বাবা প্রথমবার হজ্বে গিয়ে দুটো নাম ঠিক করেছিলেন। একটা ছেলে সন্তানের নাম, আরেকটা মেয়ে সন্তানের। তখনও তিনি অবিবাহিত। বিয়ের পর হল মেয়ে। নাম রাখা হলো স্মৃতি, সেই হজ্বের সময় ঠিক করে রাখা নাম। একটা বড় নামও দরকার। মেয়ের প্রিয় নানাভাইয়ের নাম শামসুল হক গাজী। তার নামেই নাতনির নাম রাখা হল শামসুন্নাহার। কিন্তু সারা পৃথিবী আজ তাকে চেনে পরীমনি নামে।
Advertisement
পরীমনি নামের সুখী মানুষটির ৩২তম জন্মদিন ২৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন তার নাম – শামসুন্নাহার স্মৃতি। তবে জন্মের দুতিন দিন পর তার নানি বললেন, বাবা রাখলো, নানা রাখল, তিনিও একটা নাম রাখবেন। নাতনিকে তিনি পরী বলে ডাকবেন। রইল বাকি বাড়ির বাদবাকি লোকেরা। তারা আর নামধাম রাখেননি, তাকে মনি বলেই ডাকতেন। এভাবেই একদিন শামসুন্নাহার হয়ে গেলেন পরীমনি।
পরীমনির দুঃখে ভরা জীবন। কিন্তু সেই জীবনটাকেই তিনি উদযাপন করছেন সবচেয়ে সুখী মানুষের মতো। মন যেমন চায়, সেভাবেই তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন সামনের দিকে। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার কাছে যেটা সঠিক মনে হয়, আমি সেটাই করি। অনেকে হয়তো ভাবেন, আমি কোনো কিছুর পরোয়া করি না। ঠিক আছে, তার মানে এই নয় যে, আমি ভুল কিছু করছি বা করবো।’
আরও পড়ুন: অনুশোচনা, পুটুকে নিয়ে ঢাকায় ৩৪ ডিগ্রি, উষ্ণতা আরও বাড়ালেন পরীমনিশৈশবে মাকে হারিয়েছিলেন পরীমনি। আগুনে পুড়েছিলেন তিনি। বয়স তখন আড়াই কি তিন বছর। মাকে যখন হাসপাতালে নেওয়া হয়, তখন তাকে দেখতে গিয়েছিল ছোট্ট পরীমনি। পরে জেনেছেন, সেটি ছিল খুলনার আড়াইশ বেড! বরিশালের মানুষেরা উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনাকেই বেছে নেন। স্মৃতিতে ঝাপসা একটা মশারির ভেতরে মাকে দেখতে পান পরীমনি। সুস্থ হয়ে বাড়িতেও ফিরেছিলেন তিনি। তবে আগুনে পোড়া চামড়া শুকিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। একপর্যায়ে তাকে আর বাঁচানো যায়নি। স্ত্রীকে হারানোর পর দেশ ছাড়েন পরীমনির বাবা মনিরুল ইসলাম। প্রায় এক দশক আগে তিনিও মারা যান।
Advertisement
কেমন ছিল বাবা-মা হারা পরীমনির শৈশব? এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘বাবা-মাকে হারালে কেমন লাগে সেটা কখনো অনুভব করিনি। আমার যে মা-বাবা বেঁচে নেই, সেটা পরিবারের অন্য সদস্যরা আমাকে কখনো উপলদ্ধি করতে দেননি। নানি ছিলেন আমার মায়ের মতো। শৈশবে আমার হাত ধরে নানি ঘুমাতেন। নানির কাছেই অনেক যত্নে বড় হয়েছি আমি।’
অনুরাগী ও অনুসারীদের প্রায় সবারই জানা, নানা শামসুল হক গাজী ছিলেন পরীমনির সেই যত্ন ও শেষ আশ্রয়ের জায়গা। নানা ছিলেন তার শক্তি, সাহস, চলার পথের অনুপ্রেরণা। পিরোজপুর থেকে ঢাকায় এসে একসময় বিনোদন অঙ্গনে কাজ শুরু করেন পরীমনি। এ সময়ে তার একমাত্র অভিভাবক ছিলেন নানা। গত বছর নানার প্রয়াণের পর সেই জায়গাটি নিয়েছে ছেলে রাজ্য। সন্তানকে শেষ আশ্রয় করে একটা হাস্যজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন পরীমনি।
আরও পড়ুন: বরিশালের গ্যাংস্টারের গল্প, নায়িকা পিরোজপুরের পরীমনি ছেলের জন্মদিনে কার অভাবে পুড়ছেন পরীমনিবাবা ও নানার সঙ্গে পরীমনি
২০১৫ সালে ‘ভালোবাসা সীমাহীন’ সিনেমার মাধ্যমে ঢালিউডে অভিষেক হয় পরীমনির। এরপর ‘রক্ত’, ‘স্ফুলিঙ্গ’, ‘আমার প্রেম আমার প্রিয়া’, ‘স্বপ্নজাল’, ‘বিশ্বসুন্দরী’, ‘গুণীন’, ‘প্রীতিলতা’, ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’, ‘মা’সহ বেশকিছু সিনেমায় অভিনয় করেছেন পরীমনি। শিগগিরই ভারতে অভিষেক হতে যাচ্ছে তার। ‘ফেলুবক্সী’ নামে এক ছবিতে দেখা যাবে তাকে। এ ছাড়া পরীমনি অভিনীত প্রথম ওয়েব সিরিজ ‘রঙ্গিলা কিতাব’ অবমুক্ত হচ্ছে আগামী মাসে।
Advertisement
এমএমএফ/আরএমডি