দেশজুড়ে

উত্তাল ঢেউয়ে ফেরির ধাক্কা, ভাঙলো ইনানীর নৌবাহিনীর জেটি

কক্সবাজার সৈকতে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে সৃষ্ট প্রবল ঢেউয়ে ইনানীতে নির্মিত নৌবাহিনীর জেটির একটি অংশ ভেঙে গেছে। জেটিটির সংস্কার কাজ চালাতে ব্যবহৃত দুটি ফেরির ধাক্কায় জেটির এ অংশটি ভেঙে গেছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। সকাল থেকে উত্তাল সাগরের ঢেউয়ে জেটির এ অংশ ছাড়াও দীর্ঘ সৈকতের বিভিন্ন অংশের অবকাঠামোতেও ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সমুদ্র তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সকালে ভেঙে যাওয়া জেটি দেখতে অনেকে ওই এলাকায় জড়ো হন। তাদের মতে, সাগর উত্তাল হলে উপকূলের নানান অবকাঠামোতে আঘাত হানে।

ইনানীর বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম জানান, মিয়ানমারের আরাকানে চলমান সংঘাতের কারণে টেকনাফের দমদমিয়া ঘাট থেকে জাহাজ চলাচলে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সেক্ষেত্রে নৌবাহিনীর এ জেটি দিয়ে জাহাজ চলাচল শুরু হওয়ার তোড়জোড় চলছে। সে কারণে জেটিটির সংস্কার কাজ চলছিল বলে দেখেছেন স্থানীয়রা। দুটি ফেরি এনে তাতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম রেখে সংস্কার কাজ চলছিল।

কিন্তু ঘুর্ণিঝড় ‘দানা’র প্রভাবে সাগর হঠাৎ ফুঁসে ওঠায় ফেরিগুলো সরানো যায়নি। জেটির খুঁটিতেই তা বেঁধে রাখা ছিল। বৃহস্পতিবার ভোরে উত্তাল ঢেউয়ের ধাক্কায় ফেরি জেটির খুঁটিতে আছড়ে পড়ে। এতে জেটির পানির অংশের একাংশ ভেঙে তলিয়ে যায়।

Advertisement

২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর ইনানীতে আন্তর্জাতিক নৌ মহড়া উপলক্ষে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্মিত প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ জেটি। মহড়া উদ্বোধন শেষে জেটির আনুষ্ঠানিকতাও উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুরু থেকেই সমুদ্র বুকে এ জেটি নির্মাণ বন্ধে মানববন্ধনসহ নানান কর্মসূচি পালন করে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। তারা দাবি করেন, উত্তাল সাগরে জেটি হলে পানি বাঁধাগ্রস্ত হয়ে আশপাশে ভাঙন বাড়াবে। বৃহস্পতিবারে ঢেউয়ের তোড়ে ফেরির ধাক্কায় জেটি ভাঙাকে আন্দোলনকারীদের আশঙ্কার বাস্তবতা বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে, জেটি ভাঙনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানায়নি।

এদিকে, বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করা ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিচ্ছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে আবহাওয়াবিদ ড. বজলুর রশিদ সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুপুর ১২টায় ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’ বাংলাদেশের কক্সবাজার বন্দর থেকে ৫৩৫ আর পায়রা ও মোংলা বন্দর থেকে ৪৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতি প্রবল রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে মোংলা, পায়রা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

Advertisement

ঘূর্ণিঝড় দানা আজ মধ্যরাতে পুরী ও সাগর দ্বীপের মাঝ বরাবর দিয়ে ভারতের উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতিভারী (২৮৯ মিলিমিটার) বর্ষণ হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। কক্সবাজারসহ উপকূলীয় জেলার সাগর তীরবর্তী এলাকা ও চরগুলোতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি ২-৩ ফুট বাড়তি হয়ে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা, ট্রলারগুলোকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে ‘ঘূর্ণিঝড়’ বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়। গতিবেগ যদি ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে প্রবল ‘ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়। আর বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হলে সেটিকে বলা হয় ‘অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়’। গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে তা হয় ‘সুপার সাইক্লোন’।

সায়ীদ আলমগীর/এসআর/এমএস