দেশজুড়ে

সবজি ট্রেনে প্রথম দিনে আয় ৩৬০ টাকা, লোকসান ৯ লাখ

উত্তরাঞ্চলের সবজি, ফুলসহ কৃষিপণ্য ঢাকায় নেওয়ার জন্য ‘কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন’ চালু হয়েছে। প্রথম দিনে কৃষিপণ্য ছাড়াই রহনপুর ছেড়ে গেছে ট্রেনটি। শনিবার (২৫ অক্টোবর) সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে রহনপুর রেলস্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে। রহনপুর-ঢাকা রুটে ট্রেনটি মাত্র ১৫০ কেজি ক্যারেট পরিবহন করছে।

Advertisement

পশ্চিম রেলওয়ে তথ্য মতে, বিশেষ ট্রেনে সাতটি বগি (লাগেজ ভ্যান) আছে। এরমধ্যে একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এবং অপর ছয়টি সাধারণ বগি। অত্যাধুনিক লাগেজ ভ্যানে কৃষিপণ্যের মধ্যে ফল, সবজি ছাড়াও রেফ্রিজারেটেড লাগেজ ভ্যানে হিমায়িত মাছ, মাংস ও দুধ পরিবহনের ব্যবস্থা আছে। সবজি চাষি, কৃষক ও ব্যবসায়ীদের ঢাকায় যাওয়ার জন্য অন্তত ২০টি চেয়ার আছে। সবজির সঙ্গে তাদের বিনা ভাড়ায় যাওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। সপ্তাহে একদিন অর্থাৎ প্রতি শনিবার সকালে রহনপুর থেকে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। ট্রেনটির ধারণক্ষমতা ১০ মেট্রিক টন।

ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রহনপুর রেলস্টেশন থেকে সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে ঢাকার তেজগাঁও রেলস্টেশনে পৌঁছাবে বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে। এতে প্রতি কেজি কৃষিপণ্যে পরিবহন খরচ পড়বে ১ টাকা ৩০ পয়সা। রাজশাহী থেকে তেজগাঁওয়ে এক কেজি কৃষিপণ্য পৌঁছাতে খরচ পড়বে ১ টাকা ১৮ পয়সা।

রহনপুর রেলস্টেশন থেকে কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন ছেড়ে ১৩টি স্টেশনে যাত্রাবিরতি করে তেজগাঁও স্টেশনে থাকবে। নাচোল, আমনুরা জং, কাঁকনহাট, রাজশাহী, সরদহ রোড, আড়ানি, আব্দুলপুর, আজিমনগর, ঈশ্বরদী বাইপাস, চাটমোহর, বড়ালব্রিজ ও জয়দেবপুরে থামবে ট্রেন।

Advertisement

এদিকে রহনপুর থেকে ঢাকার দূরত্ব ৩৪৬ কিলোমিটার। ট্রেনটি পরিবহন করতে খরচ হয় ৮ লাখ ৯৬ হাজার ৪৩২। কিন্তু প্রথম দিনে ট্রেনটিতে গেছে মাত্র ১৫০ কেজি ক্যারেট। ফলে ট্রেনটি আয় করেছে মাত্র ৩৬০ টাকা। প্রথম দিনে ট্রেনটিতে লোকসান হয়েছে ৮ লাখ ৯৬ হাজার ৭২ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রহনপুর, রাজশাহী, সরদহ রোড, আড়ানি, আব্দুলপুর, আজিমনগর, ঈশ্বরদী বাইপাস, চাটমোহর কোনোটিতে সবজি বুকিং দেওয়া হয়নি।

রহনপুর রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার মামুন আলি বলেন, রাতে পণ্যবাহী স্পেশাল ট্রেনটি রহনপুর স্টেশনে এসেছিল। সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে কোনো কৃষিপণ্য ছাড়াই ট্রেনটি ছেড়ে গেছে। এই ট্রেনে কেউ কোনো সবজি পরিবহন করেননি।

রাজশাহী স্টেশন ম্যানেজার শহিদুল আলম বলেন, আজ ট্রেনটির উদ্বোধন হলো। রাজশাহী থেকে কোনো সবজি বুকিং হয়নি। তবে ১৫০ কেজি ক্যারেট পাঠানো হয়েছে।

Advertisement

ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশন মাস্টার পাভেল হোসেন জানান, এ স্টেশন থেকে কৃষিপণ্য বুকিং হয়নি।

একই কাথা জানান সরদহ রোড, আড়ানি, আব্দুলপুর, আজিমনগর, চাটমোহর স্টেশন মাস্টার।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, কৃষকের সঙ্গে ঢাকার ব্যবসায়ীদের সমন্বয় ও আবহাওয়া খরাপের কারণে প্রথমদিন সবজি আসেনি।

রহনপুর এলাকার বাসিন্দা আরাফাত রহমান বলেন, পিকআপের থেকে ট্রেনের ভাড়া কম। কিন্তু ট্রেনে পরিবহন করতে এই ভাড়ার পাশাপাশি কুলি খরচ, ফসলের মাঠ থেকে স্টেশন এবং স্টেশন থেকে মোকামের আলাদা পরিবহন খরচ পড়ে যাচ্ছে কেজিপ্রতি ৩ টাকার বেশি। অথচ সড়কপথে ট্রাকে মাল পরিবহন করতে তাদের খরচ হয় কেজিপ্রতি দুই থেকে আড়াই টাকা।

শফিকুর রহমান নামে আরেক কৃষক বলেন, ট্রেনের সময় সকালে হওয়ায় পণ্য বাজারজাত নিয়েও রয়েছে নানা শঙ্কা। মূলত আমাদের সড়কপথে সবজি ঢাকায় যায়। আমরা সন্ধ্যায় যাত্রা শুরু করে ফজরের আজানের সময় ঢাকায় পৌঁছেই বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু এই ট্রেনের সময় সকালে, তাহলে আমরা বিক্রি করবো কখন?

রাজশাহী মহানগর পাইকারি কাঁচাবাজার সমিতির সভাপতি ফাইজুল ইসলাম বলেন, ট্রেনটি আমাদের জন্য ভালো হবে। আমরা এটি ব্যবহার করতে পারলে বেশ সুবিধাও হবে। তবে ট্রেনটি যে চালু হবে সেটি আমরা জানি না। আমাদের কেউ জানায়নি কীভাবে বা কখন চালু হবে। জানলে হয়তো কিছু মাল পাঠাতে পারতাম।

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনটি চালুর সময় সাংবাদিকদের পশ্চিম রেলওয়ের সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা একেএম রুহুল আলম বলেন, বাংলাদেশে কৃষিপণ্য স্পেশাল টেনটি গত ২২ তারিখ খুলনা ও এরপর পঞ্চগড় থেকে, সর্বশেষ আজ রাজশাহী থেকে চালু হয়েছে। এগুলো কৃষিপণ্য পরিবহন করবে। এখন প্রথম কেবল চালু হয়েছে। এটিতে সময় লাগবে। সমানে অবশ্যই আমরা পরিবহন করবো।

সবজি না পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সবজায়গাতেই প্রচার প্রচারণা করেছি। গত পরশুদিনও মুলাডলিতে বাজারে কথা বলেছি। তারা আশ্বস্ত করেছেন। সবজি কেবল বাজারে উঠছে। প্রতিদিনই ৫০ থেকে ৬০ ট্রাক ঢাকায় যায়। তবে প্রথম দিনে রাজশাহী পর্যন্ত কোনো সবজি পায়নি। ১৫০ কেজি ক্যারেট রাজশাহী থেকে ঢাকা যাচ্ছে। যাতে ৩৬০ টাকায় আদায় হয়েছে। আমরা আশা করছি সামনে এটি ভালো সাড়া ফেলবে।

পশ্চিম রেলওয়ের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা সুজিত কুমার বিশ্বাস বলেন, আমরা কয়েকদিন ধরে বিভন্ন তৃণমূল প্রচার প্রচারণা চালিয়েছি। কৃষি বিপণন ও কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমেও প্রচার করেছি। মূলত কৃষকদের সঙ্গে ঢাকার ব্যবসায়ীদের সমন্বয় নেই। তারা কথা না বলে যদি মালামাল নিয়ে যায় তাহলে তারা ঝামেলায় পড়বে। পাশাপাশি কয়েকদিন ধরে আবহাওয়া ভালো না, তাই হয়তো কৃষক ফসল সংগ্রহ করতে পারেনি। কৃষিকদের সঙ্গে যদি ঢাকায় সমন্বয় করা যায়, এই সিস্টেম চালু থাকলে আমরা সাড়া ফেলবো।

এফএ/এএসএম