দেশজুড়ে

কক্সবাজারের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন, সাগর স্বাভাবিক

এরইমধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করা গভীর নিম্নচাপটি। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) রাতে গভীর নিম্নচাপে রূপ নেওয়ার ১২ ঘণ্টা পর এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলো। এর নামকরণ করা হয়েছে ‘দানা’। কাতারের দেওয়া ‘দানা’ নামের অর্থ বিগ পার্ল বা বড় মুক্তা।

Advertisement

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বুধবার (২৩ অক্টোবর) সকাল থেকে মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আছে কক্সবাজারের আকাশ। উপকূলে শুরু হয়েছে হালকা বৃষ্টি। তবে এখনো সাগরের ঢেউয়ের রূপ স্বাভাবিকই রয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সৈকতে দায়িত্বরত সী সেইফ লাইফ গার্ডের সিনিয়র কর্মী ওসমান গণি।

তিনি বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে ভোর থেকেই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলেও বরাবরের মতো এবারো সকাল থেকে সৈকতের পরিস্থিতি দেখতে দর্শনার্থীর ভিড় লেগে আছে। তবে যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে সাগরে নামাদের সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। সমুদ্র হঠাৎ উত্তাল হতে পারে, বিধায় সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন লাইফ গার্ড কর্মীরা।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, নিম্নচাপের প্রভাবে সোম ও মঙ্গলবার দিনের বিভিন্ন সময় বৃষ্টি হয়েছে। বুধবারও ভোর থেকে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। আজকেও বৃষ্টিপাত হবে বলে আশংকা করছি।

Advertisement

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৪ নম্বর বিশেষ বুলেটিনের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় দানা মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৬৯৫ কিলোমিটার পশ্চিম দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার থেকে ৬২০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা থেকে ৬৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে এবং পায়রা থেকে ৬৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে পশ্চিম-উত্তরপশ্চিমে অগ্রসর হচ্ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন এলাকা উত্তাল থাকায় মাছ ধরার সকল নৌকা ও ট্রলারসমূহকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সাদেকুল আলম গণমাধ্যমকে জানান, ঘূর্ণিঝড়টি যেহেতু ধীরগতিতে অগ্রসর হচ্ছে তাই এটি বৃহস্পতিবার বিকেলের পর বা রাতে গিয়ে হয়তো উপকূলে আঘাত হানতে পারে।

আবহাওয়াবিদদের মতে, ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হলো উপরিভাগের বাতাসের গতিবেগ। ঘূর্ণিঝড়ের দিক মূলত নিয়ন্ত্রণ করে সেই বাতাস। এখন পর্যন্ত উপরের বাতাস বাংলাদেশ উপকূলের অনুকূলে, অর্থাৎ আমাদের দেশে আসার কোনো সুযোগ নেই। ঝড়টি উড়িষ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূল দিয়ে অতিক্রম করতে পারে। তবে প্রায় ১০০ কিলোমিটার ব্যাসের এই ঝড়টির প্রভাবে দেশের উপকূলীয় এলাকায় বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার এই দুই দিন বৃষ্টি হতে পারে।

অন্যদিকে ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটের সতর্ক বার্তায় জানায়, ঘূর্ণিঝড়টি বৃহস্পতিবার সকালে ভারতের উড়িশ্যা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের মধ্যবর্তী এলাকা দিয়ে অতিক্রম করতে পারে। এ সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ৮৮ থেকে ১১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।

Advertisement

আবহাওয়াবিদরা জানান, ঝড়টি যদি ডান দিকে বাঁক নিয়ে নেয়, তাহলে এটি পুরোপুরি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকা (খুলনা, সাতক্ষীরা, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা প্রভৃতি এলাকা) দিয়ে অতিক্রম করতে পারে। তবে ডান দিকে টার্ন নেওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। সম্প্রতি বিদায় নিয়েছে মৌসুমী বায়ু। এর প্রভাবে স্থলভাগ থেকে বাতাসের গতিবেগ সাগরের দিকে ধাক্কা দেয়ার একটি শক্তি কাজ করছে। এই শক্তির কারণে উত্তর গোলার্ধে (বাংলাদেশ এই গোলার্ধে) বাতাস ঘড়ির কাটার দিকে ঘুরে বলে ঝড়টি দক্ষিণে ধাক্কা খাবে এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দিকে আঘাত করতে পারে।

বঙ্গোপসাগরে প্রাক-বর্ষা মৌসুম (এপ্রিল-মে) ও প্রি বর্ষা মৌসুম (সেপ্টেম্বর-নভেম্বর) এ সময়ে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। ১৮৯১ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত অক্টোবর মাসে বঙ্গোপসাগরে ৯৪টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে। এসবের মধ্যে ১৯টি ঝড় বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হেনেছে। বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত করা ঝড়গুলোর মধ্যে বেশিরভাগ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের ওপর দিয়ে গেছে।

সায়ীদ আলমগীর/এফএ/জেআইএম