ফরিদপুরের সালথা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক খায়রুল বাসার আজাদ। আওয়ামী লীগের ১৬-১৭ বছরের শাসনামলে এলাকায় বিএনপির দলীয় কোনো কার্যক্রমে দেখা না গেলেও হঠাৎ করে গত ৫ আগস্টের পর থেকে এলাকায় বিএনপির নাম ভাঙিয়ে রামরাজত্ব কায়েম করেছেন। দলে ভিড়িয়েছেন আওয়ামী লীগের একাধিক পদধারী নেতাসহ অসংখ্য কর্মীদের।
Advertisement
যদিও কেন্দ্রীয় বিএনপি ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আওয়ামী লীগ কিংবা বিরোধী দলের কাউকে দলে ভেড়ালে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এসব নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই দলে ভিড়িয়েছেন শত শত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের।
স্থানীয় বিএনপি সূত্র জানায়, উপজেলার গট্টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বজলু মাতুব্বর, সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও স্থানীয় ইউপি মেম্বার নুরু মাতুব্বর, সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফজলুল মতিন বাদশা মিয়ার ভাতিজা ও আওয়ামী লীগ কর্মী কামরুল ইসলাম মজনু, সালথা উপজেলা শ্রমিকলীগের সহ-সভাপতি মুনসুর মাতুব্বর, সালথা উপজেলা শ্রমিকলীগের আরেক সহ-সভাপতি রফিক মাতুব্বরসহ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের পদধারী অসংখ্য নেতাকর্মীদের দলে ভিড়িয়েছেন। এ ঘটনায় এলাকার বিএনপির প্রকৃত নেতাকর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। দলে দেখা দিয়েছে অসন্তুষ্টি।
বিএনপি নেতা আজাদের বিরুদ্ধে রয়েছে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (পদ স্থগিত) শামা ওবায়েদ রিংকুর নাম ভাঙানোরও। শামা ওবায়েদকে নিজ এলাকার বিএনপির প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে ও ভুল বুঝিয়ে তার (শামা ওবায়েদ) ক্ষমতাবলে একটি হত্যা মামলাকে পুঁজি করা হচ্ছে। এতে তার ভায়রা জাহিদ মাতুব্বরসহ বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।
Advertisement
স্থানীয় বালিয়াগট্টি বাজারের মুসা তালুকদার, নান্নু মাতুব্বর, শহীদ মাতুব্বর, ইমারত শরীফসহ ৫-৭টা দোকানের প্রায় কোটি টাকার সম্পদ লুটপাট করা হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এছাড়াও পাটপাশা গ্রামের মুশা মাতুব্বর, মুশা মাতুব্বরের ছেলে রবিউলের, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক মাতুব্বরের ছেলে ইকরামের ও ওমর মাতুব্বরের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। সঙ্গে ছোট বালিয়া গ্রামের আনোয়ার শেখের পাঁচটি গরু লুট, বালিয়া বাজারের পাশের নুরু নামের এক ব্যক্তির বাড়িসহ অসংখ্য বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে আজাদ ও তার ভায়রা জাহিদ এবং নুরু মাতুব্বর (মেম্বার), মালেক, খালেকসহ আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে আসা নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
এদিকে চাঁদাবাজির ঘটনা ঢাকতে শুক্রবার একটি সংবাদ সম্মেলন করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে প্রকৃত নির্যাতিত বিএনপি নেতাকর্মীরা।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে সালথা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার আজাদ বলেন, এটা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। আমি এসবের সঙ্গে জড়িত নই।
সালথা উপজেলা বিএনপির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অনেক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বিএনপির সঙ্গে যোগ দিচ্ছে বলে শুনেছেন তিনি। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে দেখা হবে।
Advertisement
ফরিদপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ.কে কিবরিয়া স্বপন বলেন, কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত হচ্ছে বিরোধী কাউকে দলে প্রবেশ করানো যাবে না। কেউ যদি এভাবে বিএনপির পদকে ব্যবহার করে বিরোধী কাউকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়, আর সেটা যদি প্রমাণ হয় তাহলে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেস আলী ইছা বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে। এরকম কোনো ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেলে দলের শৃঙ্খলাভঙ্গের ও পার্টির সিদ্ধান্ত অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
এফএ/এএসএম