দেশজুড়ে

পোস্ট অফিসের পৌনে দুই কোটি আত্মসাতে ৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

যশোরে সাবেক পোস্ট মাস্টার মো. আব্দুল বাকীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সরকারি এক কোটি ৭৮ লাখ ৫ হাজার টাকা আত্মসাতের মামলায় চার্জশিট দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক যশোরের সাবেক সহকারী পরিচালক উপ-পরিচালক মোহা. মোশাররফ হোসেন।

Advertisement

আসামিরা হলেন, যশোরের প্রধান ডাকঘরের সাবেক পোস্ট মাস্টার, সাময়িক বরখাস্তকৃত খুলনা পোস্টাল ট্রেনিং সেন্টারের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. আব্দুল বাকী, খুলনার ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেলের কার্যালয়ে সংযুক্ত যশোর প্রধান ডাকঘরের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মো. আক্কাছ শিকদার এবং যশোর নৈশ ডাকঘরের সাব পোস্ট মাস্টার শেখ করিমুল্লাহ। ২০২৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি আলোচিত এ পৌনে দুই কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা করে দুদক।

অভিযুক্ত আব্দুল বাকি যশোর শহরের পুরাতন কসবা, আক্কাছ শিকদার গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলার খারহাট উত্তরপাড়া এবং শেখ করিমুল্লাহ যশোর সদরের নতুন উপশহর এ-ব্লকের বাসিন্দা। তাদের বিরুদ্ধে দুদক দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে অপরাধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

দুদকের চার্জশিটে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহা. মোশাররফ হোসেন উল্লেখ করেন, মো. আব্দুল বাকী যশোর প্রধান ডাকঘরে পোস্ট মাস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন ২০২২ সালের ২ জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সঞ্চয় ব্যাংকের ১৭ জন গ্রাহকের পাশবই ব্যবহার করে সরকারি এক কোটি ৭৮ লাখ ৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ টাকা তিনি নিজের নামে ব্র্যাক ব্যাংক যশোরে আটটি এফডিআর, স্ত্রী মিসেস ফারহানা আফরোজের নামে যশোরের প্রধান পোস্ট অফিসে এফডি করেছেন। দুদক তাদের দুজনের নামে ৪২ লাখ ৬৩ হাজার ৬১৫ টাকার জমার প্রমাণ পেয়ে আদালতের মাধ্যমে অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছে।

Advertisement

চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, সাধারণ গ্রাহক ললিতা বিশ্বাস তার জমা টাকা থেকে ২৩০ টাকা ওঠানোর জন্যে আক্কাছ শিকদারের কাছে গেলে তিনি পাশ বই ও উত্তোলন ফরমের প্রথম পাতায় স্বাক্ষর নিয়ে কাউন্টারে জমা না দিয়ে সরাসরি আব্দুল বাকীর কাছে জমা দেন। একসপ্তাহ পর আমানতকারী ললিতা বিশ্বাস সেখানে গেলে তাকে সাড়ে তিন হাজার টাকা দেওয়া হয় এবং আবারো ফরমের পিছনে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। পরে সে ফরম ও পাশ বই ব্যবহার করে আব্দুল বাকী ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা উঠিয়ে নেন।

একইভাবে শিমু আক্তার নামে আরও এক গ্রাহক টাকা তুলতে গেলে আসামি করিমুল্লাহ তিনদিনের সময় নেন। পরে পাশ বই হারিয়ে গেছে জানিয়ে তালবাহানা করেন। নানাভাবে হয়রানি করে এক পর্যায়ে আক্কাছ শিকদাদেরর কাছে পাঠান। সেখানেও তিনি নানাভাবে হয়রানির শিকার হন। ইতোমধ্যে ওই বই ও ফরম ব্যবহার করে পোস্টমাস্টার আব্দুল বাকী সেই হিসাব থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন।

এভাবে তিনজন যোগসাজশে ১৭জন গ্রাহকের একাউন্ট থেকে এক কোটি ৭৮ লাখ ৫ হাজার সরকারি টাকার আত্মসাতের প্রমাণ পায় দুদক। দুদক তদন্ত শেষে প্রতিটি ক্ষেত্রের অপরাধের প্রমাণ পাওয়ার পর মঙ্গলবার বিকেলে চার্জশিট জমা দেয়।

এ বিষয়ে দুদক যশোরের উপ-পরিচালক মো. আল-আমিন জানান, তদন্ত কর্মকর্তা চার্জশিট জমা দিয়েছেন। পরবর্তী কার্যক্রম আদালতের নির্দেশই চলবে।

Advertisement

মিলন রহমান/আরএইচ/এমএস