আন্তর্জাতিক

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা কত?

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে প্রায় ১২ বছর ধরে আন্দোলন করে আসছে চাকরি-প্রত্যাশীরা। বিশ্বের অনেক দেশেই সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর থেকে ৪৭ বছরের বেশি রয়েছে। অথচ বাংলাদেশে বয়স ৩০-য়ের কোঠা পেরুলেই আর সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করা যায় না।

Advertisement

এদিকে চাকরি-প্রত্যাশীদের দাবির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩২ বছর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

বৈঠকে ‘সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল কর্পোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থাসমূহে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের সব ক্যাডারের চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারিত হবে। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের আওতাবহির্ভূত সব সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারিত হবে।

Advertisement

অনেকের মনেই প্রশ্ন আসতে পারে যে, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা কত? চাকরিতে প্রবেশের বয়স নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানদণ্ড পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিশ্বের ১৬২টি দেশে সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর। কোনো কোনো দেশে আবার এটি উন্মুক্ত।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চাকরিতে ঢোকার সর্বনিম্ন বয়সসীমা ৩৫ বছর। তাই বাংলাদেশেও চাকরি-প্রত্যাশীরা এই বয়সসীমা নির্ধারণের দাবি জানিয়ে আসছে। কারণ যোগ্যতা প্রমাণ করতে বয়স কোনো বাধা হতে পারে না বলে মনে করেন চাকরি প্রার্থীরা।

বিভিন্ন বই পুস্তকে দেখা যায়, সরকারি চাকরির বয়স নির্ধারণের বিষয়টি শুরু হয়েছিল ব্রিটিশ ভারত তথা উপনিবেশিক আমল থেকে। বিভিন্ন বিষয় আমলে নিয়ে তখন চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়স ২৩ বছর নির্ধারণ করা হয়েছিল।

পরে পাকিস্তান শাসনামলে এই বয়স সীমা বাড়িয়ে ২৫ বছর করা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর আরো দুই বছর বাড়িয়ে ২৭ বছর করা হয়। এরপর ১৯৯১ সালে এই বয়সসীমা ২৭ থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করা হয় যা এখনো কার্যকর রয়েছে। সে সময় বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৫৭ বছর। বর্তমানে গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে ৭৩ বছর হয়েছে।

Advertisement

এরপর বিভিন্ন সময় বয়স বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন করলেও কোনো সরকারই ভ্রুক্ষেপ করেনি। সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছর থেকে না বাড়ানোর বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ব্যাখ্যাও দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।

ভারতে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমাদক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বিভিন্ন রাজ্যভেদে ও চাকরির ধরন অনুযায়ী আবেদনের বয়সসীমা ৩২ থেকে ৪২ বছর পর্যন্ত নির্ধারিত রয়েছে। সরকারি চাকরির বিভিন্ন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দেশটির ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন। এই কমিশনের ওয়েবসাইটে ইন্ডিয়ান অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসে (আইএএস) আবেদন করার বয়স উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে।

ভারতে প্রশাসনিক সরকারি চাকরিতে আবেদন করতে হলে ন্যূনতম ২১ বছর এবং সর্বোচ্চ ৩২ বছর বয়সের মধ্যে আবেদন করা যাবে। তবে বিভিন্ন ধরনের কোটায় আবেদন করার বয়সের পার্থক্য রয়েছে।

যেমন- শারীরিকভাবে যারা প্রতিবন্ধী তারা সর্বোচ্চ ৪২ বছর বয়স পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন। অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির জনগণ সরকারি চাকরিতে ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া দলিত শ্রেণির জনগণ ৩৭ বছর পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে আবেদন করতে পারেন।

নেপালে বয়সসীমাবাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ নেপালে সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দেশটির পাবলিক সার্ভিস কমিশন। এই কমিশনের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন পদে আবেদনের জন্য বয়সের যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

সরকারি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, সিভিল সার্ভিস ও লেজিসলেটিভ পার্লামেন্ট সার্ভিসে আবেদনের ক্ষেত্রে গেজেটেড ও নন-গেজেটেড পদের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের ন্যূনতম বয়স নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

গেজেটেড ও নন গেজেটেড পদ যেমন- ক্রয়কারী, নায়েব সুব্বাসহ এ ধরনের পদে আবেদন করার ক্ষেত্রে পুরুষের ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১৮ বছর এবং সর্বোচ্চ ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। তবে নারী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা ৪০ বছর পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন।

এছাড়া গেজেটেড পদ যেমন- শাখা কর্মকর্তা, উপসচিব এবং যুগ্ম সচিব বা এ ধরনের পদে আবেদনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম বয়স ২১ বছর এবং সর্বোচ্চ ৩৫ বছর পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। এ ধরনের পদে মহিলা ও প্রতিবন্ধীরা ৪০ বছর পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন।

তবে শূন্য পদের ক্ষেত্রে উপ-সচিব ও যুগ্ম সচিব পদে সর্বোচ্চ ৪৫ বছর পর্যন্ত আবেদন করার বিধান রেখেছে নেপালের পাবলিক সার্ভিস কমিশন।

স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রাথমিক স্তর বিশেষ করে সহকারী স্তরের পদে সর্বনিম্ন ১৮ বছর এবং সর্বোচ্চ ৪৫ বছর পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। অফিসার পদগুলোতে সর্বনিম্ন ২১ বছর ও সর্বোচ্চ ৪৫ বছরের ব্যক্তিরাও আবেদন করতে পারবেন।

পাবলিক সার্ভিস কমিশনের এই ওয়েবসাইটে আরেও উল্লেখ করা হয়েছে, সিভিল সার্ভিস, বিচার বিভাগ, সংসদ এবং স্বাস্থ্য সেবায় স্থায়ী কর্মচারীদের জন্য কোনো বয়সসীমা নির্ধারিত নেই।

শ্রীলঙ্কায় বয়সসীমাশ্রীলঙ্কার সরকারি ওয়েবসাইট ‘প্রেসিডেন্সিয়াল সেক্রেটারিয়েট’ এ সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা নিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই দেশটি সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি করেছে। স্নাতক পাস করা চাকরি-প্রার্থীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে এই সিদ্ধান্ত নেন।

সরকারি এই ওয়েবসাইটে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্নাতক পাশ করা বেকার ব্যক্তিরা সরকারের যে কোনো কর্মসূচির অধীনে ৪৫ বছর পর্যন্ত আবেদন করতে পারবে। আগে এই বয়সসীমা ছিল ৩৫ বছর। তবে সরকারি চাকরির সব ক্যাটাগরির জন্য এই বয়সসীমা প্রযোজ্য নয় বলে জানা যায়।

পাকিস্তানে চাকরির বয়সসীমাদক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে শুধু বাংলাদেশ ও পাকিস্তানেই সরকারি চাকরিতে আবেদনের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছর।পাকিস্তানে সরকারি চাকরির বিজ্ঞপ্তি দিয়ে থাকে দেশটির ফেডারেল পাবলিক সার্ভিস কমিশন। এই কমিশনের ওয়েবসাইটে সরকারি চাকরিতে প্রবেশে বয়সের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ সীমা উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিতে সর্বনিম্ন ২১ বছর ও সর্বোচ্চ ৩০ বছর পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। তবে বিশেষ বিশেষ কোটার ক্ষেত্রে ৩২ বছর বয়স পর্যন্ত চাকরি-প্রত্যাশীরা আবেদন করতে পারবেন। তবে সম্প্রতি দেশটির বেলুচিস্তান রাজ্য সরকার এই বয়সসীমা ৪৩ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে।

আরও পড়ুন: সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩২ বছর চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর বিবেচনার অনুরোধ চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫, কোটায় ৩৭ বছর করার সুপারিশ

বিশ্বের অন্যান্য দেশের ওয়েবসাইট খুঁজে দেখা যায়, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানে ৩৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে সরকারি চাকরিতে আবেদন করার নিয়ম রয়েছে। আফগানিস্তানে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর এবং মালদ্বীপে সর্বোচ্চ ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত সরকারি চাকরির আবেদন করা যায়।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

টিটিএন