বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পর্কে তথ্য প্রদানে সহায়তা করতে এড প্রোগ্রামসের সঙ্গে অংশীদারিত্বে বিশ্ববিদ্যালয় মেলার আয়োজন করেছে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস। মেলায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিনিধিরা সরাসরি শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের নানান প্রশ্নের উত্তর দেন।
Advertisement
মেলাটি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সম্ভাব্য শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, এবং স্কুল কাউন্সিলরদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ১০টি খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ করে দেয়।
সোমবার (২৮ অক্টোবর) ঢাকার ইএমকে সেন্টারে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় মেলার উদ্বোধন করা হয়, যেখানে একত্রিত হয়েছিলেন সম্ভাব্য শিক্ষার্থী এবং যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের অফিসিয়াল এডুকেশনইউএসএ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এবং এড প্রোগ্রামসের সহযোগিতায় এই আয়োজন করা হয়। যেখানে ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে ৫০০ জনের বেশি অংশগ্রহণ করেন।
মেলায় অংশ নেওয়া স্কলাস্টিকা থেকে আসা শিক্ষার্থী শাফিকুল ইসলাম জুবায়ের বলেন, আমি যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যেতে ইচ্ছুক। সেজন্য ভার্সিটির খোঁজে ইএমকে সেন্টারে এসেছি। অনলাইনে ইউনিভার্সিটি সার্চ করতে গেলে অনেক কিছু বের করতে হয়। কিন্তু সমস্যা হলো অনলাইনে সঙ্গে সঙ্গে রেসপন্সটা পাওয়া যায় না। ইএমকে সেন্টার যে আয়োজনটা করেছে তার মাধ্যমে আমরা সামনা সামনি কমিউনিকেট করতে পারছি। ফলে যে কোনো প্রশ্নের তাৎক্ষণিক উত্তর পেয়ে যাচ্ছি। তাই ভার্চুয়াল কমিউনিকেশনে যে সময়টা যাচ্ছে সরাসরি যোগাযোগের ক্ষেত্রে সেই সময়টা লাগছে না। অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় এখানে এসেছে। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি ওদের সঙ্গে কথা বলেছি। যেটি অনলাইন কমিউনিকেশনের চেয়ে অনেক বেশি ভালো অভিজ্ঞতা। এই আয়োজন সঠিক তথ্য নিতে সহায়তা করেছে।
Advertisement
রংপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে আসা আশুরা তাবাসসুম আরশী বলেন, এখানে বেশি কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি এসেছে। তাদের কাছে অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি সেগুলোর সমাধান পেয়েছি। সাধারণত শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে ইনফরমেশন গ্যাপ থাকে। কারণ অনেকগুলো ধাপ পেড়িয়ে আমাদের যেতে হয়। তাই আজকের পরামর্শ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। শুধু মেলা নয়, সবসময় ইএমকে সেন্টারে ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো সহযোগিতা লাগলে সেটি পাই।
একটি ইন্সুরেন্স কোম্পানির অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ছেলে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু আমরা এখানে এসেছি আরও ভালো কিছু পাওয়া যায় কি না সেটি দেখতে। এখানে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন তারা। তাই যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এসেছে তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে ভর্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো। এমন আয়োজন আমাদের জন্য খুবই উপকারী।
ইউনিভার্সিটি অ্যাট বাফেলো থেকে আসা ডিনো প্রুককোলি বলেন, আমরা এখানে এসেছি বাংলাদেশ শিক্ষার্থীদের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম সম্পর্কে জানাতে। আমরা শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে কি কি প্রয়োজন, স্কলারশিপ সু্বিধাসহ সব ধরনের সুযোগ সম্পর্কে জানাচ্ছি। এটি অবশ্যই অনলাইনে যোগাযোগের চেয়ে অনেক ভালো উদ্যোগ। সরাসরি শিক্ষার্থীদের সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি আমরা। শুধু শিক্ষার্থীই নয়, তাদের অভিভাবকদেরও আমরা সুযোগগুলো জানাচ্ছি। সারাসরি যোগাযোগটা সত্যিই খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এমব্রি-রিডল অ্যারোনটিক্যাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক ভর্তি কার্যক্রমের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর ম্যাথিউ ডিক্সন বলেন, শিক্ষার্থীদের যে ধরনের চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে, যেমন ভিসা, স্কলারশিপসহ সব প্রশ্নের উত্তর আমরা তাদের দিয়েছি। একই সঙ্গে কীভাবে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যায় সে বিষয়ে কথা বলেছি। আমরা সরাসরি যখন একে অপরের সঙ্গে কথা বলছি তখন সহজেই তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছি। এছাড়া তাদের জন্য কি ধরনের সুযোগ অপেক্ষা করছে সেগুলোও শেয়ার করতে পেরেছি।
Advertisement
উদ্বোধনী বক্তব্যে পাবলিক এনগেইজমেন্ট ডিরেক্টর স্কট হার্টম্যান যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অর্জনকে প্রশংসা করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্পাসে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব, খেলাধুলা, পারফর্মিং আর্টস, হ্যাকাথন, এবং বিতর্কের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছে—যা তাদের ভবিষ্যৎ সাফল্যের জন্য প্রস্তুত করছে। গবেষণায় উদ্ভাবন হোক বা সাংস্কৃতিক সংযোগ গড়ে তোলা, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্পাসে একটি স্থায়ী প্রভাব রেখে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ শিক্ষাগ্রহণের জন্য বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান, যা বর্তমানে শিক্ষার্থী পাঠানোর ক্ষেত্রে শীর্ষ ১৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করেছে।
ডেপুটি পাবলিক এংগেইজমেন্ট ডিরেক্টর ব্রেন ফ্ল্যানিগান বলেন, আমরা খুবই সন্তুষ্ট যে আজ আমাদের ১০টা বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকায় এসেছে। অনেক ভালো ও খুব মেধাবী শিক্ষার্থী বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে। আমরা খুশি ইতিহাসে প্রথমবার এক বছরে ১৩ হাজার ৫৬৩ জন শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে গেছে। তাই কীভাবে আরও শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রে আসতে পারে তার অংশ হিসেবেই এই আয়োজন।
মেলায় অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছিল- এমব্রি-রিডল অ্যারোনটিক্যাল ইউনিভার্সিটি, নিউ জার্সি ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, আইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ডাকোটা, ইউনিভার্সিটি অ্যাট বাফেলো, দ্য স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্ক, ইউনিভার্সিটি অব কানসাস, নিউইয়র্ক ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, সেন্ট্রাল মিশিগান ইউনিভার্সিটি, ডেপাও ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনা।
২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য শীর্ষ গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র। যেখানে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী পাঠানো দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান টানা দ্বিতীয় বছরের জন্য ১৩তম। গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২০১২-১৩ সালের ৩ হাজার ৮২৮ থেকে ২০২২-২৩ সালে ১৩ হাজার ৫৬৩ জনে পৌঁছেছে।
এডুকেশনইউএসএ যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থায়িত একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক। যা ১৭৮টি দেশে ৪২৫টিরও বেশি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী পরামর্শ কেন্দ্রের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এই নেটওয়ার্ক যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চশিক্ষাকে বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীদের কাছে প্রচার করে এবং স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নের সুযোগ সম্পর্কিত বিনামূল্যে এবং বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করে। এডুকেশনইউএসএ সম্পর্কে আরও জানতে ঘুরে দেখুন educationusa.state.gov/ এবং এডুকেশন ইউএসএ-এর ফেসবুক পেজে অনুসরণ করুন www.facebook.com/EdUSABangladesh/।
আইএইচআর/জেডএইচ/