তা না করে ৮ ব্যাটার নিয়ে সেই পুরোন পথে হাঁটা শুরু বাংলাদেশের। প্রথম দিন সে ৮ ব্যাটার খেলানো অসাড় প্রমাণ হলো। মঙ্গলবার প্রথম দিন দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটাররা রান উৎসবে মেতে উঠলেন। একজোড়া সেঞ্চুরি হলো। করলেন ওপেনার টনি ডি জর্জি আর ওয়ান ডাউন ত্রিস্তান স্টাবস। দিন শেষে প্রোটিয়া স্কোর ২ উইকেটে ৩০৭ রান।
সারা দিনে ৮১ ওভারে বাংলাদেশের বোলারদের ঝুলিতে জমা পড়েছে মোটে ২ উইকেট। বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ৩০ ওভার বল করে ১১০ রানে ২ উইকেট দখল করেছেন।
দুই পেসার হাসান মাহমুদ (১৩ ওভারে ০/৪৭), নাহিদ রানা (১৩ ওভারে ০/৩৪) ২৬ ওভার বল করে একটি উইকেটও পাননি। অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজও (২১ ওভারে ০/৯৫) ব্যাটিং উইকেটে কিছুই করতে পারেননি। এই একজন বোলার কম নিয়ে ৮ ব্যাটারে দল সাজিয়ে খেলার চড়া মাশুল গোনার আভাস কিন্তু আজ প্রথম দিনই মিললো। প্রোটিয়ারা রান পাহাড় গড়ার পথে অনেকদূর এগিয়ে গেছে। কাল বুধবার দ্বিতীয় দিন মার্করাম বাহিনী আরও কতদূর যায় কে জানে! এখান থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। তখন আর বাংলাদেশের ৮ ব্যাটার কী করবেন?
এআরবি/এমএমআর/এমএস