সম্প্রতি সরকার বাংলাদেশের অন্যতম দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটন যাওয়া সীমিত করেছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত ভারতীয় পর্যটনকে লাভবান করবে বলে মন্তব্য করেছে স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি।
Advertisement
রোববার (২৭ আগস্ট) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেন সংগঠনটির নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. শাকিল মিয়া। তিনি বলেন, শীতকালে যে চারমাস দ্বীপটিতে পর্যটক যাওয়া আসা বেশি হয়, তখনই পর্যটকদের ওপর নানান বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। পরিবেশ রক্ষার নামে এটি বাংলাদেশের পর্যটন খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ভারতীয় পর্যটনকে লাভবান করবে।
তিনি বলেন, দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে যখন বাংলাদেশিদের যাতায়াতে বাধা দেওয়া হবে, তখন স্বাভাবিকভাবে পর্যটকরা ভারতমুখী হবে। ভারতের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে তখন বাংলাদেশিরা যাতায়াত শুরু করবে। এটা দেশের ভ্রমণশিল্প ও অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
Advertisement
‘বাংলাদেশের ভ্রমণ শিল্পকে বাধাগ্রস্ত করতে টোয়াবের দেওয়া তথ্যমতে ট্যুর অপারেটর নিবন্ধন সংক্রান্ত নতুন বিধিমালায় কিছু নিয়ম ও শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, ট্যুর অপারেটর, ট্যুর গাইড নিবন্ধন ও পরিচালনার লাইসেন্স আবেদনে ৫০ হাজার টাকা লাগবে। এছাড়া ১০ লাখ টাকা ব্যাংক স্থিতি ও তিন লাখ টাকা জামানতের বাধ্যবাধকতা আছে। এছাড়া ট্যুর অপারেটর সেবায় ১৫ শতাংশ মূসক (ভ্যাট) ধার্য করার ভ্রমণ ব্যয় বাড়ছে। এটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি গোটা পর্যটনশিল্প ভারতমুখী হয়ে পড়বে। অতএব, পরিবেশবাদের ছদ্মাবরণে নারিকেল দ্বীপ ভ্রমণ ও অবস্থানের ওপর বিধি নিষেধ আরোপ বাংলাদেশের পর্যটনকে ভারতমুখী করার কোনো ষড়যন্ত্র হচ্ছে কি না সেটি খতিয়ে দেখা জরুরি।’
শাকিল বলেন, ২০২২ সালে ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশের পরিবেশ মন্ত্রণালয় সেন্টমার্টিন দ্বীপ সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের ১ হাজার ৭৪৩ বর্গ কিমি এলাকাকে সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে। পরিবেশের ছদ্মাবরণে যেটা ছিল মার্কিন-ভারত জোটের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজির অংশ। ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজিতে প্রবেশ করে বাংলাদেশ যেন আমেরিকা-ভারত বনাম চীন দ্বন্দ্বের বলির পাঠা না হয় সেজন্য ইতিপূর্বে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ একটি বিবৃতিও দিয়েছিল।
তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গত আওয়ামী সরকারের জারী করা পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সেই প্রজ্ঞাপনে দেশের স্বার্থ ও ঝুঁকি বিচার-বিশ্লেষণ না করে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ ও অবস্থানের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপের মাধ্যমে গত জালেম সরকারকে অনুসরণ করছে বলে মনে করছে স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর হুমকি না সৃষ্টির আহ্বান জানিয়ে শাকিল বলেন, নারিকেল দ্বীপের স্থানীয় জনগণ ১০/১২ হাজার হলেও দ্বীপের ভ্রমণশিল্পের সঙ্গে জড়িত মানুষের সংখ্যা অর্ধ কোটিরও বেশি। বিশেষভাবে স্থানীয়দের ৯৫ ভাগ মানুষের জীবন-জীবিকার উপায় শীতকালের চার মাসের ভ্রমণশিল্প। সরকার পরিবশে রক্ষার নামে সেই চার মাসেই ভ্রমণের ওপর বিধি নিষেধ আরোপ করেছে যেটা দ্বীপবাসীর প্রতি সরকারের অমানবিক সিদ্ধান্ত ও মৌলিক অধিকার হরণ। সবদিক বিবেচনায় আমরা নারিকেল দ্বীপের ওপর আরোপিত সব ধরনের বিধি নিষেধ তুলে দেওয়ার দাবি করছি।
Advertisement
এমএইচএ/এমআরএম/জিকেএস