ব্যক্তি মালিকানার প্রায় সাত বিঘা জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ‘কুতুবের চর মৎস্য আড়ত’। এটি সিরাজগঞ্জ-নাটোর মহাসড়কের পাশে হওয়ায় দূরদূরান্ত থেকে আসেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা। ভোর ৬টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতা আর আড়তদারদের শোরগোলে পুরো এলাকা মেতে ওঠে। এই সময় কেনাবেচা টাকার অঙ্কে প্রায় কোটি পেরিয়ে যায়। সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ঘুড়কা ইউনিয়নের কুতুবের চর মৎস্য আড়তের প্রতিদিনের চিত্র এটি।
Advertisement
২০২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর অবৈধভাবে সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে গড়ে ওঠা এই কুতুবের চরে ১০০টি আড়ত রয়েছে। প্রত্যেক আড়তদার দুই থেকে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে এ আড়ত নিয়েছেন।
সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুলের নিউ টাউন মৎস্য আড়তটি কিছু আড়ৎদার ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের ইন্ধনে ভেঙে গিয়ে কুতুবের চরে এই আড়তটি অবৈধভাবে গড়ে ওঠে। এতে বন্ধ হয়ে যায় দীর্ঘ বছরের সরকারিভাবে ইজারা দেওয়া নিউ টাউন মৎস্য আড়ত। ফলে প্রতি বছর ১ কোটি ৬৭ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। তবুও অদৃশ্য কোনো কারণে এ অবৈধ আড়তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন।
আর এই সুযোগে কুতুবের চর সমবায় সমিতির আড়ৎদাররা বিক্রেতাদের মোট বিক্রির শতকরা ৩ টাকা কমিশন আদায় করছেন। এছাড়া আড়তে আসা পরিবহনের শ্রেণিভেদে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা চাঁদা আদায় করছেন তারা। শুধু তাই না, মাছের ড্রাম প্রতি নেওয়া হয় অতিরিক্ত ২০ টাকা চাঁদা।
Advertisement
মাছের আড়ৎ নিতে সমিতিকে কত টাকা দিতে হয় এমন জবাবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আড়ৎদার জাগো নিউজকে বলেন, এখানে ১০০টি আড়ত রয়েছে। এসব আড়ত থেকে প্রায় তিন কোটি টাকারও বেশি আদায় করেছে সমিতি। তিনি নিজেই তিন লাখ টাকার বিনিময়ে একটি আড়ত নিয়েছেন বলে দাবি করেন।
স্থানীয় বাসুদেবকোল দক্ষিণপাড়া গ্রামের সদরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এ আড়তে আমার দুই বিঘা জায়গা রয়েছে। আমাদের বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা দেওয়ার কথা বলে বছর চুক্তিতে এ জায়গা নিয়েছে। সমবায় সমিতি প্রত্যেক বছর আমাদের নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেয়। এছাড়া প্রতিদিন যেসব আড়ৎদাররা বসে তাদের কাছ থেকে আমরা ৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করি। এ চাঁদার অর্ধেক আবার সমিতিকে দিতে হয়।
তাড়াশ উপজেলা থেকে নছিমন নিয়ে আড়তে মাছ বিক্রি করতে আসা জসমত আলী জাগো নিউজকে বলেন, গাড়ির জন্য ১০০ টাকা সমিতিকে আলাদাভাবে চাঁদা দিতে হয়। পাশাপাশি গাড়িতে থাকা মাছের ড্রাম প্রতিও দিতে হয় ২০ টাকা হারে চাঁদা।
তবে অতিরিক্ত চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে কুতুবের চর মৎস্য আড়ৎদার সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আব্দুল হাই সরকার জাগো নিউজকে বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেই ৩০ জন সদস্যের একটি সমবায় সমিতি গঠন করে আড়তটি বসিয়েছি। যদিও ব্যক্তি মালিকানা জায়গায় সরকারিভাবে ইজারা দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। এজন্য আড়তের নামে ২০ শতক জায়গা আমরা এরইমধ্যে রেজিস্ট্রি করেও দিয়েছি। এছাড়া আড়তের বাকি জায়গা নিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে।
Advertisement
এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) লিটুস লরেন্স চিরান জাগো নিউজকে বলেন, সম্প্রতি এ আড়তটি নিয়ে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনগত ব্যবস্থা নেবো। এফএ/জিকেএস