দেশজুড়ে

৩০ লাখ টাকা নিয়ে উধাও ছাত্রী হোস্টেলের পরিচালক

ফরিদপুর শহরের একটি ছাত্রী হোস্টেলের বোর্ডারসহ বিভিন্নজনের কাছ থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে পালিয়ে গেছেন হোস্টেলের পরিচালিকা। শহরের ঝিলটুলী মহল্লার ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন হাসপাতালের সামনে অবস্থিত আফসানা ছাত্রী হোস্টেলে এ ঘটনা ঘটে।

Advertisement

ওই মেসের পরিচালিকা আফসানা মীম ছাত্রী ও বিভিন্ন জনের কাছ থেকে নেওয়া প্রায় ৩০ লাখ টাকা নিয়ে চম্পট দেন। এ ঘটনায় ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন ভুক্তভোগীরা।

জানা যায়, প্রায় চার বছর আগে শহরের ঝিলটুলীর সুফিয়া বেগমের মালিকানাধীন ১১ তলাবিশিষ্ট রহমত টাওয়ারের ছয়টি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে ছাত্রী হোস্টেল চালু করেন মধুখালীর মামুন মোল্লার মেয়ে আফসানা মীম। ছয়টি ফ্লাটের বিভিন্ন কক্ষে প্রায় ১২০ ছাত্রী বোর্ডার রয়েছেন। একই বিল্ডিংয়ের আরেকটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে স্বামী ইমামুজ্জামান মিয়া ওরফে সাব্বিরকে নিয়ে সপরিবারে থাকতেন মীম।

হোস্টেলে থাকা ছাত্রীরা জানান, ২৩ অক্টোবর ভোরে হঠাৎ একটি পিকআপ ও দুটি ভ্যানে মালামাল নিয়ে উধাও হয়ে যান মীম। তার আগে মঙ্গলবার রাতে ওই হোস্টেলের সব ছাত্রীদের থেকে এক হাজার, আবার কারো থেকে দুই হাজার টাকা করে নিয়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকা সংগ্রহ করেন। তারপর ভোরের দিকে তিনি লাপাত্তা হয়ে যান।

Advertisement

একাধিক ছাত্রী বলেন, অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকা দেনা হয়ে পড়েন মীম। তিনি বিভিন্ন সময় আমাদের থেকেও টাকা নিয়েছেন।

তারা বলেন, এ হোস্টেলের অনেক ছাত্রী চলে গেছেন। অনেকে এক মাস সময় চেয়েছেন। এখন বুধবার থেকে আমরা খেয়ে না খেয়ে আছি। অনেকের পরীক্ষা চলছে। সবাই বিপদে আছে। এমনকি হোস্টেলের রান্নার পরিচারিকার থেকেও ২৫ হাজার টাকা ধার নিয়েছেন মীম।

ছাত্রী হোস্টেলের বিল্ডিং মালিকের ছেলে মো. রফিক বলেন, বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) তার বাড়ির ভাড়া দেওয়ার কথা ছিল। তার আগে বুধবার ভোরে কাউকে কিছু না বলে মালামাল নিয়ে উধাও হন মীম। দুপুরে একে একে পাওনাদারদের ফোনে জানতে পারি এসব।

তিনি জানান, ছয়টি ফ্লাটের প্রতিটির ভাড়া ২০ হাজার টাকা করে। দুই মাসের ভাড়া বকেয়া। বিদ্যুৎ বিলও বকেয়া রেখেছেন প্রায় আড়াই লাখ টাকা। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেবো।

Advertisement

রফিক বলেন, এ অবস্থায় ছাত্রীদের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তারা এখানে নিরাপদেই আছেন। তাদের সময় দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, অনেকেই মীমের কাছে টাকা পায় বলে জানতে পেরেছি। এসব পাওনাদাররা এখন আমাদের ফোন দিয়ে টাকা পাওনার কথা জানাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত যা খবর এসেছে তাতে মীম প্রায় ৩০ লাখ টাকা দেনা রয়েছেন বিভিন্নজনের কাছে।

এদিকে এ খবর জানতে বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই হোস্টেলে গেলে সেখানে উপস্থিত হন মীমের আপন ফুপু শাহানা বেগম। তিনি মধুখালী থেকে ভাতিজির সঙ্গে দেখা করতে এসে রুমে তালা দেওয়া দেখেন।

শাহানা বলেন, ১৭ সেপ্টেম্বর আমার মেয়ে আশার কাছ থেকে তিন লাখ টাকা ধার নিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে দেবে বলে জানান মীম। আজ এক মাসের বেশি হলো টাকা দিচ্ছেন না। তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।

তবে হোস্টেল ফেলে মীম পালিয়েছেন একথা জেনে হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন শাহানা।

তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, মেয়ের জামাই জমি কিনতে সিঙ্গাপুর থেকে টাকা পাঠাইছে। কাউকে না জানিয়ে সেই টাকা ধার দিয়েছে মীমকে। একথা জামাই জানলে সংসার থাকবে না।

এ ঘটনায় কোতয়ালী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই হোস্টেলের সামনের বিকাশের দোকানি মো. নিশাদ পাল।

তিনি বলেন, আমার দোকানের বিকাশ নম্বর থেকে মীম টাকা লেনদেন করতেন। ২১ অক্টোবর বিকাশের মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকা নেন এবং ২২ তারিখে নগদ ৩০ হাজার টাকা নেন। বুধবার তার টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বুধবার সকালে তার পালিয়ে যাওয়ার কথা শুনে আমার মাথায় হাত পড়েছে।

পাশের আরেক বিকাশ ব্যবসায়ী কাজী রাজু বলেন, ২২ অক্টোবর সকালে আমার কাছ থেকে নগদ দুই লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে রাতেই ফেরত দেবেন বলে জানিয়েছিলেন মীম। সকালে শুনি তিনি চম্পট দিয়েছেন। আমিও পুলিশের শরণাপন্ন হবো।

হোস্টেলের ছাত্রীরা জানান, প্রতি সিট চার হাজার টাকা করে ভাড়া দিতে হয় এ হোস্টেলে। গত দুই মাস ধরে হোস্টেলে কোনো কিছুরই ঠিক নেই। গ্যাসের দোকানে ৭০ হাজার টাকা বাকি। তারা আর গ্যাস দেয় না। বাসায় কুকারে রান্না করা হয়। আবার ঠিকমতো রান্না করাও হয় না।

মীমের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদউজ্জামান বলেন, ছাত্রী হোস্টেলের পরিচালিকা আফসানা মীমের উধাও হওয়ার ঘটনায় ওই বিল্ডিংয়ের মালিকের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। মীম তাদের দুই মাসের ভাড়া না দিয়ে চলে গেছেন। এ বিষয়ে তদন্ত চলমান।

এদিকে আফসানা মীম আত্মগোপনে থাকায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

এন কে বি নয়ন/জেডএইচ/এএসএম